ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আল মাহমুদের প্রেমময় জীবন

সাখাওয়াত টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আল মাহমুদের প্রেমময় জীবন

 

|| সাখাওয়াত টিপু ||

ত্রিশের কবিদের হাতে বাংলা কবিতার আধুনিকতার উন্মেষ। কবি আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯) সেই সাফল্য মৌলিক শৈলীতে ধরে রেখেছিলেন আপন কাব্যসুষমায়। নাগরিক চেতনায় তিনি মাটিজ অনুভূতিতে গ্রামীণ শব্দপুঞ্জ, উপমা-উৎপ্রেক্ষা এবং চিত্রকল্প সংশ্লেষ করে আধুনিক বাংলা কবিতার নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছেন। তাঁর লেখা আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘জীবন যখন বাঁক ঘোরে’। কবির প্রয়াণে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই উপন্যাসের প্রতি আলোকপাত করে লেখাটি প্রকাশ করা হলো।

বাংলাভাষার কবি আল মাহমুদের দুটো আত্মজীবনী আছে। তার একটি ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’, আরেকটি ‘বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ’। আদর্শ সংস্করণে বই দু’টি একত্রে নাম নিয়েছে ‘কবির মুখ’। বই দু’টি যাদের পড়া, তারা হয়ত দার্শনিক প্লেটোর রিপাবলিকের দশম অধ্যায় হাজির করে আপন ভাষায় বলতে পারেন- কবি বলছেন ‘সুতো’, সেটা তো ‘সুতো’ নয়, আসলেই একটা ‘রজ্জু’। সুতো আর রজ্জুর যে ফারাক সেও এক সত্য-মিথ্যার বিচার। আদর্শ রাষ্ট্র বলেই কথা! কিন্তু জগৎ উভয় প্রকারের! আমাদের বিবেচনায় আল মাহমুদ আপাদমস্তক কবি। এবং নামজাদা কবি। গদ্যে তাঁর খ্যাতি কবিতার চেয়ে অতোধিক নয়। বলা চলে খানিকটা সমানের কম। তবে যে কোন কবির আত্মজীবনী ভাষার মাধুর্যে রূপ রস আর গন্ধে ভরপুর থাকে। কবিতার মতো টান টান থাকে। গদ্যে ঘটনা কখনো প্রতীকে, আবার কখনো মিথে পরিণত হয়। আল মাহমুদের বেলায়ও তাই। এবার দুই জীবনীর সাথে যোগ হয়েছে আরেক জীবন। নাম ‘জীবন যখন বাঁক ঘোরে’। লেখক বইকে বলেছেন ‘আত্মজৈবনিক উপন্যাস’। সেটা কেমন?

আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘জীবন যখন বাঁক ঘোরে’ বস্তুত ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ আর ‘বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ’ বই দু’টির মাঝামাঝি সময়ের কাহিনী। কবির পরকালের দুই আত্মজীবনী থেকে বর্তমান বইয়ে কিছু কিছু ঘটনার ইঙ্গিত রসিক পাঠককুল পেতে পারেন। পড়ুয়া পাঠকের মুখের দিকে তাকিয়ে সেপথ মাড়ালাম না। নিশ্চয়ই সদ্‌গুণে বুঝে নেবেন তারা। ‘জীবন যখন বাঁক ঘোরে’ বইয়ের নামায়নের দিকে তাকালে দুটো প্রশ্ন সামনে আসে। প্রথমত, কবিতাই কি কবির জীবনের বাঁক ঘোরালো? দ্বিতীয়ত, নাকি কোনো নারী তাঁর জীবন ঘোরালো? কবিতা নয়, লেখককে নারীই বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছেন। সে নারী অপর কেউ নয়, আপন স্ত্রী! বলে রাখা ভালো, অর্থগতভাবে ঘোর আর ‘ঘোরে’ আলাদা ভাব বহন করে। আলাদা দুই ভাব ঘোর লাগা আর চতুষ্পার্শে ঘোরা। একদিকে যাকে কেন্দ্র জীবন ঘুরছে। আর অন্যদিকে যে জীবনকে ঘোর লাগিয়ে ঠুমরি বাজাচ্ছে! ভাবগতভাবে দুটোই কথিত উপন্যাসের উপজীব্য!

‘জীবন যখন বাঁক ঘোরে’ বইটি কবির শেষ জীবনের লেখা। এটাই সম্ভবত শেষ উপন্যাস। উপন্যাসটি আদতে কবির বিবাহিত জীবনের শুরুর কাহিনী। কাহিনীর শেষ হয় বধূবরণের ভেতর দিয়ে। বোঝা যায়, পরলোকগত স্ত্রীকে নিয়ে সৈয়দ নাদিরা মাহমুদকে মাথায় নিয়ে কবি উপন্যাসের কাহিনী রচেছেন। কবির বিবাহ পরবর্তী কয়দিনের ঘটনাই কাহিনীর সার। নায়ক স্বয়ং কবি। আর নায়িকা কবির স্ত্রী। দু’জনকে ঘিরে কাহিনীর অপরাপর ঘটনার বিস্তার ঘটেছে। উপন্যাসের শুরু এভাবে:

`আমি আমার বউকে নিয়ে তৎকালীন পরিচিত নায়রীর নৌকায় উঠলাম। মাঝি একজন ও তার একটি ছোট ছেলে নৌকার হাল ধরে চুপচাপ বসেছিল। নৌকার একদিকে যেখানে মাঝি নৌকা ঠেলতো লগির ভর দিয়ে সেখানে একটা পর্দা টানানো ছিল। আমরা ভেতরে অর্থাৎ আমি আর আমার বউ চুপচাপ বসেছিলাম।'

উপন্যাসের প্রথম ছত্রে দুটো শব্দ বাঙালি মুসলমান সমাজের চেহারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। প্রথমত ‘নায়রীর নৌকা’ আর দ্বিতীয়ত ‘পর্দা টানানো’র বিষয়টি। মূলত গেল শতাব্দীর পঞ্চাশ কিংবা ষাটের দশকের বাঙালি মুসলমানের অবগুণ্ঠিত সমাজেরই চিত্র এটা। এই চিত্র সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, কাজী ইমদাদুল হকের উপন্যাসেও দেখা যায়। সামাজিক প্রথা আর ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভর করে এমন হাল-সমাজ বিকাশমান ছিল একটা সময় নাগাদ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর আধুনিক সমাজ বিস্তারের ভেতর দিয়ে ক্রমে ক্রমে সেই রূপ ভেঙে পড়েছে। সেই ভাঙনের চেহারা বিলকুল নাই আল মাহমুদের উপন্যাসে। কেননা সমাজ কিংবা প্রথা সমান্তরাল নয়। তার যেমন বিকাশ কিংবা উত্থান আছে, তেমনি আছে পতন কিংবা সংস্কার। উপন্যাসে সমাজ বিকাশ উপজীব্য হলেও পতন বা সংস্কার বিলকুল হাপিশ! তবে একটি প্রথার বর্ণনা খুব সুন্দরভাবেই দিয়েছেন তিনি, যা আধুনিক সমাজের আচার-অনুষ্ঠানে সচরাচর দেখা মেলা ভার-

`এভাবেই চলতে চলতে আমরা একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘাটে পৌঁছলাম। সেখান থেকে একটা রিকশা নিয়ে আমরা গন্তব্যে এসে দেখি আমাদের আগমনের কথা থাকায় সবাই বধূবরণের জন্য ধান দূর্বা ইত্যাদি ডালায় সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বউয়ের মাথায় নবান্নের ধান এবং দূর্বা দিয়ে একটা চালের বাটি পা দিয়ে উল্টিয়ে গৃহে প্রবেশ অনুষ্ঠান শেষ হলো।'

‘নবান্নের ধান এবং দূর্বা দিয়ে বধূবরণ’ বাঙালি মুসলমান কৃষকের পরিবারের প্রথা। এটি কোন মুসলিম ধর্মীয় আচার নয়। প্রথাটি শুধু মুসলমান কৃষক পারিবারিক সমাজে ছিল এমন নয়, নিম্নবর্ণের হিন্দু কৃষক সমাজে এমন প্রথার চল ছিল। ‘নবান্নের ধান’ আর ‘দূর্বা’র আচার ছিল আবহমান বাংলার লোক বিশ্বাসের প্রতীক। ‘নবান্নের ধান’ মূলত ‘বীজ ধান’। এটা ভবিষ্যত বংশের বীজ। এই বিশ্বাসে ভবিষ্যত বংশেরই আকার নিহিত। আর দূর্বা হচ্ছে রোগ-বালাই নাশকের প্রতীক। বিশ্বাসের সঙ্গে বস্তুর যে আচারগত সম্পর্ক সেটাই লোকধর্ম। এই লোকধর্মের আরেকটি নমুনা বাঙালি মুসলমান কৃষক সমাজে ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এমন প্রথা ছিল কিনা কে জানে? যা মাহমুদের কথিত উপন্যাসে নেই। সেটা এমন- বিয়ের গায়ে হলুদের মেহেদী পাতা তোলার আগে পানি ভর্তি ঘটির উপর ৭ টি আমপাতা রাখা হতো। তার উপর কুপি জ্বালিয়ে অঞ্জলি দিতেন প্রার্থনাকারীরা। কিংবা কৃষক পরিবারে নতুন গরু কেনা হলে কুলোয় করে বীজ ধানসহ সাত পদের বীজের সমাহার খাওয়ানো হতো! জনসমাজে লোকাচার ধর্ম হতে বাহিত। তবে এমন প্রথার বস্তুগত ভিত্তিও অমূলক নয়। প্রথা মানা বিশ্বাস নয়। আদতে এটা উৎপাদন কাঠামোর সঙ্গে জড়িত। ভর যার লোক সংস্কৃতিতে।

উপন্যাসের কোথাও তিনি পারস্য ধর্ম হতে উদ্ভুত সমাজ কাঠামোর কথা বলছেন। আবার কোথাও তিনি হিন্দু সমাজের মিথ হাজির করছেন। সমাজের নিম্নবর্গের মধ্যে ধর্মের যে রূপান্তর ঘটেছে সেটাও এই উপন্যাসে হাজির আছে। তবে আল মাহমুদ প্রথাকে গ্রহণ করেছেন নির্বিবাদে, কোথাও ভাঙেননি। কেননা তিনি যে আর্থিক-কাঠামোগত সমাজের কাহিনী তুলে ধরেছেন, সেটা সহজেই অনুমেয়- উপন্যাসের নায়ক কিংবা নায়িকা বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিশ্বাস আঁকড়ে আছেন। কোথাও কোথাও আপন বংশের গৌরব বেখাপ্পা খাটে বটে। তবে সেটা যে কতটা বাস্তব সমাজের অধিক কাহিনী, সহজে টের পাওয়া যায়। বর্ণনায় খানিকটা অহংকারীও মনে হয়। যেমন ‘আমার বউ ঠিক গ্রামের মেয়ে নয়। সেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে।’ সম্ভ্রান্ত কারণ স্ত্রীর বংশের লোকেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। আর শিক্ষায় উর্দু ভাষায় ওয়াজ-নসিয়তও করতেন। আবার একই সঙ্গে ‘বাঙালিয়ানা’র চর্চা করতেন। বর্ণনার বৈসাদৃশ্যে ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ‘উর্দু’ কিভাবে ‘নাই’ হয়ে গেল, সেটার হদিশ উপন্যাসে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

‘কবি শুধু কবি নন, স্বাপ্নিক পুরুষ বা নারী নন; তিনি হলেন ‘কোবিদ’ মানে জ্ঞানী ব্যক্তি। কবি নারীও হতে পারে। কবি শব্দটি সম্ভবত ক্লীবলিঙ্গ।’ -অপর এক ছত্রে লেখকের কথা এটা। এখানে কোবিদ মানে জ্ঞানী ব্যক্তি ঠিক আছে। কিন্তু ‘কবি সম্ভবত ক্লীবলিঙ্গ’ সেটা সাপেক্ষ ব্যাপার। ভাষার দুনিয়ায় ক্লীব তো জড় পদার্থ বটে! তাই অর্থগত বেখাপ্পা লাগতে পারে। বরং যুৎসই হতো যদি বলা যায়, ‘কমন জেন্ডার’ বা ‘উভয়লিঙ্গ’। লিঙ্গ ভেদে যা নারী-নর, তা উভয়েই কবি। মূলত শব্দ ব্যবহারে লেখক অমিতব্যয়ী। এই ব্যয় পাঠককে সংশয় আকীর্ণ করে। সংশয় মন্দ নয়, যদি পাঠক অর্থের রূপান্তর ঘটাতে পারেন। তবে এই সংশয় নিছক লেখকেরই সংশয়। সেটা কতটা অর্থোত্তীর্ণ হতে পারে তা লেখকের কলমের জোরের উপর নির্ভর করে। লেখক কতটা পেরেছেন সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার বটে!

গোটা উপন্যাসে কথোপকথন খুব বেশি নেই। কথোপকথন শুরু হয়েছে তো, এমন মুহূর্তে নায়কের বর্ণনা শুরু হয়েছে। নায়ক শুধু কাহিনীর বর্ণনা করেন না। কখনো ইতিহাসের দিকে মুখ ফেরান, কখনো অপর সাহিত্যের কুঠুরিতে হানা দেন, কখনো স্থানীয় সংস্কৃতির বর্ণনা করেন। এমন আরও ঘটনার ঘনঘটা আছে। কখনো কখনো এই সব ঘটনায় নায়ক কিংবা অপরাপর চরিত্রের অংশহীনতা বয়ানকে এক ধরনের সমাজ দীক্ষামূলক প্রবন্ধেই পর্যবসিত হয়। কাঠামোগত উপন্যাসের যে গঠন তার খানিকটা খামতি ঘটে। এই উপন্যাসের শক্তির দিক একজন ‘পুরুষ’ কবি নারীর রূপ বর্ণনা করে যাচ্ছেন। তার সঙ্গীন রূপ, থরথর সঙ্গম, চাওয়া-পাওয়া, মেলামেশা শব্দের ঝংকারে দ্যুতি মেলে আছে। লেখকের বয়ানে এটা কবিত্বের শক্তি। এই শক্তি উপন্যাসে এক অমিয় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু নায়ক-নায়িকার কথোপকথনে চরিত্র রূপায়নে নারী চরিত্রটি কিভাবে পুরুষ চরিত্রকে দেখছেন তার বয়ান পরিস্ফূট নয়। ফলে মনে হতে পারে, নারী চরিত্রটি পুরুষ চরিত্রের বাসনাই আকর। আবার পুরুষ বয়ানে কখনো কখনো মনে হতে পারে- ভাবগতভাবে নারীই কবি। কবির সকল অর্থহীনতার রূপ নারীর উপর পড়েছে। এও এক কাব্যিক লীলাখেলা। কবির জগত মায়াময়। অফুরান প্রেম তাকে জাগিয়ে রাখছে। যেন মায়াই বন্ধন। মায়াই সংসার। মায়ার অপর নাম কবিতা। কিংবা নারী!

লেখক গুণ-গাইছেন নারীর। নুন খাইছেন নারী রসনার। বেশ ভাল। মিষ্টি। কিন্তু কাহিনীর একপ্রস্থে হঠাৎ হাজির হন বাংলা ভাষার আরেক জাতকবি শামসুর রাহমান। লেখকের বয়ানে:

‘এটা মনে রাখতে হবে নুনই হলো জগতের সকল রুচির রূদ্ধদ্বার খোলার প্রয়াস। ডিম খেলে নুনের ছিটা লাগবেই। আমার এক কবিবন্ধু স্বনামধন্য কবি শামসুর রাহমান ডিমের পোচ খেতে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু তার অশ্বব্যাধি থাকায় তাকে তার প্রিয় খাদ্যাভ্যাসটি ত্যাগ করতে হয়েছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, এই প্রিয় খাদ্যটির কথা সর্বদা মনে পড়ে কিন্তু পরিণামের ভয়াবহতার কথা ভেবে তিনি ত্রস্ত হয়ে এই খাদ্য ত্যাগ করেছিলেন।’

এটা বলার পর লেখক আবার বলছেন ‘এসব বিষয়ে ফেনিয়ে’ রচনা বাড়ানোর অভিলাষ নেই। কথাগুলো ফেনানো হয়নি মোটেও, উপন্যাসের দ্রব্যগুণে এই জায়গায় নুন একটু বেশিই হয়েছিল। তাই পাঠে খানিকটা তেতো লেগেছে। এই যাহ!
‘জীবন যখন বাঁক ঘোরে’ উপন্যাসের সবচে ভাল দিক হলো- লেখক নারী চরিত্রটির প্রতি খুব বেশি সংবেদনশীল। বয়ানে বয়ানে লেখকের উপস্থিতি কখনো প্রেমিক, কখনো স্বামী, কখনো অভিভাবক। তবে সকল বাসনাই একসূত্রে মিশে মিলনকোঠায়। কবি যেন একক নারীতেই মুগ্ধ। এক নারীকেই অতুলনীয় করে রেখেছেন। কিন্তু হালকা খটকা লাগে অন্যখানে- জীবন আর বাস্তব সংসার একাকারে থাকে। সেখানে সুখ-দুঃখ যেমন থাকে, আবার আনন্দ-বেদনা থাকে, প্রাচুর্য যেমন থাকে ঠিক তেমনি অভাব-অভিযোগ থাকে। এই উপন্যাস সুখ আর সুখ, আনন্দ আর আনন্দ। মানব জীবন এমন নিস্তরঙ্গ নয়। তার যেমন বিকাশ আছে, ঠিক তেমনি রূদ্ধদ্বারও আছে। তদুপরি মানুষের আত্মজৈবনিক সময় এমন সরলরেখায় চলে না। বস্তুত বেদনা না থাকলে আনন্দও তো নাই। আর দুঃখ না থাকলে সুখও ডুমুরের ফুল। তবে সুখ যে কেমন উপভোগ্য তা এই পুস্তিকার শ্রেষ্ঠরূপ!

আত্মজৈবনিক এই উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটেছে নতুন সন্তানের আগমন দিয়ে। পিতা হওয়ার যে আকুতি আর আনন্দ গুঞ্জরিত হয়েছে, যেন এক ভবিষ্যত চৈতন্যের ইশারা। লেখার শুরুতে যে বাস্তব ‘নবান্নের ধান’ দিয়ে বধূবরণ করা হয়েছিল, তদ্রুপ সন্তানের আগমন দিয়ে উপন্যাসটি পরিসমাপ্তি ঘটেছে। শেষের পাতায় দুটি বাক্যই গুঞ্জরিত হয়েছে: ‘আমি এসেছি। আমি সুন্দর।’ শুরু আর সমাপ্তি মিলিয়ে উপন্যাসটি মন্দ নয়। সুন্দর। তবে মাঝে মাঝে কাহিনীর বয়ানে কোথা থেকে কোথা যাচ্ছেন, সেটা লেখকেরই স্মৃতির টানাপোড়েন বৈকি। বাংলাভাষাকে কবি আল মাহমুদ অনেক সৃষ্টিশীল উমাদা লেখা উপহার দিয়েছেন- এটা চিরন্তন বটেই! তবে এও তো সত্য- পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলো ক্রমশ কমতে থাকে। কিছুটা ভাটার টান। তারপরও বস্তুগতভাবে মানুষ স্মৃতির আয়না থেকে বেরুতে পারে না। কখনো কখনো মতি হারানো আবেগ কিংবা মতি লব্ধ প্রেম অপরূপ সময়ে সদা জাগ্রতময়। শেষ কথা: লেখক-কবির প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা।

সুলুক
১.           কবির মুখ: আল মাহমুদ, প্রকাশক: আদর্শ, ঢাকা; ২০১৫
২.            জীবন যখন বাঁক ঘোরে: আল মাহমুদ, প্রকাশক: সরলরেখা, ঢাকা; ২০১৮
৩.           The Republic: Plato, Penguin classics, London, ১৯৯৫
৪.            The anti-Aesthetic, Edited by Hal Foster, Bay press, Washington, ১৯৮৩




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়