ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

নানা আয়োজনে শেষ হলো বিপিও সামিট

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নানা আয়োজনে শেষ হলো বিপিও সামিট

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : জমজমাট ভাবে শেষ হলো বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৮। ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায়, প্যান পাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সমাপণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। এর ধারাবহিকতায় বিগত বছরগুলোতে এই পথে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর রূপকার সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং এর অর্ন্তগত বিভাগসমূহ।

মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, দু’দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সামিটে বাংলাদেশের বিপিও খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে নানা আঙ্গিকে যেসব আলোচনা ও সুপারিশ এসেছে, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করবো। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিপিও খাতের উন্নতিতে সবসময় পাশে থাকবে।

সমাপণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিটি সচিব সুবির কিশোর চৌধুরী। এছাড়া অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেনসহ আরো অনেকে।

ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন: চ্যালেঞ্জেস ইন বিপিও
বিপিও সামিটের শেষ দিন দুপুর আড়াইটার সময় ব্যালকনি হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন: চ্যালেঞ্জেস ইন বিপিও’ শিরোনামে একটি সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ সময় তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাত প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধানেও বিপিও খাত বড় অবদান রাখতে পারেও বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের মাধ্যমে আমরা চতুর্থ বিপ্লবের সুফল ভোগ করতে শুরু করব। সৃজনশীল উদ্ভাবন এবং মেধাসম্পদের লালন ও সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বিপিও খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পরামর্শও দেন।

শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, বিপিও খাতে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার উদীয়মান অর্থনীতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। বিপিও খাতে আমাদের আয় প্রবৃদ্ধি বছরে শতকরা ১০০ ভাগেরও বেশি। এটি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর লাখো শিক্ষার্থী যখন স্নাতক পাশ করার পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ায়, তখন এই বিপিও খাতে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা যখন আইসিটি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের কথা বলছি, তখন আমাদের ভাবতে হবে তরুণদের কথা। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ হল তরুণ, যাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টদের কাজে লাগাতে পারলে আমরা সময়ের আগেই ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।

অনুষ্ঠানে বোস্টন কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জারিফ মুনিরের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন কাজী আইটির প্রধান নির্বাহী মাইকি কাজী, লোজলি কাপলড টেকনোলজির প্রধান নির্বাহী ফিরোজ এম জাহিদুর রহমান, আইবিএম ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা আমির শাহুল ও নিপুন মেহরোত্রা, ইন্টিলেনেন্ট গ্লোবাল সার্ভিসের পরিচালক কানওয়ার বি সিংহ।

আউটসোর্সিং ফর স্টার্ট-আপস: গ্রোয়িং টুগেদার
বিপিও সামিটের শেষ দিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ‘আউটসোর্সিং ফর স্টার্ট-আপস: গ্রোয়িং টুগেদার’ শিরোনামে দিনের সেমিনার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের বিকাশের জন্য ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে ‘বিপিও হাব’ গড়ে তোলার প্রস্তাবনা এসেছে এ সেমিনার থেকে। সেমিনারে এ প্রস্তাবনা দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইমপেল সার্ভিস অ্যান্ড সলিউশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল হক। পরে তাতে সায় দেন অ্যাপভিত্তিক রাইড সার্ভিস পাঠাও ও সেবা’র প্রতিনিধিরাও। সেবা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান ইমতিয়াজ হালিম এবং পাঠাও’র প্রধান নির্বাহী হোসেন ইলিয়াস আউটসোর্সিং খাতের জন্য একটি দক্ষ  ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে আমিনুল হক বলেন, প্রথম ৩০ মাস যেকোনো উদ্যোক্তার জন্যই ভীষণ কঠিন সময় যায়। এই সময়ে পেরিয়ে গেলে তারা বুঝে যাবে, তাদের ব্যবসা প্রসারের জন্য আসলে কোন দিকগুলোতে তাদের মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। তরুণ উদ্যোক্তারা শুরুতে একটি আইডিয়া নিয়ে বসে থাকে, তারা যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়টি নিয়ে পড়ে থাকে। এমন সময় তাদের নজরে পড়ে, আরো অনেক দিকে তাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে, তখন তাদের সব মনোযোগ ঘুরে যায়।

পাঠাও’র প্রধান নির্বাহী হোসেন ইলিয়াস বলেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, অর্থ সাহায্য, আইনি সহায়তাসহ নানা তথ্য সহযোগিতা পেতে বিপিওগুলো নিয়ে একটি হাব করা যেতে পারে। আউটসোর্সিং ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে গেলে এখন সেটা বেশি দরকার।

আলোচনায় যোগ দিয়ে হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, স্টার্ট আপদের জন্য আউটসোর্সিং ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে আইসিটি ডিভিশন, হাইটেক পার্ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অর্থ সাহায্যও দিচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তরুণরা পয়সা নিয়ে কোনো কাজই করছে না। তখন বলতেই হয়, অর্থের অপচয় হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে কয়েকজনকে হাইটেক পার্ক অর্থায়ন করবে বলেও জানান হোসনে আরা বেগম।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘স্টার্ট আপ বাংলাদেশ’ প্রকল্পের উপদেষ্টা টিনা জাবিন অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সতর্ক করে বলেন, অ্যাপসগুলোর ৬৮ শতাংশ পাইরেটেড, এই অ্যাপস ব্যবহার করলে পরে আইনি ঝামেলাতেও পড়তে পারেন তারা। টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

অ্যাপসভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেবা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান ইমতিয়াজ হালিম বলেন, আউটসোর্সিংয়ের বাজার ক্রমশ বিস্তৃতি হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে ৬০ শতাংশ চাকরি আউটসোর্সিং খাত থেকে আসবে। কর্মক্ষেত্রে অবকাঠামোগত ও পর্যবেক্ষণের অভাবে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুতে ধুঁকতে থাকে বলেও মনে করেন তিনি। একটি বিজনেস মডেল তৈরি করতে গিয়ে ঠিক কিভাবে প্রমোশন করবে, কাস্টমার সার্ভিস, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এইচআর ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবে তা বুঝে উঠতে পারে না। অথচ একটি দক্ষ আউটসোর্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এ বিষয়ে নজর রাখা উচিৎ।

ডেভো টেকের চেয়ারম্যান এবং সিইও রায়হান শামসির পরিচালনায় সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন নাবেট ইন্ডিয়ার সিইও ও পরিচালক অর্জুন মিশ্র, কিকসা ডটকমের কো-ফাউন্ডার এবং সিইও জিশান কিংশুক।

ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর কলসেন্টার এজেন্টস
আয়োজনের দ্বিতীয় দিন সকাল সাড়ে ১০টায় মেঘনা হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্যাপাসিটিবিল্ডিং ফর কলসেন্টার এজেন্টস’ শিরোনামে একটি কর্মশালা। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কণ্ঠশীলনের সাধারণ সম্পাদক জাহীদ রেজা নূর। এ সময় তিনি বিভিন্ন কলসেন্টারে কর্মরত ও কল সেন্টারে কাজ করতে আগ্রহী তরুণদের হাতে কলমে নানা বিষয় প্রশিক্ষণ দেয়। জাহীদ রেজা নূর বলেন, সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারা একটি মানুষের অনেক বড় একটি গুণ। বিপিও সেক্টরে ভালো করতে হলে সুন্দর ভাবে কথা দক্ষতা থাকতে হবে।

এছাড়া শেষ দিনে দুপুরে আরো দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সুরমা হলে ‘কাস্টমার-সেনট্রিক হেলথকেয়ার ডেলিভারি সিস্টেম অ্যান্ড বিপিও’ এবং মেঘনা হলে ‘রাইজ অব এআই অ্যান্ড দ্য ইমপ্যাক্ট অন বিপিও’।

সামিটে ছিল সরাসরি ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা
বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৮ আয়োজনে ভেন্যুতেই সরাসরি ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাক্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই দিনের এ সামিটে মোট ৪৩২ ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। ইন্টারভিউ নেওয়া প্রার্থীদের বিপিওর ক্ষেত্রে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সামিটে ১১২০ জনের সিভি জমা পরেছে।

১৫ এপ্রিল রোববার সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে’র আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এর আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৮’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। এবারের আয়োজনে ৬০ জন স্থানীয় বক্তা, ২০ জন আন্তর্জাতিক বক্তা অংশগ্রহণ করেছে। দুই দিনের মূল আয়োজনের আগে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টিভেশন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়