ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস বেপরোয়া চলাচল করে’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২১ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস বেপরোয়া চলাচল করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, এই ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস রাস্তায় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার সাথেও জড়িত।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত 'সড়ক নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে এবং এর ফলে এসব গাড়িতে দুর্ঘটনায় কারো হাত, কারো পা, কারো মাথা, কা‌রো জীবন চলে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহন রাস্তায় চলছে। এর পাশাপাশি অনিবন্ধিত, ভুয়া নামজারি করা ও অযান্ত্রিক যান মিলে অবৈধ প্রায় ৫০ লাখ গাড়ি রাস্তায় চলছে। এর ৭২ শতাংশেরই ফিটনেস নেই। অন্যদিকে সারাদেশে ৭৯ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএ-এর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের হাতে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রাজধানী ও সারাদেশে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। বাসে বাসে পাল্লা ও বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রীরা। যত্রতত্র বাস থামানো, রাস্তার মাঝখানে গতি কমিয়ে চলন্ত বাসে যাত্রী উঠানামা করানো, ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তার মোড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো নামানো, গাড়িতে যাত্রী তোলার জন্য ভয়ংকর প্রতিযোগিতা, পথের ওপর গাড়িতে গাড়িতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ঢাকার গণপরিবহন খাতের নিত্যদিনের চিত্র। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশ গুমড়ে কেঁদে উঠলেও প্রতিদিনই দেশের সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে গড়ে ৬৪টি করে তাজা প্রাণ। প্রতিদিন আহত ও পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে গড়ে ১৫০ জনের বেশি মানুষ। সড়ক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে।

আলোচনা সভায় বলা হয়, সংগঠনের গঠিত সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্যমতে সারাদেশে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত ১৭৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৪১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে আর ৫৪৭৭ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে পঙ্গু হয়েছে ২৮৮ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাস-মিনিবাসের বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো- নগরীতে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা বন্ধে কোম্পানি ভিত্তিক একই কালারের বাস সার্ভিস চালু করা, উন্নত বিশ্বের আদলে আমলাতন্ত্রের বাইরে এসে পেশাদারিত্ব সম্পন্ন গণপরিবহন সার্ভিস অথরিটির নামে একটি টিম গঠন করা, ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম জবাবদিহিতার আওতায় আনা, চালকের হাতে দৈনিক জমা ভিত্তিক বাস ইজারা দেওয়া বন্ধ করা, বিআর‌টিএ-এর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা জনবান্ধব করা, ট্রাফিক পুলিশের মামলার জরিমানা সরাসরি ব্যাংকে জমা দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও টোকেন বাণিজ্য বন্ধ করা, হকার ও অন্যান্যদের ফুটপাথ দখল বন্ধ করা, ‌রুট পারমিট ইস্যু প্রক্রিয়ায় ঢাকা মেট্রো রোড ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আর‌টিসি) মালিক শ্রমিক নেতাদের পরিবর্তে পেশাদার ও কারিগরী জ্ঞান সম্পন্ন লোকজন নিয়ে পুনর্গঠন করা, ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া, পরিবহন খাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যাত্রীসাধারণের অভিযোগ তুলে ধরা ও মতপ্রকাশের স্বার্থে যাত্রী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

আলোচনা সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক উপস্থিত ছিলেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ এপ্রিল ২০১৮/মেহেদী/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়