ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করলেন ভাসানীর ৫৬ শিক্ষক

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করলেন ভাসানীর ৫৬ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা ৫৬ শিক্ষক পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে  তারা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন, সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি মো. ইমরান মিয়া, আদ্রিতা পান্না, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও ইয়াসির আরাফাত।

সোমবার রাতে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া সাত শিক্ষার্থীকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কেন বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে তাদেরকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারে পর মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে পদত্যাগ করা ৫৬ জন শিক্ষকও তাদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইশিতা বিশ্বাস তিষা নামে ওই বিভাগের ২য় বর্ষ ২য় সেমিষ্টারের  শিক্ষার্থী এবং বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা। এসময় তারা অভিযোগ করেন, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিষাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগ নেতারা এর প্রতিবাদ করে তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আদায় করে দেওয়ায় শিক্ষকরা পাঁচ ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে।

রোববার শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের অসৌজন্যমুলক আচরণের ঘটনায় বোর্ড সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিমের বিরুদ্ধে ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’কে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম বলছেন, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সম্পর্কে কোনো খারাপ রিপোর্ট এখন পর্যন্ত নেই। যে ছাত্রী এই অভিযোগ এনেছেন সেটি দুই বছর আগের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ওই ছাত্রী যে দরখাস্ত দিয়েছেন সেটির সাথে এই অভিযোগপত্রের হাতের লেখার সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যা উঠে আসবে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি শিক্ষককের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ছাত্রীর করা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিমের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও, তিনি কথা বলতে রাজী হননি।

প্রসঙ্গত, শনিবার দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস নামে এক ছাত্রী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। রোববার ছিল কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষা। কিন্তু ওই ছাত্রী উত্তীর্ণ না হওয়ায় প্রবেশপত্র থাকা স্বত্বেও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ তাকে পরীক্ষা অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু পরীক্ষার একদিন আগে ফলাফল ঘোষণাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশবিরোধী উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতাকে জোর করে পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেন। বিভাগের শিক্ষকরা এতে বাঁধা দিতে গেলে সজীব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুজ্জামান, শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারধর করতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করান। অসৌজন্যমূলক আচরণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোমবার দুপুরে প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ৫৬ শিক্ষক।

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অর্ডিন্যান্স সমস্যা নিরষনে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বোর্ড সদস্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সাইদুল হক চৌধুরীকে প্রধান করে একটি অর্ডিন্যান্স সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন এই কমিটির সদস্য থাকবেন।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শিগগিরই চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। তারপরও রিজেন্ট বোর্ডের নেওয়া সিদ্বান্তে পরবর্তীতে যদি অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটে তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৯ অক্টোবর ২০১৮/শাহরিয়ার সিফাত/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়