ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ১৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক : সাকিব আল হাসান। এলেন, খেললেন আর জয় করলেন। তার আগমণেই দলে পরিবেশ পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। মাঠে খেলোয়াড়দের শারীরী ভাষা গেল বদলে। যে যার জায়গা থেকে শতভাগ দিলেন। তাতে শুরুতেই শ্রীলঙ্কাকে খুব করে চেপে ধরে বাংলাদেশ। কুশাল পেরেরা ও থিসারা পেরেরার ব্যাটে সেখানে থেকে শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ালেও ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি।

সেই রান তাড়া করতে নেমে পেন্ডুলামে দুলে দুলে একে সময় খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচটি রংধনুর সাত রঙে রাঙান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। উত্তেজনা আর নাটকীয়তার রেশ দূরে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় লঙ্কান দর্শকদের হৃদয় খানখান করেন বড় ম্যাচের তারকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার বীরোচিত ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে নিদাহাস ট্রফির দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে উঠে যায় বাংলাদেশ। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ শেষে কাঁদলেন শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড় ও দর্শকরা। কাঁদলেন বাংলাদেশের সমর্থকরাও। সে কান্না যে আনন্দের। হারতে বসা ম্যাচ জিতে ফাইনালে যাওয়ার।



শুক্রবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪১ রানেই স্বাগতিকরা হারিয়ে বসে পাঁচ-পাঁচটি উইকেট। প্রথমে সাকিব আল হাসান শ্রীলঙ্কার শিবিরে আঘাত করেন। দলীয় ১৫ রানের মাথায় দানুস্কা গুনাথিলাকাকে (৪) সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান। ২২ রানের মাথায় দ্বিতীয় আঘাত করেন মুস্তাফিজ। তার বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন কুশাল মেন্ডিস (১১)। এরপর মুস্তাফিজের ওভারে রান-আউটে কাটা পড়েন উপল থারাঙ্গা। দলীয় রান তখন মাত্র ৩১।

 


এক বল পরেই মুস্তাফিজের অফ-কাটারে দিশেহারা হয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন দাসুন শানাকা। তিনি গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন। দলীয় রান তখন ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২। নবম ওভারের প্রথম বলেই জীভান মেন্ডিসকে শর্ট ফাইন লেগে মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে ৪১ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। এর পরের গল্পটুকু কুশাল পেরেরা ও থিসারা পেরেরার। প্রথম ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার উপর প্রভাব বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ।

এরপর সেই বলয় থেকে বেরিয়ে এসে হাতখুলে মারতে শুরু করেন কুশাল পেরেরা ও থিসারা পেরেরা। ষষ্ঠ উইকেটে তারা দুজন ৯৭ রান তোলেন। দলীয় ১৩৮ রানের মাথায় কুশাল পেরেরা আউট হন। যাওয়ার আগে ৪৭ বলে ৭টি চার ও ১ ছক্কায় ৬১ রান করে যান। এরপর থিসারা পেরেরা ৩৭ বলে ৩ চার ও সমান সংখ্যক ছক্কায় ৫৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহকে ১৫৪ পর্যন্ত টেনে নেন। উদানা ও ধনঞ্জয়া শেষদিকে ৫ রান যোগ করলে শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে।

বল হাতে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ২টি উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেন।

১৬০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশেরও। ১১ রানের মাথায় ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন লিটন কুমার দাস। ৩৩ রানের মাথায় সাব্বির রহমানও ফিরে যান। ৮ বলে ৩ চারে ১৩ রান করে যান তিনি। তৃতীয় উইকেটে তামিম ও মুশফিকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তারা দুজন ৬৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের ভিত এনে দেন। এরপর কিছুটা ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।

৯৭-১০৯ রানের মধ্যে তিনজন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন বাংলাদেশকে। ৯৭ রানের মাথায় দারুণ ধারাবাহিক মুশফিক ২৮ রানে আউট হন। ১০৫ রানের মাথায় হাফ সেঞ্চুরি করেই ফিরেন তামিম। ৪২ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ফিফটি করে যান দেশসেরা ওপেনার। সৌম্য সরকারও এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১১ বলে ১০ রান করে আউট হন সৌম্য। ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান ২৮ রান তোলেন। তাতে আবারো ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

 


১৩৭ রানের মাথায় সাকিব আউট হওয়ার পর আগের তিন ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক দায়িত্বভার নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। ১৪৮ রানের মাথায় মেহেদী হাসান মিরাজ রান-আউট হলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর মুস্তাফিজ এসে প্রথম বলে ব্যাটে বলে করতে পারেননি। পরের বলে প্রান্ত-বদল করতে গিয়ে রান-আউট হন। পরের চার বল কে মোকাবেলা করবে সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। যেহেতু প্রান্ত-বদল হয়েছে সেহেতু মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক পাওয়ার কথা। কিন্তু স্ট্রাইকে দেখানো হয়েছে রুবেল হোসেনকে।

তার উপর পর পর দুটো বল বাউন্সার (শোল্ডারের উপর দিয়ে) দেওয়ায় লেগ আম্পায়ার নো বল কল করেন। আরেক আম্পায়ার সেটা নাচক করে দেন। সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। ডাগ-আউট থেকে সাকিব উঠে আসতে বলেন মাহমুদউল্লাহ ও রুবেলকে। শেষে দ্বন্দ্ব মিটে মাহমুদউল্লাহ স্ট্রাইকে যান। উদানার তৃতীয় বলটিকে কাভার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান। পরের বলটি ডিপ মিড-উইকেটে ঠেলে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২ রান নিয়ে স্ট্রাইক নিজের কাছে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। তখন জয়ের জন্য ২ বলে ৬ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। উদানার করা পঞ্চম বলটি ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরে শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলেন।

ঠাণ্ডা মাথার মাহমুদউল্লাহ ১৮ বল মোকাবেলা করে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও তার হাতেই ওঠে।

রোববার নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেবার অবশ্য হার মেনেছিল। এবার সেই ভারতকে হারিয়ে শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরতে পারে কিনা বাংলাদেশ, সেটাই দেখার বিষয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মার্চ ২০১৮/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়