ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মহাসাগরের ১৪ রহস্য (প্রথম পর্ব)

স্বপ্নীল মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৬, ২৬ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মহাসাগরের ১৪ রহস্য (প্রথম পর্ব)

স্বপ্নীল মাহফুজ : রহস্য কোথায় নেই বলুন। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর স্থলভাগ কিংবা জলভাগ সবখানেই রহস্য ছড়িয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা কোনো রহস্যের সন্ধান পেলেই তা উন্মোচনের চেষ্টা করেন। কিন্তু শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও অনেক রহস্য উন্মোচিত হয় না। পরিসংখ্যান বলছে যে, আমরা মহাশূন্য সম্পর্কে যতটা জানি তার তুলনায় অনেক কম জানি মহাসাগর সম্পর্কে। আসুন এ প্রতিবেদনে মহাসাগরের কিছু রহস্য সম্পর্কে জেনে নিই।

* মহাসাগরের তলদেশ
পৃথিবী পৃষ্ঠের ৭০ শতাংশই মহাসাগরের নিচে এবং মহাসাগরের তলদেশের ৯৫ শতাংশই এখনো পর্যন্ত মানুষের চোখে অদেখা। পরিসংখ্যান মতে, আমরা মহাসাগরের তলদেশ সম্পর্কে যতটুকু জানি, তার চেয়ে বেশি জানি মঙ্গলের পৃষ্ঠ সম্পর্কে। বিজ্ঞানীরা পুরো মহাদেশের মানচিত্র করতে পেরেছে, কিন্তু এটির রেজলুশন এতই কম যে মহাসাগরের তলদেশের রহস্য ভেদ করা সম্ভব নয়। আশা করা হচ্ছে যে, সিবেড ২০৩০ এর মতো চলমান গবেষণা মহাসাগরের তলদেশে আসলেই কি আছে তা সম্পর্কে আমাদেরকে আরো ভালোভাবে জানাতে পারবে।

* দুধময় সাগর
শত শত বছর ধরে নাবিকেরা বলে আসছেন যে তারা যতদূর চোখ যায় সাগরে দুধের আভা দেখেছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো এর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, প্রকৃতপক্ষে ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত এ ঘটনা সত্য কিনা সে সম্পর্কেও তারা নিশ্চিত ছিলেন না। ২০০৬ সালে গবেষকরা দুধময় সাগরের একটি স্যাটেলাইট ইমেজ তুলতে সক্ষম হন এবং কিছু বছর পর আবিষ্কৃত হয় যে, সাগরকে দুধময় লাগার কারণ হলো আলো উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার আভা। এসব আভায় প্রলুব্ধ হয়ে মাছেরা ব্যাকটেরিয়াগুলো খেয়ে ফেলে এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো মাছের পেটে বসতি গড়ে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এটা নিশ্চিত নন যে কিভাবে বা কেন এত বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া একত্রিত হয়, যা মহাশূন্য থেকে দেখা যায়। এসব ব্যাকটেরিয়ার আভা নিরবচ্ছিন্ন থাকে। এরা ডাইনোফ্লাজিলেট নামক অণুজীবের মতো স্বল্পস্থায়ী আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করে না।

* পার্পল গোলক
২০১৬ সালে ওশান এক্সপ্লোরেশন ট্রাস্টের (সমুদ্রবিজ্ঞানী ও টাইটানিকের আবিষ্কারক রবার্ট বালার্ড দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) গবেষকরা ক্যালিফোর্নিয়া অংশের মহাসাগরের তলদেশে একটি অদ্ভুত পার্পল গোলক দেখেন। এটা কি হতে পারে? বিজ্ঞানীরা মজা করে বলেছেন যে এটি মাকড়সার ডিমের থলে হতে পারে অথবা ছোট মম্মা অক্টোপাস হতে পারে এবং এটিকে একটি কাঁকড়ার কবল থেকে উদ্ধারের পূর্বে নামকরণ করা হয়েছিল ব্লবাস পারপিলিস। এ পার্পল গোলক আসলে কি তা জানতে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে যে এটি শামুকের একটি নতুন প্রজাতি হতে পারে।

* বাল্টিক সাগরের ডিম্বাকৃতি বস্তু
মহাসাগরের তলদেশে কি কোনো অ্যালিয়েন স্পেসশিপ আছে? ২০১১ সালে সমুদ্র বিচরণকারীরা বাল্টিক সাগরের তলদেশে অদ্ভুত দাগযুক্ত একটি ডিম্বাকৃতির বস্তু দেখতে পান। একজন গ্রাফিক আর্টিস্ট এ বস্তুটির কাল্পনিক ছবি তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু এ বস্তুটির প্রকৃত উপস্থাপনা হলো একটি গ্রেনি সোনার ইমেজ। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে এ বস্তুটি হলো গ্লেসিয়াল ডিপোজিট অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক গঠন। এ বস্তুটির উৎপত্তির আসল ইতিহাস জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কে জানে? হয়তো এটাই হতে পারে অ্যালিয়েনের কোনো স্পেসশিপ!

* জায়ান্ট স্কুইড
এ বিশাল প্রাণীটি হতে পারে মিথিক্যাল ক্রাকেন বা পৌরাণিক সমুদ্র-দানব। এ দানবের ধারণা পাবেন পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান নামক মুভি এবং জুলেস ভার্নের ২০,০০০ লিগস আন্ডার দ্য সি নামক বইয়ে। মনে করা হয় যে জায়ান্ট স্কুইড দ্বারা জাহাজ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু সমুদ্র তলদেশের এ রহস্যময় প্রাণীটি সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি। ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত এটির ছবি তোলা সম্ভব হয়নি এবং এর কিছু বছর পর সমুদ্র পৃষ্ঠে এটি ধৃত হলে মুভিতে এটিকে ব্যবহার করা হয়। ২০১২ সালের পূর্ব পর্যন্ত পানির নিচে ভিডিও ধারণ সুবিধাজনক ছিল না। বিজ্ঞানীরা মহাসাগরের গভীর তলদেশের এ দানবের জীবন সম্পর্কে ভার্চুয়ালি কিছুই জানতে পারেননি, এমনকি এটি কত বড় হয় তাও। কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করছেন যে তারা ৬৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এদের আরেক প্রজাতি কলোসাস স্কুইড ওজনে তাদের চেয়ে বড় হতে পারে, কিন্তু সম্ভবত দৈর্ঘ্যে নয়। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।

* সমুদ্র তলদেশের ভূপৃষ্ঠ
আমরা মহাসাগরের ভূখণ্ড সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না, কিন্তু আমরা যা দেখেছি তা মনে বিস্ময়ের জোয়ার এনেছে, কারণ মহাসাগরের তলদেশের ভূখণ্ডের সঙ্গে জলে অনাবৃত ভূখণ্ডের সাদৃশ্যতা লক্ষ্য করা গেছে। ব্রাইন পুলস হলো মহাসাগরের তলদেশের এমন স্থান, যেখানে লবণাক্ত পানির ঘনত্ব চারপাশের মহাসাগরের চেয়ে বেশি এবং এটা দেখতে হ্রদের মতো। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটি ডেনমার্ক প্রণালিতে পানির নিচে, যেখানে ১১,৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে মহাসাগরের তলদেশে ঠান্ডা পানির পতন হয়, অন্যদিকে পানিতে অনাবৃত ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটির উচ্চতা মাত্র ৩,২১২ ফুট। পানির নিচেও আগ্নেয়গিরি সক্রিয় হয়- এমনকি সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরিটি সম্প্রতি সক্রিয় হয়, যা বিজ্ঞানীদের প্রায় অগোচরে চলে যাচ্ছিল। বিজ্ঞানীরা এসবকিছুর অস্তিত্ব জানলেও এগুলোর প্রকৃত মেকানিজম সম্পর্কে অবগত নন। মহাসাগরের এসব রহস্য উন্মোচনের জন্য তাদের আন্তরিক গবেষণা চলমান রয়েছে।

* নীল তিমি
সাগরের এসব রহস্যময় দানব হলো পৃথিবীতে বসবাসকারী সবচেয়ে বড় প্রাণী। কিন্তু তিমি বাণিজ্যের জন্য তাদেরকে শিকার করা হয় বলে তারা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এছাড়া তাদের প্রজননও হয় দেরিতে। এসব কারণে গবেষণা করার মতো পর্যাপ্ত নীল তিমি নেই। এর ফলে এসব বিস্ময়কর প্রাণী সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে। তারা কতদিন বাঁচে, কখন যৌনক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত হয় অথবা তাদের প্রজননের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য কি তা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়নি। এ প্রাণীর লজ্জাশীলতা তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা আরো কঠিন করে তুলেছে। ২০১৭ সালে শ্রীলংকা অংশের মহাসাগর থেকে ক্যামেরায় ধারণকৃত নীল তিমির একটি ভিডিও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারো কারো মত হলো, এ ভিডিওটি নীল তিমির প্রজনন সংক্রান্ত, আবার কেউ কেউ বলছেন যে এমনটা নয়। গবেষকরা আরো কিছু জানতে এ গ্রীষ্মে শ্রীলংকায় প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করেছেন।

পড়ুন : 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়