ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় সংশোধনী প্রয়োজন

শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় সংশোধনী প্রয়োজন

বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকের সাজার বিষয়ে স্পষ্ট বিধান ছাড়াই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৬-এর চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। নাগরিক সমাজ বারবার প্রত্যাখান করা সত্বেও নতুন প্যাকেটে পুরোনো পণ্যের মতো সেই একই বিধান রেখে আইনের খসড়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক।

 

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ২০১১ সালে সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয় । এতে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো মৃত্যু হলে চালকের ১০ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়। খসড়াটি পর্যালোচনায় ২০১৩ সালে কমিটি গঠন করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এই কমিটির সুপারিশে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিধান রাখলেও শাস্তির বিধান কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়। সর্বশেষ গত মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে চতুর্থ দফার খসড়াটি প্রকাশ করা হয়। এতে বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকের সাজার স্পষ্ট বিধান রাখা হয়নি। এছাড়া সড়কে প্রাণহানির বিচার ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি অনুযায়ী করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ চালকের কারণে মৃত্যু হলেও শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ডের বেশি হবে না। এছাড়া এই খসড়টিতে ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও হতাহত ব্যক্তি কত ক্ষতিপূরণ পাবেন, তাও স্পষ্ট করা হয়নি। গত এপ্রিলে খসড়াটির বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হয়। তাদের দাবি ছিল, আইনে যেন কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। তবে প্রকাশিত এই চূড়ান্ত খসড়ায় তাদের মতামতের কোনো প্রতিফলনই দেখা যায়নি।

 

সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব একটি দৈনিক পত্রিকাকে জানিয়েছেন, এটিই চূড়ান্ত খসড়া।  তারপরও মতামত নেওয়া হবে। তবে এ খসড়ায় আর পরিবর্তন করা হবে না। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, পরিবর্তন  যদি নাই করা হয় তাহলে মতামতের প্রয়োজনটা কী? এ তো রীতিমতো স্ববিরোধী কথা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই খসড়া নিয়ে নাটকীয়তা করা হয়েছে, সেটা কি চালকের শাস্তি ক্রমান্বয়ে কমানোর জন্য?

 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে গত বছর একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, প্রতি বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। একটি দুর্ঘটনা গোটা একটি পরিবারকে পঙ্গু করে দেয়। একজন বেপরোয়া চালকের জন্য একটি পরিবার আর্থিক ও মানসিক পঙ্গুত্বে ভুগবে আর সেই চালক প্রায় নামে মাত্র শাস্তিতে পার পেয়ে যাবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

 

আমরা আশা করবো সরকার এই ‘চূড়ান্ত’ খসড়ার বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে। সড়কে প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দোষী চালকদের কঠোর শাস্তির বিধান ও প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা এই আইনের খসড়ায় সংযোজন করা হবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ নভেম্বর ২০১৬/শাহেদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়