ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইউটিউব ব্যবহার করলে কি পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয়?

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইউটিউব ব্যবহার করলে কি পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয়?

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। ওয়াই-ফাই ব্যবহার না করে মোবাইল থেকে ইউটিউবে ভিডিও দেখতে গেলে সবসময়ই ইন্টারনেট ডেটা খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, বিশেষ করে যদি আপনি আনলিমিটেড ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজের ব্যবহারকারী না হয়ে থাকেন। কেননা ইউটিউবে ভিডিও দেখায় খুব দ্রুত ইন্টারনেট ডেটা শেষ হয়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইউটিউবে ভিডিও দেখায় কি পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয়, এই পরিমাণটা কিভাবে পরিমাপ করবেন এবং ডেটা খরচ কমানোর কৌশল।

ইউটিউব ব্যবহারে কি পরিমাণ ডেটা খরচ হয়: একটি হিসাব
ডেটা খরচের পরিমাণ নির্ভর করে আপনি ইউটিউবে কোন কোয়ালিটির ভিডিও দেখছেন তার ওপর। ইউটিউব অ্যাপে সর্বনিম্ন ১৪৪ পিক্সেল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২১৬০ পিক্সেলের (৪কে কোয়ালিটি) ভিডিও দেখা যায়।

কোন কোয়ালিটির ভিডিও দেখায় ইন্টারনেট ডেটা কেমন খরচ হয়, চলুন সেই হিসাব করা যাক। উল্লেখ্য, এই হিসাব একেবারে নির্ভুল নয় এবং ফলাফল পরিবর্তন হতে পারে।

ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কোয়ালিটির ভিডিওর জন্য বিভিন্ন ধরনের বিটরেট-এর ধারণা দিয়ে রেখেছে, যা goo.gl/jjkQ2q এই লিংক থেকে দেখে নেওয়া যাবে। উদাহারণস্বরূপ- ৪৮০ পিক্সেলের একটি ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউবের হিসাব অনুযায়ী বিট রেট হচ্ছে, ৫০০ এবং ২০০০ কেবিপিএস এর মধ্যে। যার গড় বিটরেট ধরা যাক ১২৫০ কেবিপিএস।

১২৫০কেবিপিএসকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করে মেগাবাইটে রূপান্তর করলে দাড়ায় ১.২৫ এমবিপিএস। যেহেতু ৮ বিট = ১ বাইট, তাই ১.২৫ এমবিপিএসকে ৮ দিয়ে ভাগ করলে ফলাফল দাড়াচ্ছে, ভিডিও দেখায় প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ০.১৫৬ এমবি (মেগাবাইট) ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয়। ৬০ সেকেন্ডে ১ মিনিট। সুতরাং ০.১৫৬ এমবিকে ৬০ দিয়ে গুণ করলে ফলাফল দাড়াচ্ছে, ৯.৩৭৫ এমবি।

অর্থাৎ ইউটিউবে ৪৮০ পিক্সেল কোয়ালিটির ভিডিও দেখায় প্রতি মিনিটে প্রায় ৯.৩৭৫ এমবি খরচ হয়। প্রতি মিনিটে ৯.৩৭৫ এমবি খরচ হলে, ৬০ মিনিট অর্থাৎ ১ ঘণ্টায় ৪৮০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনের ভিডিও দেখায় ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয় ৫৬২.৫ এমবি।

একই হিসাব ইউটিউবের অন্যান্য কোয়ালিটির ভিডিওর ওপর প্রয়োগ করে ধারণা মিলবে যে, ১ ঘণ্টা ইউটিউবে ভিডিও দেখায় আপনার কি পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয়।

এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ৭২০ পিক্সেল এবং তার বেশি পিক্সেলের ভিডিওর ক্ষেত্রে ইউটিউব ৩০এফপিএস (ফ্রেম পার সেকেন্ড) এর পরিবর্তে ৬০এফপিএস ভিডিও সমর্থন করে। বেশি এফপিএসের ভিডিওর মান যেমন ভালো হয়, তেমনি ইন্টারনেট ডেটাও বেশি খরচ হয়।

কোন কোয়ালিটির ভিডিও দেখায় প্রতি ঘন্টায় কি পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা খরচ হয়
* ২৫০ পিক্সেলের ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ২২৫ এমবি।
* ৩৬০ পিক্সেলের ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ৩১৫ এমবি।
* ৪৮০ পিক্সেলের ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ৫৬২.৫ এমবি।
* ৭২০ পিক্সেলের ৩০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ১২৩৭.৫ এমবি।
* ৭২০ পিক্সেলের ৬০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ১৮৫৬.২৫ এমবি।
* ১০৮০ পিক্সেলের ৩০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ২.০৩ জিবি।
* ১০৮০ পিক্সেলের ৬০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ৩.০৩ জিবি।
* ১৪৪০ পিক্সেলের (২কে) ৩০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ৪.২৮ জিবি।
* ১৪৪০ পিক্সেলের (২কে) ৬০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ৬.০৮ জিবি।
* ২১৬০ পিক্সেলের (৪কে) ৩০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ১০.৫৮ জিবি।
* ২১৬০ পিক্সেলের (৪কে) ৬০এফপিএস ভিডিও দেখায় প্রতি ঘণ্টায় ডেটা খরচ ১৫.৯৮ জিবি।

৪৮০ পিক্সেলের ভিডিও আদর্শ ভিডিও হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ খুব নিম্ন কোয়ালিটির ভিডিও না, আবার খুব উচ্চ কোয়ালিটির ভিডিও না। ১০৮০ পিক্সেল হচ্ছে ফুল এইচডি ভিডিও, এই কোয়ালিটির ভিডিও ইউটিউবে এখন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। ৪কে কোয়ালিটির ভিডিও ইউটিউবে ব্যাপক ভাবে না থাকলেও, বর্তমানে অনেক ইউটিউব চ্যানেল ৪কে কোয়ালিটির নিয়ে আসছে।

যদি আপনি সত্যিই ইন্টারনেট ডেটা ব্যয় কমাতে চান তাহলে ৩৬০ পিক্সেলের ভিডিও মোটামুটি ভালো কিন্তু এর চেয়ে কম কোয়ালিটির ভিডিও সম্ভবত উপভোগ্য মনে হবে না। 

কিভাবে ইউটিউবে ইন্টারনেট ডেটা খরচ কমাবেন
ডেটা খরচ হবে বলে ইউটিউব ব্যবহার করবেন না, তা কি আর হয়? সুতরাং সুখবর হচ্ছে, ইউটিউবে ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ডেটা সাশ্রয়ের বেশ কিছু উপায় রয়েছে।

* কোয়ালিটি নির্ধারণ করে ভিডিও দেখুন
আপনি যখন ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার করছেন তখন এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও এড়িয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে সেরা উপায়। যেকোনো ভিডিও দেখার সময় ‘থ্রিডট’ মেন্যুতে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি ভিডিওটির বর্তমান কোয়ালিটি দেখতে পাবেন। ‘Quality’ অপশনটিতে ক্লিক করে কোয়ালিটি পরিবর্তন করে ভিডিওটি দেখুন।

যদি ইন্টারনেট গতির ওপর নির্ভর করে কোয়ালিটি নির্ধারণ করতে চান তাহলে Auto অপশনটিতে ক্লিক করতে পারেন। কিন্তু ইন্টারনেট ডেটা যদি সাশ্রয় করতে চান, তাহলে ভালো উপায় হচ্ছে কোয়ালিটি ম্যানুয়ালি নির্ধারণ করে ভিডিও দেখা। ডেটা খরচ এবং ভিডিও গুণগতমানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ৪৮০ পিক্সেল নির্ধারণ করতে পারেন।

* এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও শুধুমাত্র ওয়াই-ফাইয়ের জন্য নির্ধারণ করুন
আপনি যদি প্রতিবার ভিডিও দেখার সময় কোয়ালিটি পরিবর্তনের ঝামেলায় না যেতে চান, তাহলে এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও কেবলমাত্র ওয়াই-ফাই সংযোগে চলবে- এই অপশনটি ব্যবহার করুন। ইন্টারনেট ডেটা সাশ্রয়ের এই ফিচারটি চালু করার জন্য সেটিংস থেকে আপনার ইউটিউব অ্যাকাউন্টের Settings অপশনে ক্লিক করুন। এরপর General অপশনে ক্লিক করুন। এবার Limit mobile data usage অপশনটি চালু করুন।  এই অপশনটি চালু করার ফলে মোবাইল ডেটা দিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় ৪৮০ পিক্সেলের বেশি কোয়ালিটির কোনো ভিডিও প্রদর্শন হবে না। এতে ব্যাপক সাশ্রয় হবে আপনার মোবাইল ইন্টারনেট ডেটা।

* অটোপ্লে অপশন বন্ধ রাখুন
ইউটিউবের অটোপ্লে ফিচারের সুবিধা হচ্ছে, একটি ভিডিও দেখা শেষ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী ভিডিও চালু হয়ে যায়। কিন্তু যদি পরবর্তী ভিডিওটি আপনার দেখার ইচ্ছা না থাকে তাহলে আপনার অন্যমনস্কতায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী ভিডিও চালু হওয়ায় আপনার ডেটা খরচ হবে। তাছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়া ভিডিওটি আপনার পছন্দের না হওয়ায় মেজাজ খারাপও হতে পারে। তাই অটোপ্লে অপশনটি বন্ধ করে দিন। এর ফলে ইউটিউব পরবর্তী ভিডিও নিজ উদ্যোগে চালু করবে না। এতে সাশ্রয় হবে আপনার ইন্টারনেট ডেটা।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়