ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আইপিএলের দশম আসরে চমক দেখানো ৫ ক্রিকেটার

রাব্বি খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইপিএলের দশম আসরে চমক দেখানো ৫ ক্রিকেটার

জয়দেব উনাডকট, পবন নেগি, সিদ্ধার্থ কাউল, ওয়াশিংটন সুন্দর ও ‍সুনীল নারিন

রাব্বি খান : আইপিএলে(ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) দুইবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। অন্যদিকে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট দ্বিতীয়বারের মত আইপিএল খেলতে এসে কেটেছে ফাইনালের টিকিট। এবারের আসরে বেশ চমক দেখানো পুনে প্রথমবারের মত ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাবে কিনা এই কৌতূহল ছিল সবার মনেই। যদিও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দশম আসরের বিস্ময় পুনেকে ১ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

তাছাড়াও আইপিএলের প্রত্যেক আসরেই চমক দেখিয়েছেন এমন খেলোয়াড়ও রয়েছে। ২০১৬ সালে দর্শকদের চমক দেখিয়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরুর লোকেশ রাহুল এবং যজুবেন্দ্র চাহাল। অন্যান্য আসরের মত এবার দশম আসরেও ব্যাট ও বল হাতে চমক দেখিয়েছেন বেশ কিছু খেলোয়াড়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক তেমন ৫ ক্রিকেটারকে।

৫. সুনীল নারিন :
বছর পাঁচেক আগে পুরোদস্তুর বোলার হিসেবে যোগ দেওয়া নারিন হুট করেই ২০১৭ সালের আইপিএল আসরে বল হাতে নয়, ব্যাট হাতে সূচনা করেছেন ইনিংসের। শুধু সূচনাই করেছেন তানয়, প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই কলকাতাকে এনে দিয়েছেন বিধ্বংসী শুরু। যার রেশ ধরেই বড় বড় সব সংগ্রহও খুব সহজেই পার করে ফেলে কিং খানের দলটি। আইপিএলে কলকাতার হয়ে ইনিংস সূচনার আগেই অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিগব্যাশে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে ইনিংস ওপেন করে ওপেনার হিসেবে নিজের প্রস্তুতিটুকু সেরে নেন নারিন। মেলবোর্নের হয়ে ৯ ইনিংসে তেমন কিছু করতে না পারলেও প্রতি ম্যাচেই মারমুখী শুরু করেছিলেন নারিন। যার প্রতিফলন ১৪১ স্ট্রাইকরেটে।

ক্রমাগতই আইপিএলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে থাকা নারিন নিজের চতুর্থ আসরে খেলতে এসে ধরা পরেন চাকিংয়ের অভিযোগে। সেবার ৮ ম্যাচ থেকে উইকেট সংখ্যা ছিল ৭। যার চারটিই আবার এক ম্যাচে। অর্থাৎ বাকি সাত ম্যাচে উইকেট মাত্র তিনটি। ২০১৬ সালের আইপিএলে খেলতে আসার আগেই নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ শুরু করেন নারিন। সেবার ব্যাট হাতে কিছু করার সুযোগ না পাওয়া নারিন বল হাতেও ছিলেন নিস্প্রভ। প্রায় সাড়ে সাত ইকোনোমি রেটে ১১ ম্যাচে নিয়েছিলেন ঠিক ১১টি উইকেট। নারিনের নামের পাশে যা বড্ড বেমানান।

আইপিএলে নিজের বোলিংয়ের এমন পরতি অবস্থা দেখেই বিগব্যাশে নিজের ব্যাটিং স্বত্ত্বার প্রদর্শনী শুরু করেন নারিন। সেখানে তেমন কিছু করতে না পারলেও বিগব্যাশ থেকে বয়ে আনা সাহসেই আইপিএলের ২০১৭ সালের আসরে ক্রিস লিন ইনজুরিতে পরলে কলকাতার ওপেনারের দায়িত্ব পেয়ে যান তিনি। আর এখানে এসেই বাজিমাত করেন নারিন। প্রায় প্রতিম্যাচেই বিষ্ফোরক শুরু এনে দিয়ে কলকাতার টপ-অর্ডারে এনেছেন স্বস্তি। যার মধ্যে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১৫ বলে ফিফটি করে গড়েছেন আইপিএলের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। যার ফলে তার কাছ থেকে একজন অলরাউন্ডারেরই সার্ভিস পেয়েছে তার দল। সেই সাথে অবাক করেছেন দর্শকদেরও।

৪. ওয়াশিংটন সুন্দর :
মাত্র ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ তুর্কির এটা প্রথম আইপিএলে খেলা। নিজের প্রথম আইপিএল খেলতে এসে তার অসাধারণ পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। সেই সাথে মাঠেরদর্শকরা তো বটেই। রবীচন্দ্রন আশ্বিনের ইনজুরির কারণেই কপালটা তার খুলেছে বলা যায়। তবে অবাক কর হলেও তামিল নাড়ুর এই ক্রিকেটার পুনে সুপার জায়ান্টসের হয়ে ওপেনিং করে চমকে দিয়েছেন সবাইকেই।

তবে আইপিএলের এই দশম আসরে তাকে তার দল পুনে একজন বোলার হিসেবেই দলে ভেড়ায়। কিন্তু ব্যাট হাতেও যে এমন পারফরমেন্স সবাইকে উপহার দিবেন সেটা হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি। গত বছর ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও তার অসাধারণ নৈপুণ্যে ভারত ফাইনালে পৌঁছায়।

৩. সিদ্ধার্থ কাউল : ২৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ক্রিকেটে আশার পর থেকেই ইনজুরির কারণে পিছিয়ে গেছেন ক্রমাগত। ইনজুরি যেন তার পিঁছু ছাড়ছিল না। ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ঘরোয়া ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৩ সালে ক্রিকেটে পুনরায় ফিরেই দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু তেমন একটা ভালো পারফরমেন্স উপহার দিতে পারেননি দলকে।

নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই হয়তো আবারও ২০১৬ সালে ক্রিকেটে ফিরে আসেন।ঠিক সেবারই সানরাইজার্স হারদরাবাদের হয়ে দলে ডাক পান তিনি। তবে এবার দশম আসরে তার অসাধারণ বোলিংয়ের কারণে হিমশিম খেতে হয়েছে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের। মাত্র ১০ ম্যাচ খেলেই শিকার করেছেন ১৬ উইকেট। সে সাথে মুগ্ধ করছেন টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সকল সমর্থকদেরকেও।    

২. পাবন নেগি : ২০১৬ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বেশি দামে কেনা খেলোয়াড়দের তালিকায় ছিলেন তিনি। ৮.৫ কোটি রুপিতে সেবার দিল্লি ডেয়ারডেভিলস নেগিকে দলে ভেড়ায়। কিন্তু তিনিতার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। সেটা হয়তো তার নিজেরও জানা। সেই সাথে হতাশ করেছিলেন নিজের দলসহ দলের সকল সমর্থকদের।

তাই এবার তার পারফরমেন্সের উপর বিচার করেই তাকে দলে ভেড়ায়নি দিল্লি। এবারের আসরে মাত্র ১ কোটি রুপিতে তাকে দলে নেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরু। তার নতুন ঠিকানা হয় কোহলি, গেইলদের বেঙ্গালুরুতে। যেখানে তার দলের বাঘা বাঘা সকল খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে কিনা একাই দলের জন্য লড়াই করেছেন নেগি। ব্যাট হাতেও নিজের ফিরে আসার ভালোই জানান দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১২ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১৬ উইকেট। 

১. জয়দেব উনাডকট : ২৫ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় তার অসাধারণ বোলিং, বলের সুইং ও গতিতে মুগ্ধ করেছেন সকলকেই। এমনকি দর্শক থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টও তার অসাধারণ এই বোলিং নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়েছেন। সেই সাথে অবাক করছেন সকলকে। ২০১৬ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টসের হয়ে খেলেন তিনি। তার বলের সুইং, স্লোয়ার ডেলিভারিগুলো যেন ব্যাটসম্যানদের রীতিমত ঘাম ঝরিয়েছে। তেমনি এবারের দশম আসরেও উনাকাত যেন পণ করেই নেমেছিলেন, উইকেটে দাঁড়াতেই দিবেন না  প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের। তাইতো ১২ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে বিস্মিত করে দিয়েছেন সবাইকে। আইপিএলের দশম আসরে ২৪ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছেন। তার চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলে ২৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন ভুবনেশ্বর কুমার।

তিনি আইপিএলের ইতিহাসে তৃতীয় বোলার হিসেবে হ্যাট্রিক করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে তিনি তার আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাট্রিক করেন। দশম আসরে তার সেরা বোলিং ফিগার ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলেতার এই অসাধারণ পারফরমেন্সের জন্য তিনি হয়তো ভারত দলের মূল একাদশে ফিরে আসতে পারেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৭/রাব্বি খান/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়