ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দৈনন্দিন যেসব অভ্যাস চাকরির জন্য ক্ষতিকর

মাহমুদা মিতুল ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৭ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দৈনন্দিন যেসব অভ্যাস চাকরির জন্য ক্ষতিকর

প্রতীকী ছবি

মাহমুদা মিতুল ইভা : কর্মস্থলে আপনি আপনার কাজে দক্ষ এবং মনোযোগী হওয়ার পরেও এমন কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস আছে, যার কারণে আপনার চাকরি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। দৈনন্দিন সেসব অভ্যাস নিয়েই এ প্রতিবেদন।

* কাজ এবং জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মানসিকতা

কেউ যদি সর্বক্ষণ কিছু না কিছু নিয়ে নালিশ বা ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে তাহলে এটার প্রভাব অন্যদের ওপর চরমভাবে পড়ে। আসলে এইধরনের ব্যাপারগুলো সংক্রামক, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্যদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া ফেলে। কাজ এবং জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মানসিকতার ফলে সহকর্মীরা আপনার বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে। তাছাড়া কর্মস্থলে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, অফিসের কর্মকর্তা আপনার কাজে এবং আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে আপনার পদোন্নতি আটকে দিতে পারেন বা বদলি করে দিতে পারেন। সুতরাং নেতিবাচক মানসিকতা আপনার কর্মজীবনে ডেকে আনতে পারে ভয়ানক পরিস্থিতি।

* পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অসচেতনতা

সকালে কর্মস্থলে পৌঁছানোর তাড়া সবারই থাকে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যে দাঁত ভালো করে ব্রাশ না করা বা কোনো সুগন্ধি ব্যবহার না করা খুবই বিদঘুটে পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মুখের এবং গায়ের দুর্গন্ধ আপনার কাছ থেকে সহকর্মীদের দূরে ঠেলে দিতে পারে। তাছাড়া কর্মস্থলে আপনি সবার বিরক্তির পাত্রে পরিণত হতে পারেন। তাই নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখুন।

* দায়িত্বজ্ঞানহীন
অনেকেই এমন আছেন যারা নিজের কৃতকর্মের জন্য কোনো দায়িত্ববোধ অনুভব করেন না এবং কোনো কাজে ব্যর্থতার জন্য সহকর্মীদের আক্রমণ করে বসেন। প্রথমদিকে আপনার সহকর্মীরা ভদ্রতার খাতিরে এমন আচরণ সহ্য করলেও পরিবর্তীতে আপনার নেতাগিরি নিয়ে তারা নানান কথা বলতে পারেন। এমনকি চোখে আঙুল দিয়ে আপনার ভুল দেখিয়ে দিয়ে আপনাকে অপমান করতে পারেন, যা আপনার জন্য খুব একটা ভালো হবে বলে মনে হয় না।

* অমার্জিত পোশাক পরিধান
অনেক কোম্পানি আছে যেখানে ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে ফরমালের একটি সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয় ড্রেসকোড হিসেবে। তার মানে এই নয় যে, ছেঁড়া-ফাটা জিন্স আর টি-শার্ট পরে অফিসে চলে আসবে কেউ। ব্র্যান্ডি ব্রিটন নামে একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, ‘পেশাজীবী পোশাক আত্মবিশ্বাস প্রদান করে এবং কাজের পরিবেশ সুন্দর রাখে।’ এক জরিপে জানা যায়, ৮০ শতাংশ অফিস কর্মকর্তা বলেন সঠিক এবং মার্জিত পোশাকের ওপর একজন কর্মচারীর পদোন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে।

* অতিরিক্ত সুগন্ধ ছড়ানো
অফিসে কাজ করার সময় কড়া কোনো পারফিউমের গন্ধ ছড়ানোর ফলে অফিসে কাজের ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি অপমানজনক হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া আপনার সহকর্মীরা এড়িয়ে চলতে পারেন আপনার পারফিউমের অতিরিক্ত গন্ধের জন্য। তাই অতিরিক্ত সুগন্ধ ছড়ায় এমন কোনো পারফিউম পরিহার করে চলুন। অনেক কোম্পানি এমন আছে যেখানে পারফিউমের ব্যাপারে কড়া সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তাছাড়া কিছু খাবার যা থেকে উগ্র গন্ধ ছড়ায়, সে ব্যাপারেও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা থাকে কিছু কোম্পানিতে।

* কলুর বলদ হওয়া
আপনি যদি নিজেকে অতিরিক্ত ইতিবাচক ভাবেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে মানুষের আপনার প্রতি একরকম আদেশ জারিমূলক আচরণ জন্ম নেবে। সবাই যা চায় আপনি যদি তাই করেন তাহলে আপনার সহকর্মীরা মনে করবে আপনাকে দিয়ে সবকিছুই করিয়ে নেওয়া যায় কেননা আপনি কারো কথা ফেলতে পারেন না। আপনার এবং আপনার কাজের জন্য কি প্রয়োজন সেটা ভাবা বাদ দিয়ে মানুষ কি চায় সেটা নিয়ে ভাবলে আপনি কলুর বলদে পরিণত হবেন। তাছাড়া আপনাকে দুর্বল ব্যক্তিত্বের মানুষ মনে করতে তাদের বেশি সময় লাগবে না।

* অফিসিয়াল লেখালেখিতে কম মনোযোগী হওয়া
সাধারণত অলসতার কারণে অফিসে কর্মচারীরা কাজে নানারকম অবহেলা করে। অফিসিয়াল বিভিন্ন ডকুমেন্টের কাজে এরকম অবহেলা বা কম মনোযোগী হলে আপনার চাকরি থাকা নিয়ে টানাটানি লাগতে পারে। আপনি যতই সুন্দর সাবলীল ভাষার মাধ্যমে কিছু উপস্থাপন করুন না কেন, আপনার লেখায় যদি ব্যকরণগত ভুলভ্রান্তি বেশি থাকে এবং আপনি যদি তা খেয়াল না করেন তাহলে আপনার কাজে অবহেলা আছে বলে ধরে নেওয়া হবে। ভুলে ভরা উন্নত লেখার তুলনায় সাধারণ এবং সংক্ষিপ্ত অফিসিয়াল ডকুমেন্ট বা লেখা ঢের ভালো।

* বেশি ঢিলেমি করা
অফিসে দেরী করে আসা বা যেকোনো কাজে বেশি সময় নেওয়া আপনার চাকরির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। একটি কোম্পানিতে যদি সময়ানুগ একটি সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকে এবং আপনি যদি সেখানে আপনার ঢিলেমির পরিচয় দেন, তাহলে এটা ভেবে নেওয়া স্বাভাবিক যে কোম্পানির প্রতি আপনার কোনো শ্রদ্ধা নেই। যার ফলে আপনার চাকরি চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

* অতিরিক্ত ‘স্যরি’ শব্দের ব্যবহার
অতিরিক্ত পরিমাণে স্যরি শব্দের ব্যবহার আপনার দুর্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় বলে গণ্য হবে। যখন প্রয়োজন নেই তখনও যদি আপনি ঘনঘন স্যরি বলেন তাহলে আপনার চারপাশের মানুষ ধরেই নেবে আপনি আপনার কথাবার্তায় নিশ্চিত নন। এভাবে আপনার অফিসে আপনার অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আপনার চাকরি সুখকর হবে না।

* কথাবার্তায় পারদর্শী না হওয়া
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোনোকিছু উপস্থাপন করার ক্ষমতা না থাকলে আপনি আপনার অফিসে অদক্ষ কর্মী বলে আখ্যায়িত হতে পারেন। আপনি কিভাবে কি বলবেন তার ওপর আপনার ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি মানসিকতা নির্ভর করে এবং কর্মস্থলে এই গুণটি দ্বারা অনেক কিছুই জয় করে নেয়া যায়। আপনি যদি কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসাবোধক কিছু বলে ফেলেন তাহলে তা যাচ্ছেতাই বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

* আত্মবিশ্বাসের অভাব
আপনার কর্মস্থলে আপনার আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আত্মবিশ্বাসহীনতার সঙ্গে কোনো কাজ করলে আপনার কাজের প্রকৃতপক্ষে কোনো মূল্য থাকবে না। সবার সঙ্গে সুন্দর সাবলীল ভাষায় কথা বলা, হাতে হাত মেলানো, দৃষ্টিসংযোগ ঠিকঠাক রাখা আত্মবিশ্বাসের পরিচয়। মূলত আপনার আত্মবিশ্বাসই নির্ধারণ করে দেবে আপনি কতদূর যাবেন।

* উপকারীর উপকার মনে রাখুন
অধিকাংশ সফল ব্যক্তিগণ কারো না কারো সাহায্য নিয়েই অনেক উপরে উঠেছেন। অফিসে কেউ যদি আপনাকে কোনো কাজে সাহায্য করে থাকে বা আপনাকে কোনো ব্যাপারে সমর্থন করে থাকে তাহলে তার কথা মনে রাখুন এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। সাধারণত চাকরিজীবনে এভাবেই বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এভাবেই আপনি ব্যক্তিগতভাবে আপনার নিজস্ব একটি গ্রুপ তৈরি করে নিতে পারবেন।

* সত্যিকার অর্থে দলের সদস্য না হওয়া
আপনার কর্মস্থল প্রধান সবসময় চান আপনি প্রকৃতপক্ষে দলের সদস্য হয়ে দলগত কাজে অগ্রসর হোন। আপনি যদি সত্যিকার অর্থে দলের সদস্য না হয়ে কোনোরকম দায়সারা করে কাজ করেন তাহলে সবার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হবেন। সবাই যেটা করছে আপনার তা করতে ভালো না লাগলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কিছু করুন, নতুন কিছু আপনার কোম্পানিকে উপহার দিন। তাছাড়া আপনার দলের সদস্যদের মাঝে মাঝে মুখরোচক কিছু খাবার খাওয়ান। এতে করে সম্পর্ক আরো গভীর হয়। আপনি দলের হয়ে কাজ করলে একটা সময় আপনার সমস্যায় আপনার দলে সদস্যরা আপনাকে সাহায্য করবে। এভাবেই একটি দলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে যা চাকরিজীবনে আপনার ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে আসবে।

* কাজের সময় ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকা
অফিসে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত নানা কাজে সবাই টুকটাক সময় দিয়ে থাকে। কিন্তু সেটা যদি নিয়মিত এবং মাত্রাতিরিক্ত হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আপনার চাকরির বারোটা বাজবে। এতে করে প্রমাণিত হবে যে আপনি আপনার কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন এবং কোম্পানির গ্রাহ্যতা আপনার কাছে কম। সুতরাং মধ্যাহ্নভোজের সময় আপনার ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ভাবুন। এতে করে আপনার কাজের কোনো ক্ষতি হবে না বরং সময়টা ভালো কাটবে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়