ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রতারণা: ডিএনএ পাল্টে সুপার খেলোয়াড়!

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ১৯ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রতারণা: ডিএনএ পাল্টে সুপার খেলোয়াড়!

প্রতীকী ছবি

নিয়ন রহমান : আপনার কি ধারণা প্রতারণা করে ক্রীড়াঙ্গনে খুব বেশি উন্নতি করা যায় না? লেন্স আর্মস্ট্রং সাতবার ফ্রান্সের সাইকেল প্রতিযোগিতায় জিতেছিলেন, মেন্নি রেমিরেজ দুইবার বেসবল বিশ্বকাপ জিতেছিলেন, বেন জনসন একটা অলিম্পিক গোল্ড মেডেল জিতেছিলেন। এগুলা কি যথেষ্ট উন্নতি নয়?

যদিও পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ বের করে ফেলেছিলেন যে এরা নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়েছেন খেলার সময়, আর তাদের শাস্তিও দেয়া হয়েছিল। তবে তাতে কি? এসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বের করতে করতে ইতোমধ্যেই তারা স্পন্সর ও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে ফেলেন। তবে এরা ড্রাগ পরীক্ষায় ধরা খেলেও অনেকেই নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়েও পার পেয়ে যায়। কারণ তারা এমনভাবে নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবন করে থাকেন যাতে করে পরীক্ষায় ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।

অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমন কিছু আসতে যাচ্ছে যেটা পরীক্ষা করে ধরে ফেলা রীতিমতো অসম্ভব হতে পারে! হ্যাঁ, একে বলা হয় জেনেটিক কোডিং পাল্টে ফেলা। বিজ্ঞানীরা এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে চলেছেন যার মাধ্যমে আমাদের ডিএনএ এর গঠন পাল্টে ফেলা যাবে। আমাদের শরীরের ডিএনএ আমাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ, যেকোনো খেলোয়াড় চাইলেই তখন ডিএনএ পরিবর্তন করে নিজের শারীরিক ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করে ফেলতে পারবেন।

জেনেটিক পদ্ধতি ব্যাবহার করে ফসলের অধিক ফলন সম্পর্কে ইতোমধ্যেই হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। বিভিন্ন প্রকার হাইব্রিড সবজি হয়তো আপনারা সুপারমার্কেট থেকে কিনেছেনও, অনলাইনের কোনো আর্টিকেলে এই ধরনের শাকসবজি সম্পর্কে হয়তো অবগত আছেন যেখানে বিজ্ঞানীরা অধিক ফলনের জন্য গাছের বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক কোড পরিবর্তন করে থাকেন। ঠিক একইভাবে মানুষের শরীরেও জেনেটিক কোড পাল্টে শারীরিক ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিজ্ঞানীরা এমন একটা ডিএনএ ভাইরাস তৈরি করলেন যেটা মানুষের শরীরে বেশি করে প্রোটিন ইরিথ্রোপোয়েটিন (ইপিও) উৎপাদন করতে সহায়তা করে। এই বেশি মাত্রায় ইপিও শরীরের টিস্যুগুলাতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সাপ্লাই করে থাকে যাতে করে শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ড্রাগ টেস্টের মাধ্যমে শরীরে যদি ইনজেকশন দিয়ে ইপিও বা এই ধরনের কিছু নেয়া হয়ে থাকে সেটা বের করা সম্ভব। কিন্তু ডিএনএ থেকে যদি শরীরের এই ইপিও উৎপন্ন হয়ে থাকে, অর্থাৎ শরীর যদি নিজে থেকেই এই ইপিও উৎপন্ন করে তবে সেটা বের করা রীতিমতো অসম্ভব।

তবে অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির বিজ্ঞানী অলিভার রনিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে তখন আমরা রক্তে অথবা ডিএনএ তে অতিরিক্ত কোনো জিন আছে কি না সেটা পরীক্ষা করে বের করব। এটা বের করা যদিও এখন অসম্ভব তবে এর পদ্ধতি নিয়েও কাজ চলছে।’

তবে এভাবে পরীক্ষা করে বের করা সম্ভব যদি কর্তৃপক্ষের কাছে আগে থেকেই সেই ডিএনএ ভাইরাসের স্যাম্পল থেকে থাকে। অথবা প্রতিটা খেলোয়াড়ের এই ভাইরাস গ্রহণের পূর্বের ডিএনএ স্যাম্পল থেকে থাকে। তা না হলে, এটা বের করা খুবই মুশকিল হয়ে যাবে ডিএনএ এর কোন অংশ আগে থেকেই ছিল আর কোন অংশ জেনেটিক কোডিং এর মাধ্যমে পাল্টে ফেলা হয়েছে।

এই ইস্যুতে অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই চিন্তা ভাবনা করছেন যাতে খেলোয়াড়রা তাদের ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে রাখে। তবে গবেষকরা এই জেনেটিক কোডের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে খেলোয়াড়দের নিয়ে শিক্ষামূলক ক্যাম্পেইন করার কথা ভাবছেন। কেননা এই জেনেটিক কোডিং এখনো শুধু তাত্ত্বিকগত ভাবেই আছে। কোনো খেলোয়াড় যদি এই পদ্ধতিতে যেতে চায় তবে শরীরের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব পরতে পারে। অন্য ক্রীড়া মনস্তাত্ত্বিক গবেষকরা বলেন, এতে করে তেমন কোনো লাভ হবে না। কারণ খেলোয়াড়রা খেলার জন্য যেকোনো ধরনের রিস্ক নিতে প্রস্তুত। কারণ নিষিদ্ধ ড্রাগেও শরীরের প্রচুর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে।

কিছু খেলোয়াড়দের জন্য এই জেনেটিক কোডিং এর ক্ষতিকারক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও এই রিস্ক নেয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, যদি এর মাধ্যমে তারা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জিততে পারে এবং তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।

তথ্যসূত্র : ফিউচারিজম



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়