ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নতুন আমদানি নীতি

খাদ্য আমদানিতে তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৮ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খাদ্য আমদানিতে তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক

কেএমএ হাসনাত : পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা ছাড়া এখন থেকে মানুষসহ হাঁস-মুরগি, মাছ ও পশুর খাদ্য আমদানি করা যাবে না। এসব পণ্য আমদানির আগে তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পাওয়া ‘আমদানি নীতি ২০১৮-২০২১’ এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা ছাড়া এসব পণ্য বাংলাদেশে কোনো অবস্থায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। এসব পণ্যে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি তেজষ্ক্রিয়তা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে নিজ খরচে তা আমদানিকৃত দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এ ছাড়াও, সরাসরি খাওয়া যায় বা পান করা যায় এমন পণ্য আমদানিতে কোনো বয়সের মানুষের খাওয়ার উপযোগী এবং তা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়, এমন ঘোষণা থাকতে হবে।

তবে মসলা, ওষুধ, কন্সেন্ট্রেটেড এসেন্স, সিগারেট, তামাক ও বিয়ারজাতীয় পণ্য আমদানিতে তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে হুইস্কিসহ মদ জাতীয় অন্যান্য পানীয় আমদানিতেও তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা এবং পণ্যের মোড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ উল্লেখ থাকার প্রয়োজন হবে না। আমদানি নীতিতে মানুষের খাদ্য হিসেবে ‘জেনেটিক্যালি মোডিফাইড অর্গানিজম’ (জিএমও) ও ‘লিভিং মোডিফাইড অর্গানিজম’ (এলএমও) আমদানির ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ বায়ো-সেইফটি গাইডলাইন্স’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

সদ্য অনুমোদিত আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, যেকোনো দেশে উৎপাদিত দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেসব সবজি, বীজ ও শস্য সরাসরি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে সেগুলো আমদানির ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য হবে। আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্যে নির্ধারিত মাত্রার অধিক তেজষ্ক্রিয়তা পাওয়া গেলে কিংবা ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট’ (বিএসটিআই) নির্ধারিত খাদ্যমানের চেয়ে নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য আমদানি করা হলে তা আমদানিকারকের নিজ খরচে রপ্তানি উৎস দেশে কিংবা তৃতীয় কোনো দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। খাদ্যদ্রব্য আমদানির ঋণপত্রে এ সংক্রান্ত শর্ত সংযোজন করতে হবে। ত্রাণসামগ্রী হিসেবে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করা হলে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর সেসব খাদ্যদ্রব্য খালাস করা হবে।

এতে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য বন্দরে পৌঁছার পর ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন’ কর্তৃক তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষার পর সেগুলো ছাড় করা হবে। একইসঙ্গে আমদানিকৃত দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য যে মেলামাইনমুক্ত এবং যে গাভী থেকে দুধ আহরণ করা হয়েছে সেই গাভীকে ‘এস্ট্রোজেনিক হরমোনস’ ও ‘হরমোন গ্রোথ প্রোমোটেন্টস ট্রিটমেন্ট’ করা হয়নি এবং ভারী ধাতুর মাত্রা ‘কোডেক্স স্ট্যান্ডার্ড’ অনুযায়ী এসব বিষয়ে রপ্তানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সনদপত্র লাগবে।

আমদানি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সার্কভুক্ত দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো থেকে চাল, গম, অন্যান্য খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষা শিথিলযোগ্য। তবে এ ক্ষেত্রে আমদানিকৃত এসব খাদ্যশস্য, খাদ্যদ্রব্যের মান ও গুণাগুণ মানুষের উপযোগী এবং সব ধরনের ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত- এই মর্মে রপ্তানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সনদপত্র লাগবে।

এ ছাড়া মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদিত এবং মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে ‘পাম অয়েল’ ও ‘পাম ওলিন’ আমদানিতে কোনো তেজষ্ক্রিয়তা পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। তবে ‘আরবিডি পাম স্টিয়ারিন’ এর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন’ মাঝে মধ্যে বাজার থেকে এসব পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবে এবং এ ক্ষেত্রে ক্ষতিকর মাত্রার তেজষ্ক্রিয়তা পাওয়া গেলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হবে।

বলা হয়েছে, আমদানিযোগ্য যেসব খাদ্যদ্রব্র্য সরাসরি খাওয়া বা পান করা যায় বা প্রক্রিয়াজাত হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেসব খাদ্যদ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে সেগুলো কোনো বয়সের খাওয়ার উপযোগী তা উল্লেখসহ ‘মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়’, ‘ক্ষতিকর কোনো দ্রব্য মিশ্রিত নেই’ এবং ‘সর্ব প্রকার জীবাণুমুক্ত’ মর্মে রপ্তানিকারক দেশের সনদপত্র লাগবে।

হাঁস-মুরগি, মাছ ও পশুর খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয়তার বিষয়ে রপ্তানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনসহ এসব খাদ্যদ্রব্য হাঁস-মুরগি বা মাছ বা পশুর খাওয়ার উপযোগী মর্মে প্রত্যয়নপত্র লাগবে। এসব পণ্যে তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি আমদানিকৃত মাছের খাদ্য ক্লোরোমফেনিকল ও নাইট্রোফিউরানসহ ক্ষতিকর ওষুধ এবং হরমোন ও স্টেরয়েডমুক্ত হতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুন ২০১৯/হাসনাত/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়