ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘রানের ক্ষুধা দিন দিন বাড়ছে’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রানের ক্ষুধা দিন দিন বাড়ছে’

তুষার ইমরান

বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক কিছুতে এগিয়ে আছেন তুষার ইমরান। সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি, এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রান, মৌসুমে দ্রুততম হাজার রান- এসব কিছু লেখা আছে তুষার ইমরানের নামের পাশে। ২২ গজের ক্রিজে তার ব্যাটিং ঝলক এখনো অব্যাহত। ৩৪ বছর বয়সেও তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটছে। সবশেষ ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়, নাম লিখিয়েছেন এলিট ক্লাবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপট দেখানো তুষার ইমরানকে কি আর কখনো দেখা যাবে জাতীয় দলের জার্সিতে? কোথায় গিয়ে থামবেন তুষার ইমরান? মধ্য বয়সেও ব্যাটিং দাপট দেখানোর অনুপ্রেরণা পান কোথা থেকে? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন রাইজিংবিডির ক্রীড়া সাংবাদিক ইয়াসিন হাসান

রাইজিংবিডি: জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকালেন কিছুদিন আগেই। আর কতগুলো সেঞ্চুরি হাঁকালে নির্বাচকদের নজরে আসবেন বলে মনে হচ্ছে?
তুষার ইমরান: (প্রশ্ন শুনে হাসি) সেঞ্চুরি তো সেঞ্চুরিই। আমি তো আর নির্বাচকদের নজরে আসার জন্য খেলছি না। খেলার জন্য খেলছি। আমার কাজটুকু আমি করছি। বিশ্বাস রাখি যে, অবশ্যই আমার একটা ডাক আসবে।



রাইজিংবিডি
: কিন্তু সেই ডাকটা যদি আপনার সেরা সময়ে না আসে। বোঝাতে চাচ্ছি আপনার বর্তমান অবস্থায় যদি আপনি সুযোগ না পান তাহলে...
তুষার ইমরান: আসলে এটা মোটেও আমার ওপর নির্ভর করছে না। তাই এগুলো নিয়ে ভাবি না। আমি উইকেটে যাওয়া মাত্রই চিন্তা করি আমার ওপর একটা দায়িত্ব আছে। আমার উইকেটের মূল্য আছে। সেজন্য খেলে যাচ্ছি।

রাইজিংবিডি: একটা মিশনে তো অবশ্যই আছেন। সেটা তো অস্বীকার করার কিছু নেই...
তুষার ইমরান: আসলে আমার কোনো লক্ষ্যও নেই। কোনো মিশনেও নেই। শুধু রান করতে চাচ্ছি। বললাম না আমার উইকেটের একটা মূল্য আছে, সেটা আমি ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাই। এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য বলতে পারেন।



রাইজিংবিডি
: আব্দুর রাজ্জাক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেললেন। তার ডাক পাওয়ায় আপনি নিজেও তো আশাবাদী হয়ে উঠেছেন?
তুষার ইমরান: শুধু আশাবাদী নয়। আমি বিশ্বাস করি, আমার ডাক আসবে। আমরা দুজনই জাতীয় দলে ফিরতে চাচ্ছিলাম। আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট চলার সময় প্রায়ই রুম শেয়ার করে থাকি এবং আমরা আলোচনা করি বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে। আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম রাজ্জাক দলে সুযোগ পেয়েছে। এজন্য আশা ছাড়িনি। বড় দৈর্ঘ্যে ক্রিকেটে আমি যেভাবে খেলেছি, শেষ কয়েক বছর নির্বাচকরা অবশ্যই আমাকে দেখবে। এখনো রানের ক্ষুধা একটুও কমেনি। বরং প্রতিদিন রান করছি আর ভাবছি আরো রান করা যায় কীভাবে। নিজেকে সময় দিচ্ছি। রান পাচ্ছি।

রাইজিংবিডি: আচ্ছা এই যে রানের ক্ষুধার কথা বললেন। এই অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন কোথা থেকে? একটু যদি বিস্তারিত বলেন। কারণ আমরা তো সহজেই হাল ছেড়ে দিই। সেক্ষেত্রে আপনি টিকে আছেন। রান করছেন বৃষ্টির মতো...
তুষার ইমরান: দেখুন নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখার অনেক উপায় আছে। একেক জনের কাছে বিষয়টি একেক রকম। এইতো শেষ ম্যাচে আমি সৌম্যর বিপক্ষে খেললাম। ওকে দেখি, তরুণ ক্রিকেটার। প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এসব ছেলেদের সাথে খেলে নিজেকে তাদের ওপরে নিয়ে যাওয়ার থেকেও একটা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি। আবার আমি যখন খেলা শুরু করি তখনকার থেকে এখন আমি আরো পরিণত। বয়স হয়েছে। এখন যদি ভালো না খেলি তাহলে কখন খেলব। এটা নিজের সাথে নিজের একটা খেলা। আজ এত করলাম, কাল যেন এর থেকে এক রান, দুই রান বেশি করতে পারি। এগুলো চিন্তা করি। এটাই তো আমার টেরিটরি। আমাদের এখানে সেরা হতেই হবে।



রাইজিংবিডি
: শুধু কি লংগার ভার্সনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন?
তুষার ইমরান: আসলে এটা বলাটা কঠিন। আমি টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাই না, তাই ওখানে কী হবে তা বলা মুশকিল। এ ছাড়া পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে লম্বা সময়ের জন্য ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসেন না। দুই মৌসুম আগে ঢাকা লিগে একটা সুযোগ এসেছিল। আমি ৫০০-এর ওপরে রানও করেছিলাম। শেষ ঢাকা লিগে ছয়ে ব্যাটিং করেছি। কিন্তু লংগার ভার্সনে আমি চারে ব্যাটিং করছি। আমি সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি।

রাইজিংবিডি: একটু আগেই বললেন যে রানের ক্ষুধা দিন দিন বাড়ছে। একটা না একটা সময় তো ক্যারিয়ার থেমে যাবে। ব্যাট-প্যাড উঠিয়ে রাখবেন। ঠিক ওই সময়টায় নিজেকে কোথায় দেখতে চাইবেন?
তুষার ইমরান: আমি আমার সাধ্যমতো ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত রান করে যেতে চাই। আরো তিনটা মৌসুম খেলে যেতে চাই। ১০ হাজার রান করেছি। সেটা ১১ হাজারে নিয়ে যেতে চাই। পরবর্তীতে ১২ হাজারে। সত্যি বলতে সেভাবে কোনো টার্গেটই সেট নেই।



রাইজিংবিডি
: আপনি এমন একটা মাইলস্টোন সেট করে যাচ্ছেন, সেটা নিশ্চয়ই অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হবে। ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হলে আপনি জুনিয়রদের কীভাবে পরামর্শ দেবেন?
তুষার ইমরান: একটা বিষয় খেয়াল করছি, বিষয়টি সবার ক্ষেত্রেও না আবার। তরুণ অনেক ক্রিকেটার এখন চিন্তা করে যে চার-পাঁচ বছর ডিপিএল, বিপিএল, এনসিএল, বিসিএল খেলব। তাতেই কিন্তু তার কাছে অনেক টাকা আসবে স্বল্প সময়ে। তাতেই মনে হচ্ছে অনেকে খুশি। কিন্তু এটা শুধু স্বল্প সময়ের জন্য থাকবে। কিন্তু ক্রিকেটকে যারা ভালোবাসবে তারা কিন্তু টাকার পিছনে দৌড়াবে না। তারা খেলাটায় ফোকাস রাখবে এবং সফল হবে। টাকা তখন তাদের পিছনে দৌড়াবে। খেলাটাকে ভালোবাসতে হবে। তাহলে দেখবে সহজেই ফল আসবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ এপ্রিল ২০১৮/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ