ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চার বন্ধুই একসঙ্গে চলে গেল

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চার বন্ধুই একসঙ্গে চলে গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক : চার বন্ধু মঞ্জুর, আনোয়ার, হীরা ও নাসির। পুরান ঢাকার চকবাজারে ব্যবসা করতেন তারা।

চকবাজারে পারিবারিক ওষুধের ব্যবসা ছিল মঞ্জুর। চুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশে হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনের উল্টো দিকে ছিল তার ওষুধের দোকান ‘হায়দার মেডিকো’। চকবাজারেই ইমিটেশন গহনার ব্যবসা ছিল বন্ধু হীরার, আনোয়ারের ছিল ব্যাগের আর নাসিরের ছিল প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা।

প্রতিদিন কাজ শেষে হায়দার মেডিকোতে এসে বসতেন তারা। একসঙ্গে কিছু সময় গল্প-গুজব করে নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতেন। কিন্তু বুধবার রাতে আর ঘরে ফেলা হলো না নোয়াখালীর চার বন্ধুর। একসঙ্গেই তারা বিদায় নিলেন চিরদিনের মতো।

চকবাজারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের গল্প আর স্বপ্ন। চিহ্ন হিসেবে রেখে গেছে পোড়া চারটি মাথার খুলি।

মঞ্জুর ভাই লিটন সাংবাদিকদের জানান, বিকেলে ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয়। প্রতি রাতে চার বন্ধু মিলে ফার্মেসিতে আড্ডা দিত। বুধবারও তারা আড্ডায় মিলিত হয়। আগুন লাগার পর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রাত ৩টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে হায়দার মেডিকোর ভেতরে পাওয়া যায় পোড়া চারটি মাথার খুলি। যেহেতু তারা প্রতি রাতে এখানে আড্ডা দিত, সেহেতু চারটি খুলিই বলে দিচ্ছে, এটা তাদের।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে লিটন আরো বলেন, তাদের ফার্মেসির সামনে একটি গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এ সময় আতঙ্কিত লোকজন যখন ছুটোছুটি শুরু করে তখন বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে মঞ্জু ও তার তিন বন্ধু দোকানের ভেতর ঢুকে শাটার লাগিয়ে দেয়। এরপর যখন আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যায় তখন আর তারা সেখান থেকে বের হতে পারেনি।

পুরান ঢাকার চকবাজারে বুধবার দিবাগত রাতে চার তলা একটি বাড়িসহ কয়েকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

স্থানীয়রা জানায়, চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে প্রয়াত ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চার তলা ভবনে প্রথমে আগুন লাগে। তারপর তা পাশের রাজমনি নামে রেস্তোরাঁ এবং সরু রাস্তার উল্টো দিকের তিনটি ভবনে ছড়ায়। যে ভবনে প্রথম আগুন লাগে, তার নিচতলায় দোকান রয়েছে, দোতলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রসাধন-প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম। উপরের দুটি তলায় রয়েছে বাসা।

স্থানীয়রা জানান, আগুন যেভাবেই লাগুক, দোতলার গুদামে দাহ্য পদার্থ থাকায় রাস্তার দুই দিকের ভবনে তা ছড়িয়েছে।

সরু ওই সড়কে ভবনগুলো ঘেঁষাঘেষি করে তৈরি করায় আগুন নেভানোর কাজ করতে বেগ পোহাতে হয় অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীদের। পাশাপাশি ওই এলাকার দোকান ও গুদামে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মামুন খান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়