ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খাবার পানির জন্য মাইলের পর মাইল অতিক্রম!

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খাবার পানির জন্য মাইলের পর মাইল অতিক্রম!

শ্যামনগর আইলা দূর্গত এলাকায় খাবার পানির জন্য দীর্ঘ লাইন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: খাবার পানির জন্য মাইলের পর মাইল ছুটতে হচ্ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বসবাসরতদের। আইলার আঘাতের পর থেকেই এসব এলাকায় সুপেয় পানি সঙ্কট প্রকট ।

দু‘মুঠো ভাতের জন্য জীবনের সাথে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। আইলা কবলিত এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, উপকুলীয় বেড়িবাঁধ এখনও সংস্কারহীন। আইলার আঘাতের পর থেকে গোটা এলাকা উদ্ভিদশূন্য হয়ে পড়ে। ফসল ও চিংড়ী উৎপাদন বন্ধ থাকায় গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র কর্মসংস্থানের সংকট। কর্মহীন মানুষ অনেকেই এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছে। আইলা’য় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দু’টি ইউনিয়নে বসবাসরতদের চোখে-মুখে এখনও ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি।

সর্বনাশা আইলা’র আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায় নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। প্রলংয়করী আইলা আঘাতের আনার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশশুনির প্রতাপনগর এলাকায় এখনো মানুষের হাহাকার। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার পরিবার এখনও আশ্রয়হীন।

২০০৯ সালের ভয়াবহ সে দিনটিতে ঘূর্ণিঝড় আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকুলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। ১৪-১৫ ফুট উঁচু সমুদ্রের পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ, হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। ক্ষণিকের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়ে লাখো পরিবার। লক্ষ লক্ষ হেক্টর চিংড়ি আর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকুল রক্ষা বাঁধ আর অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

অপরদিকে, বনদস্যুদের অত্যাচারে সুন্দরবন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর উপর নির্ভরশীল এ এলাকার মানুষের জীবনযাপন দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে। ফলে বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছেন না এসব জনপদের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। আইলার পরপর কিছু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কাজের বিনিময় খাদ্য প্রকল্পের কাজ হলেও এখন আর কোনো কাজ হচ্ছে না। আর এ কারণেই ক্রমে ক্রমে বাড়ছে ভূখা মানুষের সংখ্যা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে আবার ফাঁটল ধরেছে এবং সংস্কার না করায় সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেও ঝূঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে এ জনপদের মানুষদের।

স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা বেসরকারি উদ্যোগে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। লবণ পানিকে মিষ্টি পানিতে রুপান্তর করে খাবার উপযোগী করছি। পুকুর খনন করেছি। আইলার আঘাতের পর এখানের মানুষের জীবন ধারণের সব সুযোগই যেন হারিয়ে গেছে। চিকিৎসা নেই। প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ঠসংখ্যক সাইক্লোন শেল্টারও নেই।’

শ্যামনগর উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী অফিসার সুজন কুমার সরকার বলেন, ‘আইলার পরে প্রায় ৪৮ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বাঁধ সংস্কারের কাজও করা হয়েছে।’

সুপেয় পানির সমস্যাও দ্রুত দূর হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।





রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২৬ মে ২০১৮/এম.শাহীন গোলদার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়