ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ভালো ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। গবেষণা বলছে যে, পর্যাপ্ত ঘুম জীবনের আয়ু ও সুখ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* পর্যাপ্ত ঘুম আসলেই সাহায্য করে?
পর্যাপ্ত ঘুম শুধু নেতিবাচক পরিণতি এড়াতেই সাহায্য করে না। বিজ্ঞান প্রতিরাতে সুপারিশকৃত আট ঘণ্টা ঘুমানোর প্রচুর উপকারিতাও আবিষ্কার করেছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ধারণা দিচ্ছে যে, এটি মুখের অভিব্যক্তি পড়ার সামর্থ্য বৃদ্ধি করে, ইমিউন সিস্টেমের ফাংশন উন্নত করে, মিষ্টান্নের প্রতি আকাঙ্ক্ষা কমায়, ক্রনিক ব্যথা উপশম করে এবং প্রদাহ এড়াতে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর আলোকপাত করে এটা বলা যায় যে, প্রতিরাতে পর্যাপ্ত ঘুম একটা মানুষের শরীরে স্বাস্থ্যবর্ধক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

* পর্যাপ্ত ঘুমের সেরা উপায় কি?
একটি বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট হলো: প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এক তৃতীয়াংশ মানুষই নিয়মিত এই পরিমাণে ঘুমায় না, আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুসারে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব পরেরদিন শুধু ক্লান্তই করে না, সময়ের পরিক্রমায় ঘুমের ঘাটতি বিষণ্নতা, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, অ্যালঝেইমার’স রোগ ও ক্যানসারের কারণ হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়াকার তার ‘হোয়াই উই স্লিপ’ গ্রন্থে লিখেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের বড় বড় জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের একটি হলো ঘুমের ঘাটতি। বিজ্ঞানীরা চিকিৎসকদের অনুরোধ করতে শুরু করেছে যে তারা যেন ঘুম প্রেসক্রাইব করেন।’ সফল প্রেসক্রিপশনের জন্য ওয়াকারের শীর্ষ পরামর্শ হলো কোনো রুটিন মেনে চলা। শরীর প্রাকৃতিকভাবে নিয়মিত ঘুমানো-জেগে ওঠার উপকারিতা পেয়ে থাকে এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া অন্যান্য উপায়ে সময় নষ্ট করা থেকে আপনাকে বিরত রাখে। তিনি সম্ভব হলে সেসব ওষুধও এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দিচ্ছেন যা ঘুমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে, যেমন- কিছু হার্ট, রক্তচাপ ও হাঁপানির ওষুধ এবং ঠান্ডা, কাশি ও অ্যালার্জির প্রতিষেধক। এসব ওষুধের অনেকগুলোর বিকল্প রয়েছে, তাই আপনার ঘুমের সমস্যা হলে ওষুধ পরিবর্তন করতে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* ভ্রমণে থাকলে কিভাবে ভালোভাবে ঘুমাব?
যদি আপনি হোটেল রুমে শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন, তাহলে আপনার সম্ভবত ‘নাইট-ওয়াচ ব্রেইনের’ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সেরিব্রাল ইমেজিংয়ে প্রকাশ পেয়েছে যে, ডলফিন, পায়রা ও অন্যান্য প্রাণীর মতো অপরিচিত পরিবেশে মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক অংশ অন্য অংশের তুলনায় কম বিশ্রাম নেয়। এই অভিযোজন আমাদের পূর্বপুরুষদের (যাদের ওপর বন্য জীবজন্তুর আক্রমণের আশঙ্কা ছিল) জন্য উপকারী হলেও বর্তমানে ভ্রমণকারীদের জন্য এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি আপনি কোথাও কিছুদিন ধরে থাকতে চান, তাহলে একই হোটেলে অবস্থান করে ‘নাইট-ওয়াচ ব্রেইন’ হ্রাস করতে পারেন এবং যেখানেই যান না কেন একই চেইনের একই রুম বুকিংও আপনার সহায়ক হতে পারে।

* কেন স্বপ্ন দেখি না?
বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে মানুষ শুধুমাত্র আরইএম বা র‍্যাপিড আই মুভমেন্টের সময় (ঘুম চক্রের শেষ পর্যায়) স্বপ্ন দেখেন। এখন আমরা জানি যে, ঘুম চক্রের প্রাথমিক পর্যায়েও মানুষ ছোটখাট স্বপ্ন দেখতে পারে, কিন্তু র‍্যাপিড আই মুভমেন্টের সময় মানুষ সবচেয়ে বিস্তৃত, সক্রিয় ও আবেগী স্বপ্ন দেখে। ঘুমের ঘাটতি যেমন বিপজ্জনক, তেমনি র‍্যাপিড আই মুভমেন্টের ঘাটতিও সমস্যার কারণ হতে পারে, দাবি করছে অ্যানালস অব দ্য নিউ ইয়র্ক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসে প্রকাশিত ২০১৭ সালের একটি রিভিউ। স্বপ্ন দেখে না এমন লোকদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে না থাকার প্রবণতা বেশি- তাদের মেজাজ ঘনঘন বিগড়ে যেতে পারে অথবা তাদের মেজাজ হতে পারে অত্যধিক খিটখিটে। এছাড়া তাদের ব্যথা সংবেদনশীলতা, পারকিনসন’স রোগ, উদ্বেগ, স্মৃতিভ্রংশতা ও ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রবণতাও বেশি। হাস্যকরভাবে, স্বপ্ন আপনার জাগ্রত অবস্থার বাস্তবতার সেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যালকোহল পানের কারণে স্বপ্ন বিঘ্নিত হয়- অ্যালকোহল দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করলেও র‍্যাপিড আই মুভেমেন্ট ব্যাহত করে। বেনজোডায়াজেপাইনস (ঘুমের বড়ি বা উদ্বেগ-বিরোধী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়) র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা স্বপ্নকে ব্যাপকভাবে দমিয়ে রাখে, রিভিউ অনুসারে। অন্য একটি কালপ্রিট হলো অ্যালার্ম ক্লক: এটি প্রায়সময় প্রয়োজনীয় হলেও ঘুম চক্র ব্যাহত হওয়া প্রতিরোধ করতে যথাসম্ভব প্রাকৃতিকভাবে ঘুম থেকে জেগে ওঠার চেষ্টা করুন।

* স্থায়ীভাবে ক্রনিক ইনসমনিয়া দূর করতে পারি?
সময়মত ঘুম যেতে না পারার এক গাদা কারণ রয়েছে। কিন্তু প্রায়সময় ইনসমনিয়া হতে পারে মন্দ অভ্যাস, ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অসংগত চিন্তার কারণ- এসবকিছু কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) দিয়ে দমন করা যায়। ভ্রিজে ইনিভার্সিটেইট আমস্টারডামের সাইকোলজিস্ট তানজা ভ্যান দের জির্দে বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, লোকজন প্রায়শ মনে করে যে একরাত ঘুমাতে না পারলে ভালোভাবে কাজ করতে পারবে না অথবা মস্তিষ্কে এমন কোনো কেমিক্যাল সমস্যার কারণে ঘুম হচ্ছে না যা নিরাময় করা যায় না।’ ইনসমনিয়া বা ঘুমের ঘাটতির জন্য সিবিটি বা সিবিটি-আই আপনাকে এ সমস্যার মূল কারণ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। সমস্যার কারণের ওপর ভিত্তি করে আপনার রিলাক্সেশন ট্রেনিং বা শিথিলায়ন, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও অন্যান্য উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু ইনসমনিয়া নিরাময়ের জন্য সিবিটি-আই খুব সফল এবং পিলের মতো ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তাই ক্রনিক ঘুমের সমস্যার লোকদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা হিসেবে এটি সুপারিশকৃত।

* পোষা প্রাণীর জন্য কিভাবে ঘুমের ব্যবস্থা করা উচিৎ?
অনেক লোক পোষা প্রাণীকে নিজের বিছানায় পাশে রেখে ঘুমাতে পছন্দ করেন। অধিকাংশ পোষা প্রাণীই মালিকের ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু সময় আশপাশে খেলা করে বা হাঁটে। কিন্তু তাদের এ মুভমেন্ট মালিকের ঘুমকে তেমন একটা ব্যাহত করে না। কিন্তু যদি আপনি বিছানায় পোষা প্রাণী বা কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে সহাবস্থান পছন্দ না করেন কিংবা ঘুমকে একটুও বিঘ্নিত করতে না চান, তাহলে তাদের জন্য মেঝেতে কোনো কম্বল বিছাতে পারেন কিংবা পেট বেডের ব্যবস্থা করতে পারেন।

* অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে কিভাবে জানবো?
একটি সর্বাধিক কমন স্লিপ ডিসঅর্ডার হচ্ছে, অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং এটি মারাত্মকও বটে। অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে ঘুমের সময় গলার পেছনের মাংসপেশি অত্যধিক শিথিল হয়ে যায় ও শ্বাসকে ব্লক করে। এর ফলে রক্ত-অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এর চিকিৎসা করা না হলে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমে টান পড়তে পারে এবং সময় পরিক্রমায় হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ রোগের ভুক্তভোগীরা পুনরায় শ্বাসপথ খুলতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠে, কিন্তু তারা সকালে এ কথা ভুলে যায়। নাকডাকা, গলায় উচ্চারিত শব্দ ও মুখ হা করে শ্বাসকার্য চালানোর মতো লক্ষণ দেখে তাদের স্বজনরা প্রায়সময় এ কন্ডিশন শনাক্ত করে থাকে, বলেন নিউ ইয়র্কের শ্বাসপ্রশ্বাসভিত্তিক ঘুমের ব্যাধির বিশেষজ্ঞ মাইকেল জেলব। যেসব লোক একাকী ঘুমান তারা নাকডাকা মনিটর করতে স্নোরল্যাব নামক মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। ডা. জেলব বলেন, ‘সতর্ককারী লক্ষণের মধ্যে বিমর্ষ জেগে ওঠা, মেজাজ সমস্যা, মনোযোগ দিতে সমস্যা, দিনে ঘুমঘুম ভাব ও স্মৃতি সমস্যা উল্লেখযোগ্য।’ ঘুমের ঘাটতির উপসর্গগুলো শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে। নিশ্চিত হতে চাইলে হোম স্লিপ টেস্ট অথবা পলিসমনোগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, বলেন ডা. জেব।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

আরো পড়ুন :
* ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর (শেষ পর্ব)









 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়