ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লম্বা গলা তাদের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০২, ১২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লম্বা গলা তাদের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক

(ভিয়েতনামের পথে: সপ্তম পর্ব)

ফেরদৌস জামান: যতদূর মনে পড়ে এটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম দীর্ঘ বাস জার্নি। টার্মিনালে আমাদেরটাই একমাত্র বাস। অন্য কোনো বাহণ নেই। থাইবাসীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ সচেতনতা বোধের তারিফ করতে হয়। উন্মুক্ত বাস টার্মিনাল অথচ, একটা পাতাও পড়ে নেই। ছাউনির খুঁটিতে লেখা আছে সতর্কবার্তা- ধূমপান নিষেধ, করলে পাঁচ হাজার বাথ জরিমানা। লঘু অপরাধে গুরুদণ্ড বলে মনে হতে পারে তবে থাইল্যান্ডের মাত্র চল্লিশ ঘণ্টার অভিজ্ঞতায় যতটুকু প্রত্যক্ষ করেছি তাতে এদের পরিবেশ সচেতনতার নৈতিক অবস্থান থেকে বিচার করলে বিষয়টিকে গুরুদণ্ড বলে মনে হয় না।

মোটর সাইকেলওয়ালারা এসে জানতে চাইল, কোথায় যাব? খুব করে তারা চাইছিল, আমাদের পৌঁছে দিতে। আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে কৌশলে জেনে নেয়ার চেষ্টা করলাম লেকসাইটটা কোন দিকে এবং দূরত্ব কতটুকু? কারণ সেখানে আমাদের গেস্টহাউজ বুকিং করা আছে। তাছাড়া, আমরা তো হাঁটাহাঁটি শ্রেণীর পর্যটক। কাছেপিঠে এমনকি দুই-আড়াই কিলোমিটার হলেও আপত্তি নেই- হেঁটেই চলে যাব। হ্যাঁ, দূরত্বের খবর উদ্ধার করা গেছে এবং তা আমাদের পক্ষে কোনো বাহণ ছাড়াই যাওয়া সম্ভব। দিকটা নিশ্চিত হয়ে পথ ধরলাম পদব্রজে। আমরা দুজন ব্যাতীত তৃতীয় কাউকে দেখছি না যারা হাঁটছে। প্রায় জনশূন্য ফাঁকা রাস্তায় থেকে থেকে কেবল এক-দুইজন মোটর সাইকেল আরোহীকেই দেখা যাচ্ছে। দুই পাশে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। কালো পথটার ফুটপাতে শ্যওলা জমে কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। এসব যে, কেউ ব্যবহার করে না তা নিশ্চিত বলা যায়। ব্যবহার করবেই বা কে? এরা তো মোটর সাইকেল ছাড়া নড়ে না। ফুটপাতের ধারে ফল বাগানের মাঝ থেকে মুখ বের করে রয়েছে একমাত্র দোকানটা। টেবিলে সাজিয়ে রাখা কাঁচা-পাকা কলার কাঁদি। দাম বেশি নয় পনের-ষোলটা কলার কাঁদি মাত্র দশ বাথ। তাতে আমরা অনেক খুশি। কলার সাথে পাউরুটি বা বিস্কুট দিয়ে দু’এক বেলা দিব্বি চালিয়ে নেয়া যাবে।

 


বামে মোড় ঘুরে দূরে চোখে পড়ল ছবির মত দেখতে শহরের এক প্রান্ত। রাস্তার উভয় পাশের গাছে গাছে ফুটে রয়েছে হরেক রঙের ফুল। হাতি থাইল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক অথবা প্রাণী কি না জানি না তবে এই প্রাণী নিয়ে তাদের অনেক দূর্বলতা  আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতার অনুচ্চ গাছগুলোর ঘন শাখা-প্রশাখা যত্ন করে ছেঁটে বা কেটে বিভিন্ন প্রাণীর আকৃতি দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে হাতির প্রাধান্য লক্ষণীয়। ঝরনার পানি বয়ে আসছে খাল দিয়ে, তার উপর ছোট্ট সেতু। সেতুর রেলিং ঘেঁষে পাথর বা ঢালাইয়ের তৈরি বেশ কিছু হাতির মাথা, যেন প্রাচীর ফুড়ে শুধু মাথাটুকুই বের করে দিয়ে রেখেছে। শুঁড়টা বাঁকিয়ে উপর দিকে তুলে ধরা। শহরের এই অংশকে এড়িয়ে ডানে মোড় নিলে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটাতে কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। এমনিতেই মানুষ নেই তার উপর দিয়ে যারা যাতায়াত করছে প্রত্যেকেই মোটর সাইকেল নিয়ে। সুবৃহৎ কড়ইগাছের ছায়ায় ইলেক্ট্রনিক্সের বেশ বড় বিক্রয় কেন্দ্র। ভেতরে প্রবেশ করে একজনকে জিজ্ঞেস করতেই এগিয়ে এলেন সমস্ত কর্মীরা। গেস্টহাউজের অবস্থান ঠিক বুঝতে না পারায় মোবাইল ফোন বের করে ম্যাপে খোঁজাখুঁজির পর সকলে মিলে পরামর্শ করে বুঝিয়ে দিলেন কোন দিকে যেতে হবে। তাদের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা যারপর নেই মুগ্ধ ও কৃতজ্ঞ।

আলাপ করতে করতে প্রবেশ করলাম লেকসাইটে। প্রাকৃতিক লেকের চারধারে কাঠ অথবা ইট এবং পাথরের অনেক ঘরবাড়ি। লেকের বাম পাশের ফুটপাত ধরে হাঁটছি। লোহার তৈরি এবং ঢালাইয়ের চমৎকার একেকটা হেলান দেয়া বসার জায়গা। দেখেই বোঝা যায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কে জানতো সন্ধ্যায় এই লেকসাইটেই বর্ণিল আলোয় জমে ওঠে এক সুদৃশ্য জনসমাগম। হোটেল-রেস্টুরেন্ট কিংবা বার কোথাও জিজ্ঞেস করে আমাদের বুক করা গেস্টহাউজের দিশা পেলাম না। ব্যাংককের মতো হোটেল খোঁজার সেই বিড়ম্বনা আর নিতে চাই না! তাই যেভাবেই হোক আপাতত একটা থাকার জায়গা নিশ্চিত করা দরকার। লেক পেরিয়ে পথ খানিকটা উপরের দিকে উঠে গেছে। এখানেই দেখা মেলে এক ট্যুর অপারেটর কার্যালয়ের। প্রথমে হাতে মানচিত্র ধরিয়ে দিয়ে থাকার জায়গার ব্যাপারে বিস্তারিত বললেন। আগে হাউজটা দেখা দরকার। ফোন করতেই দশ মিনিটের মধ্যে মোটর সাইকেল নিয়ে চলে এলেন এক নারী। তার সাথে গিয়ে দেখলাম এবং এক দেখাতেই পছন্দ হয়ে গেল। তিনশ বাথে পাকা ঘর আর দুইশতে কাঠের।

 


আমার পছন্দ কাঠের ঘর। ফুলের গাছে শোভিত উঠানে পায়চারী করছি। পেছনের দরজা ঠেলে প্রবেশ করল এক ড্যানিশ রমণী। শুভ সকাল বলার ধরন শুনেই বোঝা যায় কতটা নমনীয় স্বভাবের মেয়ে তিনি। মাঝে সিঁথি করা লম্বা চুল অনেকটাই দুই পাশে নামিয়ে দেয়া। সম্মুখের কিছুটা কানের পিঠে গুঁজে দেয়া। দরজা তখনও খোলা। ওপারে ঘন এবং চাপা সবুজ ঘাসের চত্বর। ঠিক তারপর থেকেই লেক শুরু। এমন দৃশ্য দেখে আমার মুগ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে সে জানাল, এই পাশ দিয়ে লেকের শান্তশিষ্ট পরিবেশটা পাওয়া যায়। সে যেমন জীবনে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশির সাথে পরিচিত হতে পেরে খুশি তেমনি আমিও। উঠেছে এই হাউজেই। পরে কথা হবে এমনটা বলেই বিদায় নিলাম।

সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠলে বারন্দা, তারপর ঘর। সম্মুখে বারান্দার চওড়া অংশে গাছের কাণ্ড দিয়ে বানানো টেবিল ও হেলান দেয়া বেঞ্চ। এসব কাঠামো বেয়ে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে উঠে এসেছে লতা জাতীয় চমৎকার পাতাবাহার। উপরে চাল থেকেও নেমে এসেছে সবুজ পাতার লতাগুচ্ছ। টেবিলের পাশেই একটা ছোট্ট তাকে বেশ কয়েকটা ভ্রমণ বিষয়ক বই রাখা। ঘরে প্রবেশ করে অনেক ভালো লাগল। পুরনো ঘর, একটু অন্ধকার ধরনের। এই অন্ধকার ভাবটা ঘর আরও বেশি পুরনো অথবা প্রাচীন করে দিয়েছে। দুই বিছানার মাঝে নড়াচড়ার জন্য এক টুকরো ফাঁকা জায়গা। জানালা খুলে পর্দা তুলে দিতেই হালকা বাতাস এসে ঘর ঝরঝরে করে দিয়ে গেল। কলা-পাউরুটির নাস্তা খেয়ে টেবিলে মানচিত্র বিছিয়ে ঠিক করে নিলাম মে হং সন ভ্রমণ পরিকল্পনা। এখানের সংক্ষিপ্ত অবস্থানকে ফলপ্রসূ করে তোলার খাতিরে দুচার দিন ধরে আছে এমন কাউকে পেলে সুবিধা হতো। আশপাশে কেউ নেই। সদ্য পরিচিত হওয়া ডাচ বন্ধুটাও তখনই কয়েক মিনিট পর বেরিয়ে গেছে। উঠানের এক প্রান্ত হস্তশিল্পের বেশ কিছু নমুনা দিয়ে সাজানো ছ্ট্টে রেস্টুরেন্ট। সামনে পাথর ছড়ানো খোলা জায়গায় একটা টেবিল কেন্দ্র করে কয়েকটা চেয়ার পাতা। গোসল পর্ব শেষ। এবার অবশ্যই চা-কফি কিছু একটা পান করা দরকার। নিচে গিয়ে কফির কথা বলতেই বাইরে থেকে হন্তদন্ত হয়ে এসে যোগ দিলেন আরেকজন সুইডিশ স্কুল শিক্ষক। তিনি সম্মুখের ঘরেই উঠেছেন। অনেক বছর ধরে থাইল্যান্ডে আছেন। ইংরেজী পড়াচ্ছেন দূরবর্তী স্কুলে। পর্যটক হয়ে ঘুরতে এসে বিয়েশাদী করে এখানেই ঘর সংসার পেতেছেন। ওর পেটে যে অনেক ক্ষুধা তা বোঝা গেল গল্পে গল্পে আমাদের কাঁদি থেকে বেশ কয়েকটা কলা খাওয়া দেখে। আমাদের সাথে নেয়া বাংলাদেশি সিগারেট তার খুব ভালো লাগল। এক ঘণ্টারও কম সময়ে তিন তিনটা পুরে ছাই করে দিল!

 


প্রতিবার চেয়ে নেয়ার সময় বলে, এটা ধার নিচ্ছি তবে কখনও পরিশোধ করার জন্য নয়। কথায় কথায় অঘোষিতভাবেই নির্ধারণ হয়ে গেল কফির দাম সে মেটাবে। অল্পক্ষণ আগেই কোথাও থেকে অ্যালকোহল জাতীয় কিছু একটা ভরপুর গিলে এসেছে। তার প্রভাব যে এখনও বেশ কার্যকর কথাবার্তায় তা স্পষ্ট। নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা ভুরভুরে সুরভী গোল হয়ে বসা তিনজনের গণ্ডির মধ্যে যেন স্থির নিবাস গেড়ে বসেছে। আমার কফি শেষ, আরও একটা নিতে পারলে ভালো হতো। আলাপের বিষয়বস্তু ভ্রমণ পরামর্শ ও পরিকল্পনা ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে তার প্রত্যক্ষ করা থাই সংস্কৃতির নানা দিকের মধ্যে। দুদিন আগেই সে ঘুরে এসেছে পার্বত্য কোন এক বসতি। অংশগ্রহণ করেছে স্থানীয় তাদের পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে। আমাদের কৌতূহলের পরিপ্রেক্ষিতে সেখান থেকে বর্ণনা করলেন তার অর্জিত অভিজ্ঞতার বেশ খানিকটা। তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পেল পানীয়। স্থানীয়দের ঘরে প্রস্তুত বিশেষ পানীয় যা পান করে সে অনেক তৃপ্ত। প্রথম চুমুকটা নেয়ার আগেই নাকে কি ধরণের সুবাস পেল, জিভে পড়তেই কেমন স্বাদ অনভূত হলো, খাদ্যনালি বেয়ে পেটের মধ্যে গড়িয়ে পড়ার সময়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ইত্যাদি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী পর্যবেক্ষণ করেছে তার সম্পূর্ণটা বর্ণনার পর চোখেমুখে এমন এক নকশা ফুটিয়ে তুললো যাতে বোঝা গেল তার জন্য এ ছিল এক বিশেষ দিন।

 


প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে খানিকটা বেগ পেতে হলো। পরের প্রসঙ্গ থাই সাহিত্য। লক্ষ্য করেছি এখন পর্যন্ত কোনো বইয়ের দোকান চোখে পড়ল না। অনেকটা পথই তো চললাম। তার মধ্যে হাঁটাহাঁটি নেহায়েত কম হয়নি। বইয়ের দোকান না হোক, একটা পত্র-পত্রিকার দোকানও কি চোখে পরবে না? তাহলে কি ধরে নেব এখানকার মানুষেরা সমস্ত কিছু ইন্টারনেটে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে? ইয়োরোপ তো তথ্য-প্রযুক্তিতে আরও কত দিন আগ থেকে উন্নত কিন্তু সেখানে তো বইয়ের দোকান চোখে পড়ে। লোকেরা সুযোগ পেলেই বই মেলে পড়তে থাকে। হোক সে চলন্ত বাসে কি ট্রেনে। আমার উদ্বেগের যথার্থতায় সে সমর্থন করে বলল, রাজতন্ত্র। এই জিনিসটার কারণে সব কিছু অবদমিত। যেটা হয়তো বা দেশের সাধারণ নাগরিকরা অনুধাবন করতে পারে না। ব্যাস, এতটুকুতেই তার মতামত শেষ। এটা যে তার থাইল্যান্ডে অতিবাহিত করা দীর্ঘ সময়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে দেয়া মতামত তাও সে নিশ্চিত করল। এই বলে প্রসঙ্গের ইতি টেনে তিনি মে হং সন ভ্রমণের সুন্দর পরামর্শ দিলেন। আমাদের প্রধান পরিকল্পনা ছিল স্থানীয় কারেন জাতিসত্তা বসতি এবং ওয়াটফ্রাথাট ডই কং মু। কারেন জাতিসত্তার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নারীদের গলায় ধাতব অলঙ্কার পরিধান করে দিনে দিনে তা লম্বা বা দীর্ঘ করে তোলা, যাকে তারা সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক মনে করে। তার পরামর্শ হলো, এলাকাটা স্থানীয় একদল বিদ্রোহী জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন। সুতরাং, যেতে চাইলে কিছু অনাকাঙ্খিত আনুষ্ঠানিকতা ও জটিলতা আছে। যেমন- বসতিতে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি দুই কি আড়াইশ বাথ প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। বেশ দূরে অবস্থিত, সাধারণ কোনো বাহণ চলাচল করে না। যেতে হয় চড়া দামে মোটর সাইকেল ভাড়া করে। আলোচনায় বেরিয়ে এলো বিষয়টাকে তারা একটা পণ্যে পরিণত করেছে। সেখানে তাদের দৈনন্দিন জীবন প্রণালী প্রত্যক্ষ করার সুযোগ নেই। দর্শনার্থীদের জন্য ঐতিহ্যবাহী সাজে সেজেগুজে বসে থাকে। ভেবে দেখলাম এইটুকু তথ্যে আমাদের পিপাসা নিবারণ হবে না। তিনি কারেন বসতি বাদ দিয়ে ওয়াট ফ্রাথাট ডই কং মু ঘুরে দেখার দিকনির্দেশনা ও জোর পরামর্শ দিলেন। অতিরিক্ত হিসেবে জানিয়ে দিলেন মে হং সনে কোথায় খাবার খেয়ে পর্তায় যায়। (চলবে)

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জানুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়