ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফেসবুকের ডিজিটাল মুদ্রা কতটা নিরাপদ?

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৩ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফেসবুকের ডিজিটাল মুদ্রা কতটা নিরাপদ?

প্রতীকী ছবি

মোখলেছুর রহমান : ফেসবুক চালু করছে তাদের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি। প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ক্রিপ্টোকারেন্সি ‘লিবরা’ চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন গত সপ্তাহে। লিবরার মাধ্যমে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা একে অপরের সঙ্গে খুব সহজেই অর্থ লেনদেন এবং কেনাকাটা করতে পারবেন।

গত বছরের ডিসেম্বরেই মূলত খবরটি ছড়ায়। নতুন বছরের শুরুতেই এ কর্মযজ্ঞকে সামনে রেখে নতুন কর্মী নিয়োগ দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মটি। কলেবরে বাড়ানো হয় তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি দল। এজন্য লন্ডনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান চেইনস্পেসকে নিজের করে নেয়ারও ঘোষণা দেয় ফেসবুক। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভার্চুয়াল মুদ্রাটি ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে।

ফেসবুকের এমন আয়োজনে রীতিমতো উত্তেজিত বিনিয়োগকারীরা। ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়াটা উদীয়মান। এই ব্যবসার গুরুত্ব অনেকটা ফেসবুকের আগমনের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নয়নের জন্যে ‘ফেসবুক মুদ্রা’ এবার নজর কাড়বে বলেই বিশ্লেষকদের মত। মূলত ফেসবুকের ক্রিপ্টোকারেন্সি এজেন্ডা উদারপন্থী অর্থব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করবে।

ইতোমধ্যে বিশ্বের বড় বড় সব আর্থিক লেনদেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য গ্রাহকসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি ‘লিবরা’ বিষয়ে চুক্তি করে ফেলেছে। এ তালিকায় মাস্টারকার্ড, ভিসা, পেপ্যাল, স্ট্রাইপ, ইবে, উবার, লিফ্ট, স্পোটিফাই, কয়েনবেস, জ্যাপো, আন্দ্রেসেন হোরোউইটজ, ভোডাফোন রয়েছে। এসব কোম্পানিসহ মোট ১০০টি প্রতিষ্ঠান ‘লিবরা অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে থেকে ফেসবুকের ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ করবে।

কিন্ত এতকিছুর পরও কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর তা হলো লিবরা কি আদৌ ক্রিপ্টোকারেন্সি? আর সেক্ষেত্রে দ্রুত এবং কার্যকর ব্লকচাইন অবকাঠামো নির্মাণে ফেসবুকের ভূমিকা কি হবে? আর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ভার্চুয়াল মুদ্রার নিরাপদ ব্যবহার কে নিশ্চিত করবে। কারণ বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ডিজিটাল মুদ্রা ‘বিটকয়েন’ নিয়ে প্রতারণা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বহুল ব্যবহারের বিষয়টি কারো অজানা নয়।

ফেসবুকের তরফ থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। তবে গত শুক্রবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এর গভর্নরের সঙ্গে বিবিসি এক সাক্ষাৎকার থেকে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে। গভর্নর মার্ক কার্নি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহ লিবরার কার্যক্রম শুধুমাত্র বসে বসে অবলোকন করবে না।

মার্ক জাকারবার্গ যখন কয়েক মাস আগে লিবরার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্ক কার্নি এবং এই পরিকল্পনাটি সম্পর্কে কিছু সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।

তিনি বিশ্বব্যাপী পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য নতুন উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি মনে করেন যে, সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই এর জন্য স্পষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত।

মার্ক কার্নি বলেন, ‘লিবরাকে আমি স্বাগতম জানাই। তবে নজরদারি, ভোক্তা সুরক্ষা, বাজারের অখণ্ডতা, মানুষের গোপনীয়তার অধিকার- এই বিষয়গুলোর প্রতিও ফেসবুকের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আমরা অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের কাজে ব্যবহৃত হবে এমন একটি নেটওয়ার্ককে অনুমতি দেব না।’

বিশ্বব্যাপী ১.৭ বিলিয়ন মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। ফেসবুক মূলত এই বিশাল জনগোষ্ঠিকেই তাদের ভার্চুয়াল কারেন্সির গ্রাহক বানাতে চাচ্ছে। এই মানুষগুলো পরিবার এবং আত্মীয়দের কাছে অর্থ স্থানান্তর করতে গিয়ে নানাবিধ ঝক্কি ঝামেলায় পড়ে। এছাড়াও গুণতে হয় বাড়তি খরচ।

কিন্তু একটি নতুন সুপারফাস্ট ব্লকচেইন তৈরি করা এবং নিশ্চিত করা যে, নতুন সিস্টেমটি অর্থ লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন সম্পর্কিত বিধি নিষেধগুলো মেনে চলবে তা একটি দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া হবে বলেই মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়