৯.১ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন!
প্রতীকী ছবি
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : মানুষ কি পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে এবং পরিবেশে ফেলেছে তা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৫০ সালে যখন প্রথম প্লাস্টিকের উৎপাদন শুরু হয়, তখন থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৯.১ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন করা হয়েছে। তুলনা করলে প্লাস্টিক উৎপাদনের এই পরিমাণ ৯০,০০০টি আইফোন টাওয়ারের ওজনের সমান বা ১.২ বিলিয়ন আফ্রিকান হাতির ওজনের সমান অথবা ম্যানহাটানের ২ মাইলেরও বেশি এলাকা বোঝাই করার জন্য যথেষ্ট। এর মধ্যে ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহৃত হয়েছে এবং ১২ শতাংশ পোড়ানো হয়েছে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, বাকি ৫.৬ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে পৃথিবীকে দূষিত করে সমুদ্র বা ভূমিতে ফেলা হয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ফলাফল শত শত বছর কিংবা হাজার হাজার বছর ধরে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে থাকবে। বর্তমানে যেভাবে চলছে সেভাবে চললে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ দাড়াবে ১২ বিলিয়ন টন। তুলনা করলে পরিমাণটা অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার গুণ বেশি ভারী।
প্রতিবছর ৪-১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়ছে। রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়, বিশ্বে উৎপাদিত সব প্লাস্টিক বায়ো গ্রেডের নয়, এছাড়াও প্লাস্টিক ভেঙে মাইক্রো প্লাস্টিক হিসেবেও পরিবেশ দূষণ করে।
গবেষণায় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য করাটা সমাধান নয়, কারণ এটি নিছক বিলম্ব। বরং প্লাস্টিক এড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক মেশানো ‘সেকেন্ডারি প্লাস্টিক’ তৈরি করে, যার প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক মূল্য সীমিত।
গবেষকরা বলেন, শুধুমাত্র উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানুষও প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে মধ্যম এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে পৌর বর্জ্য হিসেবে প্লাস্টিক ১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ব্রিন স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের গবেষক রোল্যান্ড গেই এবং তার সহকর্মীরা প্রথমবারের মতো প্লাস্টিকের উৎপাদনের এই পরিমাণ অনুমান করেছেন। তিনি বলেন, উৎপাদিত প্লাস্টিকের বেশিরভাগই ছিল একক ব্যবহারের প্যাকেজিংয়ের জন্য।
তিনি আরো বলেন, বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক একমাত্র উপাদান যা স্টিল এবং সিমেন্টের চেয়েও মানুষ বেশি ব্যবহার করে। কিন্তু কন্সট্রাকশনে ব্যবহৃত অর্ধেকের বেশি স্টিল কয়েক দশক পর্যন্ত টেকসই হয় অথচ প্লাস্টিক এর বিপরীত।
গবেষণার সহ-লেখক ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার বিজ্ঞানী জিন্না জামবেক বলেন, বেশিরভাগ প্লাস্টিক বায়ো গ্রেডের নয়, মানুষের সৃষ্টি ভয়ংকর এই প্লাস্টিক বর্জ্য শত শত বা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের সঙ্গে থেকে যাবে।
বিশ্বব্যাপী উৎপাদন, ব্যবহার এবং পরিসংখ্যানের তথ্যগুলো একত্র করে গবেষকরা মোট প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ নির্ণয় করেছেন। বর্তমানে ইউরোপীয় দেশগুলো ৩০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য করছে, চীন ২০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্লাস্টিকের মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করছে। তবে ২০১২ সালের পর থেকে এই পরিমাণ আর বাড়েনি। রিপোর্টে আরো বলা হয়, ফাইবার উপাদানের বেশিরভাগ প্লাস্টিক যেমন সিন্থেটিক কাপড় পুনর্ব্যবহৃত করা হয় না। পোড়ানো বা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুলাই ২০১৭/ফিরোজ/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন