ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অবশেষে ‘পালালেন’ তারা

সাইফুল আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবশেষে ‘পালালেন’ তারা

ফাইল ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য ষাটোর্ধ্ব মো. রফিক দেওয়ান। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বয়ড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে তার ভিটাবাড়ির প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপি ক্যাডার মহর ও তার লোকজন। এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ গত ২১ মার্চে একটি পত্রিকায় ‘সীমান্ত রক্ষা করলেও নিজের ভিটা রক্ষা করতে পারি নাই’ এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এর পর বিপদ তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান, মহর, হাসু গংয়ের হুমকিতে অনেকটা ঘরবন্দি রফিক। অসহায় রফিক ও তার খালাতো ভাই সালাহউদ্দিন এখন প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল ওই বিডিআর সদস্যের বাড়িতে যান কথিত মানবাধিকার কর্মী আমির হোসেন সিরাজী ও রফিকুল ইসলাম। ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান তাদের নিয়ে জনৈক আবুল হোসেনের বাড়িতে বসিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। সেখানে প্রথমে তারা নিজেদের ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। এবং রফিকের জমি সংক্রান্ত ঝামেলা মেটানোর জন্য তাদের পাঠানো হয়েছে বলে জানান। একপর্যায়ে তারা সেখানে উপস্থিত লোকজনের স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করলে লোকজনের সন্দেহ হয়। এর পরই তারা নিজেদের মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। এ সময় তারা বলেন, ‘মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আমাদের পাঠিয়েছেন।’ একপর্যায়ে এলাকার মুরব্বিরা ইউপি সদস্য মাসুদকে এসব বিষয়ে দোষারোপ করে সেখান থেকে চলে যান। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে আমীর সিরাজী ও রফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

ভুক্তভোগী রফিক দেওয়ান জানান, গতকাল সকালে উপজেলা ভূমি অফিসের লোক আসার কথা ছিল তার ভিটার জমির ব্যাপারে। ভূমি অফিসের লোক আসার আগেই সেখানে হাজির হন আমির সিরাজী ও রফিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি। এরপর প্রতিবেশী মজনু চৌধুরীর মাধ্যমে তাকে ডাকা হয়। এ সময় তারা নিজেদের ভূমি অফিসের লোক বলে পরিচয় দেন। তার পর রফিক দেওয়ানকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতে থাকেন ওই দুজন। কেন রফিক সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছেন তা জানতে চান তারা। তারা রফিককে ভয় দেখিয়ে বলেন, “জায়গা তো ফিরে পাবেনই না, ‘ভুল’ সংবাদ প্রকাশের জন্য এখন আপনার জেল-জরিমানা হবে।” এসব বলে রফিক দেওয়ানসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আসে মাসুদ ও আগন্তুক দুজন। তখন তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাদের পরিচয় জানতে চায় স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে আমির সিরাজী নিজেকে মানবাধিকারকর্মী এবং রফিকুল ইসলাম নিজেকে দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকার সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ছানু সাহেব ও সেক্রেটারি বিপ্লব সাহেব আমাদের পাঠিয়েছে।’ তখন তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হলে অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে তারা ওই স্থান ত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী জানান, রফিকুল ইসলাম ও আমির সিরাজী নামের কাউকে তারা চেনেন না। এ নামে তাদের কোনো সদস্য নেই। তাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ এ ধরনের কাজ করলে ওই লোকদের আবার দেখামাত্র পুলিশে খবর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এ কাজে তাদের নাম ব্যবহার করার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।

বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে অবশেষে পাওয়া যায় কথিত মানবাধিকারকর্মী আমির হোসেন সিরাজীর মুঠোফোন নম্বর। এ সময় তিনি নিজেকে ইন্টারন্যাশনাল ডায়ালগ এইড ফাউন্ডেশন (ইডাফ) নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার মানিকগঞ্জ শাখার উপপরিচালক বলে পরিচয় দেন। এবং যাত্রাপুর গ্রামে গিয়ে তিনি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘মেম্বার মাসুদ আমাদের ভুল ইনফরমেশন দিয়ে সেখানে নিয়ে গেছেন’।

তার সঙ্গী রফিকুল ইসলাম নিজেকে মুক্ত খবর পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে বলেন, ‘একটি সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় মাসুদ মেম্বারের কথায় আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেম্বারের ইনফরমেশন ভুল থাকায় আমরা চলে এসেছি।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দেন। পরে বারবার কল করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে এলাকার বিশিষ্টজন ও হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রফিক ডলার বলেন, ‘এলাকার লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই দুই ব্যক্তি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। পরে তাদের জেরা করা শুরু হলে তারা সটকে পড়ে।’

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুতফর রহমান জানান, ‘কে বা কারা যাত্রাপুর গ্রামে এসেছিল, বিষয়টি আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী আরেফীন রেজওয়ান বলেন, ‘যদি কেউ আমাদের ভূমি অফিসের নাম ব্যবহার করে কোনো অপরাধ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৭/সাইফুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়