ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গুগল ডুডলে ওমর খৈয়াম

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুগল ডুডলে ওমর খৈয়াম

নিজস্ব প্রতিবেদক : সার্চ ইঞ্জিন গুগলের প্রচ্ছদে যে মানুষটির ছবি ঝুলছে তিনি ওমর খৈয়াম। বিশ্বখ্যাত গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক এবং একই সঙ্গে একজন কবি।

আজ শনিবার ৯৭১তম জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে গুগল ডুডল।

ওমর খৈয়ামের জন্ম ১০৪৮ সালের ১৮ মে, ইরানের নিশাপুর শহরে। যুবক বয়সে তিনি সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানেই লেখাপড়া করেন। এরপর বুখারায় নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ ‘Treatise on Demonstration of Problems of Algebra’ গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়।

উইকিপিডিয়া অনুসারে, ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে তার বিখ্যাত গণিতগ্রন্থ ‘মাকালাত ফি আল জাবর আল মুকাবিলা’ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে তিনি ঘাত হিসাবে সমীকরণের শ্রেণিকরণ করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করেন। এই পুস্তকে তিনি কৌণিক সেকশনের বিভিন্ন ছেদকের সাহায্যে নানারকম ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধান করেন। অর্থাৎ জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বাস্তব মূল আছে এমন ত্রিঘাত সমীকরণ প্রথম সমাধান করেন। তিনি বর্তমানে প্যাসকেলের ত্রিভুজ নামে পরিচিত দ্বিপদী সহগের ত্রিভুজাকার এরেও লিখেছিলেন।

ইসলামী সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞানের সোনালী যুগে তথা এখন থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে বীজগণিতের যেসব উপপাদ্য এবং জ্যোতির্বিদ্যার তত্ত্ব ওমর খৈয়াম দিয়ে গেছেন সেগুলো এখনও গণিতবিদ এবং মহাকাশ গবেষক বা জ্যোতির্বিদদের গবেষণায় যথাযথ সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি পরাবৃত্ত ও বৃত্তের ছেদকের সাহায্যে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন। এ ছাড়া তিনি দ্বিপদী রাশিমালার বিস্তার করেন। ওমরের আর একটি বড় অবদান হলো ইউক্লিডের সমান্তরাল স্বীকার্যের সমালোচনা যা পরবর্তী সময়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা করে। ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে।

ওমর খৈয়াম জ্যোতির্বিজ্ঞনী হিসেবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। সেলজুকের বাদশাহ মালিক শাহ ১০৭৩ সালে আরো কয়েকজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে ওমরকেও আমন্ত্রণ জানান একটি মানমিন্দর নির্মাণের জন্য। ওমর তখন অত্যন্ত সফলভাবে (দশমিকের পর ছয় ঘর পর্যন্ত) সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। তার হিসাবে এটি ছিল ৩৬৫.২৪২১৯৮৫৮১৫৬ দিন। এই ক্যালেন্ডারের হিসাবে প্রতি ৫,৫০০ বছরে এক ঘণ্টার গড়মিল হয়ে থাকে। আমরা যে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করি তাতে প্রতি ৩,৩০০ বছরে একদিন গোলমাল হয়ে থাকে। কীভাবে পারস্য পঞ্জিকা সংশোধন করতে হবে তাও তিনি হিসাব করেন। ১০৭৯ সালের ১৫ মার্চ সুলতান জালাল আল-‌দিন মালিক শাহ সালজুক ওমরের সংশোধিত বর্ষপঞ্জী চালু করেন। ওমর একটি তারাচিত্র বা খ‌ণ্ড চিত্রও তৈরি করেন তবে সেটি এখন আর পাওয়া যায় না।

তবে ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমর খৈয়াম একজন কবি হিসাবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। এর কারণ ইংরেজিতে তার কবিতা বা রুবাই এর অনুবাদ এবং প্রচারের কারণে। ইংরেজ মনিষী টমাস হাইড হলেন প্রথম অ-পারস্য ব্যক্তি যিনি প্রথম ওমর কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেছেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন। তার এই অনুবাদ গ্রন্থ দশ বার মুদ্রিত হয়েছে এবং ওমর খৈয়াম সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। তিনি ১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর মারা যান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৯/হাসান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়