ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মঙ্গলে গর্ভধারণে ডিএনএ পরিবর্তন করতে হবে

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ২৭ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মঙ্গলে গর্ভধারণে ডিএনএ পরিবর্তন করতে হবে

প্রতীকী ছবি

নিয়ন রহমান : পৃথিবীতে একটি শিশু জন্ম দেয়াটা সবসময় অতটা সুখের নয়, কারণ গর্ভধারণে জটিলতা, প্রসবযন্ত্রণা, অন্যান্য শারীরিক অসুবিধাসহ রয়েছে নানাবিধ সমস্যা।

আর মঙ্গল গ্রহে বাচ্চা জন্ম নিয়ে ভাবছেন? এটা মোটামুটি অসম্ভব বলা চলে যদি না আমরা আমাদের ডিএনএতে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসি। পোল্যান্ডের ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এই তথ্যটি উঠে এসেছে।

মঙ্গল গ্রহে প্রজননের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি সমস্যা হতে পারে। প্রথম সমস্যাটি হল রেডিয়েশন বা মহাজাগতিক বিকিরণ। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল এতই পাতলা যে সেখানে এই বিকিরণ যেকোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয় দাঁড়াবে। এমনকি ব্যাপারটা এমন হয়ে যেতেও পারে যে মানুষ এই বিকিরণের ফলে তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘বিকিরণ মানুষের শরীরের জন্য চরম পর্যায়ের ক্ষতিকর, বিশেষ করে প্রজনন ক্ষমতার ওপর এর প্রভাব পড়বে। বিকিরণ প্রজনন কোষ, গর্ভের ভ্রূণ ছাড়াও ইতিমধ্যে মহাকাশচারীদের প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।’

দ্বিতীয় সমস্যা হল মাইক্রোগ্রাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাব। এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির স্বল্পতা, মহাকাশে ভ্রমণকালীন সময় এবং মঙ্গল গ্রহে অবস্থানরত সময়ে বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা মহাকাশচারীদের হাড়ক্ষয়, স্পাইনাল কর্ডের নানাবিধ সমস্যাসহ চোখের দৃষ্টিশক্তির ওপর এটি স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়াও শরীরের ইমিউন ও নার্ভ সিস্টেমসহ আরো নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই সকল সমস্যার কারণে জন্মদানের জন্য মানুষের শরীর মঙ্গলগ্রহে সঠিক অবস্থায় থাকবেনা।

সুতরাং যদি কেউ মঙ্গল গ্রহে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চায় এবং সেখানে নতুন করে জীবন ও পরিবার শুরু করতে চায় তাহলে কি হবে? এক্ষেত্রে হয়তো সমাধান হতে পারে মানুষের ডিএনএতে কিছু পরিবর্তন।

গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে, সিআরআইএসপিআর বা জিন এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের শরীর মঙ্গল গ্রহের উপযোগী করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ধরনের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মানুষ তৈরি হবে যাদের মানবিক এবং নৈতিক গুণাবলী হবে বর্তমান পৃথিবীর মানুষদের থেকে সম্পূর্ণ রূপে আলাদা।

কিন্তু তাই বলে ব্যাপারটা এমন নয় যে, বিজ্ঞানীরা আগামীকাল থেকেই মঙ্গলগ্রহে প্রজনন প্রক্রিয়াতে চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের হাতে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় রয়েছে যাতে করে গবেষণার মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে মানুষের প্রজনন ক্ষমতার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। এ ধরনের গবেষণার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এ সকল গবেষণায় যে ব্যাপারে দৃষ্টিপাতের প্রয়োজন রয়েছে তা হচ্ছে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কমে গেলে পুরুষ এবং নারীর প্রজনন কোষের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে সরাসরি মঙ্গল গ্রহে নয় বরং তার পূর্বে মহাকাশ যানের মধ্যেই গর্ভধারণ করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

মঙ্গলগ্রহে জীবনযাপন নিয়ে অন্যান্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা অন্যতম একটি গবেষণার বিষয়। আমরা যদি মঙ্গল গ্রহে জীবনযাপন নিয়ে ভাবতে শুরু করি তাহলে একে একে সকল সমস্যাগুলো নিয়েও গবেষণা করে যেতে হবে। তবে আমাদের এখনকার প্রধান উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিৎ যে, কীভাবে আমরা জীবিত অবস্থায় একজন মানুষকে মঙ্গলগ্রহে পাঠাতে পারি।

তথ্যসূত্র : ফিউচারিজম




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৮/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়