ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বছরে খাদ‌্যশস্য অপচয় ৭৭ লাখ টন

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১১, ১৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বছরে খাদ‌্যশস্য অপচয় ৭৭ লাখ টন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা, পেয়াঁজ, আলুসহ সব ধরনের ফল ও সবজির উৎপাদন ছিল প্রায় ৬ কোটি টন। এসব খাদ্যশস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতেই নষ্ট হয়েছে প্রায় ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রের ভুমিকা ও খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে এসব তথ্য ওঠে আসে।

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিজেএএফ) সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইদ শাহীন।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, গবেষণাটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদিত শস্যের পোস্ট হারভেস্ট লস ও আর্থিক মূল্য বের করা হয়েছে। খাদ্যশস্য, সবজি ও ফলমূলের ১০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে উৎপাদক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগী, সংগ্রহকারী, মজুতদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর হাতবদলে। গড়ে উৎপাদিত শস্যের প্রায় ১৩ শতাংশই নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হওয়া এসব শস্যের আর্থিক মূল্য মোট বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৩০ শতাংশ। নষ্ট হওয়া খাদ্যশস্যের মধ্যে চাল ও গমের পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আলুর পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টন যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ফল নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৮ লাখ টন যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সবজি নষ্ট হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টন যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া পেয়াঁজ ও ভুট্টা নষ্ট হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার শস্য ফসলোত্তরে নষ্ট হচ্ছে। দেশের এ অপচয় রোধ করা গেলে খাদ্য শস্য আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি।

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, খাদ্যশস্যের অপচয় দেশের প্রবৃদ্ধিকে খেয়ে ফেলছে। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষের অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করছি। খাদ্যশস্যের এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি, তেমনি খাদ্য অধিকারকেও বঞ্চিত করছে। সার্বিকভাবে পুষ্টি নিরাপত্তাকে করছে বাধাগ্রস্ত। আর দেশের অর্থ ও সম্পদের অপচয়ও হচ্ছে। দেশের দারিদ্র্যতা থেকে মানুষকে উন্নতির যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটিও বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। শস্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রযুক্তি দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর কৃষকের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ব্যবস্থাপনা, খাদ্যশস্যের সহজলভ্যতা এবং নীতি ও কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে অনেক সীমাবদ্ধতা। খাদ্যের অপচয়ের কারণে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় হুমকি যেমন হচ্ছে তেমনি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি কার্যক্রমে প্রযুক্তি কেনায় আরো জোরদার করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সাবেক মহাপরিচালক ও হরটেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনজুরুল হান্নান বলেন, প্রযুক্তির অভাব, শস্যের শুকানোর পদ্ধতিগত ক্রুটি, বিপণন পর্যায়ে দুর্বলতা, সীমিত গুদামজাতকরণ, দুর্বল পরিবহনজাতকরণ এবং প্যাকেজিংয়ের অভাবেই শস্যের অপচয় হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে অপচয়ের পাশাপাশি খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে এ অপচয় রোধ করতে পারলে আমরা ৫ শতাংশ খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারব। সেটি করতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ জরুরি তেমনি সচেতনতা বাড়াতে হবে।

দেশের নাজুক পুষ্টি পরিস্থিতিতে খাদ্য অপচয় রোধের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারলে আমরা অধিকসংখ্যক লোকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতেও সক্ষম হব।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মে ২০১৮/হাসিবুল/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়