ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাহিত্যচর্চা করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান

রফিক মুয়াজ্জিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাহিত্যচর্চা করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান

ডেস্ক রিপোর্ট : সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত থেকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-১৪২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, বিশ্বজুড়ে আজ অস্থিরতা বিরাজ করছে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য গ্রাস করে নিতে চাচ্ছে সকল শুভবোধকে। এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে হবে। এজন্য সাহিত্যচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘সাহিত্য মানুষকে যুক্তিবাদী ও সংবেদনশীল করে তোলে। বহুমাত্রিক সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। সভ্যতা বিকশিত হয়েছে মানুষের সৃজনশক্তিতে। এই সৃজনশীলতার বাহন হচ্ছে ভাষা। তাই সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশে সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম।

সাহিত্যচর্চা মানুষের মধ্যে শুভবোধের বিকাশ ঘটায়, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহিত্যচর্চা মানুষের অমিত সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মোচিত করে, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। যে সমাজের সাহিত্য যত ঋদ্ধ, সেই সমাজ তত বেশি সভ্য। আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিও অনেক সুদৃঢ়। সে কারণেই বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের অন্যতম মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত।

সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ, সহ-সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি সত্যম রায় চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন এবং আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু স্বাগত বক্তৃতা করেন।

এই সাহিত্য সম্মেলনে ভারত, জাপান এবং জার্মানি থেকে আসা প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই সাহিত্য সম্মেলনের যৌথ আয়োজত বাংলা একাডেমি, নিখলি ভারত বঙ্গ সাহিত্য কেন্দ্র এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ।

‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’, গুরুসদয় দত্তের এই অমিয় বাণীকে ধারণ করে বাংলা একাডেমি আয়োজিত হচ্ছে এবারের আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন।

শেখ হাসিনা সম্মেলনের এই মূল প্রতিপাদ্যের উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সব বাঙালির মনে রাখতে হবে যে, আমাদের শেকড় হচ্ছে বাংলা। এই বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করেই আমাদের স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়।

তিনি বলেন, বাঙালিরা কারো কাছে কখনো মাথা নত করে না, মাথা নত করতে জানে না। কাজেই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করেই আমাদের চলতে হবে। আমরা বাঙালি, এটি ভুলে গেলে চলবে না। আজকে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাঙালির অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের জানার পরিধি আরো বিস্তৃত হবে। আমাদের সাহিত্য আরো ঋদ্ধ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আয়োজন একদিকে নতুন সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করবে, অন্যদিকে নিজেদের সামর্থ্যকে তুলে ধরবে।

সাহিত্য সম্মেলনে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আমাদের এই ঋদ্ধ ভাষায় যারা সাহিত্যচর্চা করছেন, তাদের একত্রিত করার এই যুগোপযোগী উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি সাধুবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরবি এবং রোমান হরফে বাংলা লেখা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানি শাসকদের চক্রান্তের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ২১-এর রক্তরাঙা পথ বেয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলন এবং স্বাধীকারের চেতনা ধীরে ধীরে এক দুর্বার গতি লাভ করে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইউনেস্কো কতৃর্ক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণায় তার সরকার এবং কানাডা প্রবাসী সালাম, রফিকদের মহৎ অবদানের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজ সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সরকারপ্রধান বলেন, আসলে মাতৃভাষা ছাড়া মানুষ কখনো নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন।

তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমি গর্ববোধ করি, মাতৃভাষায় ভাষণ দিতে পেরে। তবে এটা ঠিক যে, যুগের পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভ্যতা অগ্রসরমান হলেও তার চাপে মাতৃভাষা কখনো হারিয়ে যাক তা আমরা চাই না। আজকে বাংলা ভাষার ওপর এই সাহিত্য সম্মেলন আমাদের দেশের মানুষকে ভাষা সম্পর্কে আরো সচেতন করবে। এটি মাতৃভাষার জন্য আরো সহায়ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে অমর একুশের ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, জসীম উদ্‌দীনসহ অন্যান্য সৃষ্টিশীল কবি-সাহিত্যিকদের স্মরণ করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
 

সূত্র : বাসস

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জানুয়ারি ২০১৮/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়