ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এসব কারণেও শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে!

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৫ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এসব কারণেও শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে!

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : শুধুমাত্র আপনার বয়সকে দোষ দেবেন না। শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এমন কিছু আশ্চর্য কারণে যা জেনে আপনি অবাক হবেন।

* রক্তজনিত কারণ
টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল মাত্রা দেহের অন্যান্য কোষের সঙ্গে শ্রবণশক্তিরও প্রচুর ক্ষতি করে থাকে। নিউ ইয়র্ক হিয়ারিং ডক্টরস এর চিফ অডিওলজি অফিসার ক্রেইগ এ. ক্যাসপার এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যা শুনি তা কানের মধ্যে রক্তের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৈশিক জালিকার কম্পনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বার্তা পাঠানোর ফলে সম্ভব হয়ে থাকে। এ কাজে কৈশিক জালিকাগুলোতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকা জরুরি। কৈশিক জালিকাগুলো ক্ষুদ্র কৈশিক নালীর মাধ্যমে পুষ্টি পেয়ে থাকে। যদি রক্তপ্রবাহে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেই কৈশিক জালিকাগুলো আর বৃদ্ধি পেতে পারে না, যা শ্রবণ সমস্যা সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস শ্রবণশক্তি হ্রাসের দিক থেকে প্রধান ও অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।’

* হেয়ার ড্রায়ার
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চুল শুকানোর জন্য আপনার হেয়ার ড্রায়ার ৮৫ বা তারও বেশি ডেসিবল শব্দদূষণ তৈরি করে, যা আপনার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য যথেষ্ট। বিভিন্ন মেয়াদে ৮ ঘণ্টার বেশি হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলে শ্রবণশক্তি প্রচন্ড পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিউ ইয়র্কের ল্যাংগন মেডিকেল সেন্টারের সুপারভাইজরি অডিওলজিস্ট কিট ফ্র্যাংক বলেন, ‘যত বেশি আমরা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে থাকবো, তত বেশি আমাদের শ্রবণশক্তি কমতে থাকবে। এটি হয়তো সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করবে না কিন্তু একটি দীর্ঘ সময় পরে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব বোঝা যাবে। তাই সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা উচিত।’

* উচ্চ শব্দের গানবাজনা
উচ্চ শব্দের কনসার্ট বা দীর্ঘসময় হেডফোন অথবা এয়ারফোনে গান শোনা শ্রবণশক্তির মারাত্মক ক্ষতি করে। ডা. ফ্র্যাংকের মতে, ‘শব্দধারণকারী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো কানের অত্যন্ত গভীরে অবস্থান করে যা খুবই অনুভূতিপ্রবণ হয়। আমরা যদি আশেপাশের শব্দ বা বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য ভলিউম বাড়িয়ে গান শুনি তা আরো ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।’ ড. ক্যাসপার বলেন, ‘আমাদের প্রায় সবসময়ই গান শোনার জন্য পারিপার্শ্বিক শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয় যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’ ৬০ শতাংশের নিচে ভলিউম রাখা হলে সাউন্ড একটি নিরাপদ মাত্রায় থাকবে। কিন্তু যদি ভালোমতো শুনতে না পান তাহলে পারিপার্শ্বিক শব্দ বা বিশৃঙ্খলা এড়াতে শব্দকে আবদ্ধ করে রাখার মতো বিশেষ হেডফোন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. ক্যাসপার।

* বার্ষিক চেকআপ উপেক্ষা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে কিন্তু কানে ময়লা জমে ব্লক সৃষ্টি হলে তা অবশ্যই নিরাময়যোগ্য। ডা. ক্যাসপারের মতে, বছরে একবার অন্তত কানের ডাক্তার দিয়ে চেকআপ করানো উচিত। অন্যথায় কানে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

* ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হৃদরোগ, কেমোথেরাপি এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের (যেমন: মাইসিন জাতীয় জেন্টামাইসিন, নিওমাইসিন ইত্যাদি) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই আপনার রোগের জন্য অগ্রাধিকার পাবে কিন্তু তা আপনার শ্রবণসমস্যা তৈরি করার মতো উচ্চ ডোজের কিনা সে ব্যাপারে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। ডা. ফ্র্যাংক বলেন, ‘যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চ মাত্রা বিপজ্জনক হতে পারে। মাইসিন সাধারণত উচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়।’

* ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ
অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেনের মতো সাধারণ ওষুধও আপনার কানের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এগুলো শ্রবণশক্তিতে স্বল্পমেয়াদী প্রভাব ফেললেও, কখনো কখনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটা স্থায়ী হয়ে দাঁড়ায় যা আপনি কখনই চাইবেন না। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসপিরিন বা অন্যান্য ব্যথার ওষুধ সেবন আপনার শ্রবণশক্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে।

* তীব্র জ্বর
ডা. ফ্র্যাংক বলেন, ‘তীব্র জ্বরের ফলে শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কানের শিরা উপশিরাগুলোতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে এবং প্রদাহ তৈরি করতে পারে, যার ফলে শ্রবণশক্তি সঠিকভাবে আগের মতো কাজ করে না।’

* গণপরিবহনগুলোর শব্দদূষণ
বিভিন্ন গণপরিবহনের শব্দদূষণ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অংশ এবং এটি প্রতিনিয়ত আমাদের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। জরুরি সেবার গাড়িগুলোর সাইরেনের উচ্চ শব্দও আপনার শ্রবণশক্তি কমাতে পারে। ডা. ফ্র্যাংক বলেন, ‘কান ঢেকে রাখাটা ভালো ব্যবস্থা।’

* শারীরিক কসরতের বা ব্যায়ামের সময় গান শোনা
শারীরিক ব্যায়ামের সময় উচ্চ শব্দের গান শোনা আনন্দদায়ক হলেও এটা আমাদের কানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর গঠনের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য ধরে রাখুন কোনো সমস্যা নেই কিন্তু সেই সঙ্গে আপনার কানের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে ব্যায়ামের সময় উচ্চ শব্দের গান পরিহার করুন।

* রান্নাঘরের সামগ্রী
মাত্রাতিরিক্ত শব্দ হয় এমন ব্লেন্ডার, মিক্সার, জুসার কিংবা কফি গ্রাইন্ডার কানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রান্নাঘরে সারাদিন মাত্রাতিরিক্ত শব্দের রান্নাসামগ্রী ব্যবহারের অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে তা শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে।

* প্রতিদিনের ব্যবহার্য যন্ত্রের শব্দ
বিভিন্ন যন্ত্র যেমন হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন বা অন্যন্য যন্ত্রের উচ্চ কম্পাংকের শব্দ কানের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। ডা. ক্যাসপার এসব যন্ত্রের ক্ষতিকর শব্দ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। তুলা বা উচ্চ শব্দরোধকারী কোনো উপকরণ দিয়ে এই ক্ষতিকর শব্দ এড়ানো যায়।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়