ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মনোবল হারাননি সিদ্দিকুর

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১২ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মনোবল হারাননি সিদ্দিকুর

আরিফ সাওন : দৃষ্টি শক্তি ফিরে না পেলেও মনোবল হারাননি পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে দুই চোখ হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান।

বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একদিন পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সে লক্ষ্য পূরণে উচ্চশিক্ষা নিতে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসেছিলেন। মাঝপথে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারালেও মানসিকভাবে তিনি এখনো আগের মতোই শক্ত আছেন। এ অবস্থাতেও লেখাপড়া শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নিতে চান সিদ্দিক।

শনিবার এসব কথা জানান সিদ্দিকুরের মা সুলেমা খাতুন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শুক্রবার ভারত থেকে ফিরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, মা তুমি চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। চোখে দেখতে না পারলেও আমি লেখাপড়া শেষ করবো, নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তোমাদের আর কষ্ট থাকবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার কথা বলেছে। আমার চাকরি হলে আর কাউকে কষ্ট করতে হবে না।’

সুলেমা জানান, সিদ্দিকুর তার ছোট সন্তান। পরিবারে অভাব অনটন থাকায় সে কখনো কোনো দাবি-দাওয়া করেনি। কারো দয়া-অনুগ্রহ চায়নি। সবসময় শুধু লেখাপড়া করতে চেয়েছে। পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে চেয়েছে। নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালানোর চেষ্টা করেছে। এখনো সে কারো বোঝা হতে চায় না।

সিদ্দিকুরের মা বলেন, সরকার তার ছেলের চিকিৎসায় অনেক করেছে। এক্ষেত্রে তাদের আর কিছু বলার নেই। তবে উন্নত বিশ্বের কোথাও যদি চিকিৎসার মাধ্যমে তার সন্তানের চোখ ভালো করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই চেষ্টাটুকু যেন করা হয়। প্রয়োজনে যদি চোখ দান করতে হয় তবুও সমস্যা নেই। চোখের এ অবস্থা নিয়েও সিদ্দিকুর লেখাপড়া শেষ করতে চায়, সেই সুযোগটুকু যেন তাকে দেওয়া হয়। আর তাকে যেন একটি স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

সিদ্দিকুরের বন্ধু নোমান ও শাহ আলী জানান, শুক্রবার ভারত থেকে ঢাকায় এনে পুনরায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আসার পর থেকেই তার ডায়রিয়া শুরু হয়। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ডায়রিয়ার কারণে সে বিশ্রাম নিতে পারেনি। সকাল ৯টার দিকে চিকিৎসকরা এসে কয়েক দফা তার চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর সে ঘুমিয়ে পড়ে।

বন্ধুরা জানায়, চেন্নাই থেকে আসার পর সিদ্দিকুরকে হাসপাতালের ভিআইপি কেবিন-৩ এ রাখা হয়েছে।

কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই তার চিকিৎসা চলবে। বন্ধুদের সঙ্গে গতরাতে সিদ্দিকুর নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে দুটি বিষয়ে তার গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। একটি হলো লেখাপড়া শেষ করা এবং অপরটি চাকরি বা কাজের সংস্থান। তিনি লেখাপড়া শেষ করতে চান। এমনকি অন্ধদের মতো যদি ব্রেইল পদ্ধতিতে দিতে হয় তবুও পরীক্ষা দিবে। আর সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে সেটা যেন অবশ্যই সম্মানজনক হয়।

সিদ্দিকুরের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বর্তমানে সিদ্দিকুরের ফলোআপ চিকিৎসা চলছে। অস্ত্রোপচারের পর সব রোগীকেই ফলোআপ করা হয়। তার জন্য নতুন করে মেডিক্যাল বোর্ড করা হয়েছে। বোর্ডের অধীনেই চিকিৎসা চলবে।’

কতদিন ফলোআপে রাখতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা নির্ধারিত নয়। যতদিন প্রয়োজন তাকে এখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।’

এদিকে রোববার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে সিদ্দিকুরের বন্ধুরা। অনার্স তৃতীয় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণার দাবি জানাতে গিয়ে চোখ হারাতে হয়েছে সিদ্দিকুরকে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলা প্রত্যাহার, পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা এবং হামলাকারী পুলিশদের শাস্তির দাবিতে এ মানববন্ধন হবে। 

প্রসঙ্গত, ভারতে উন্নত চিকিৎসা শেষে শুক্রবার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে মালদ্বীপ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান  সিদ্দিকুর। তার ফিরে আসা উপলক্ষে দুপুর থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান তার বন্ধুরা।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ আগস্ট ২০১৭/সাওন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়