ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

জনগণের আস্থা হারিয়েছে সরকার ও ইসি : মঞ্জু

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জনগণের আস্থা হারিয়েছে সরকার ও ইসি : মঞ্জু

সংবাদ সম্মেলন করছেন নগর বিএনপি সভাপতি ও কেসিসির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : ১০৫টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন এবং ৪৫টি কেন্দ্রে হওয়া গুরুতর অনিয়মের তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নৌকার জয় হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘খুলনাবাসী ভোট ডাকাতির নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র আরো সংকটে পড়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।’

নির্বাচন উত্তর প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ কথা বলেন। বুধবার সকাল ১০টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

‘কেসিসি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে, শেখ হাসিনার সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগনের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম আরো বেগবান হবে,’ বলেন মঞ্জু।

খুলনা সিটি নির্বাচনকে ‘নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির’ এক নতুন মডেল হিসেবে অখ্যায়িত করেন মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি প্রহসনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে নৈতিক পরাজয় হয়েছে সরকারের। নৈতিক পরাজয় হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। আর বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের চলমান আন্দোলনের।’

মঞ্জুকে নিয়েই পথ চলতে চান খালেক- বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বরাত দিয়ে ছাপা হওয়া এই নিউজ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রত্যাখ্যান করেন মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘তালুকদার আব্দুল খালেক ভোট ডাকাতির নির্বাচনের প্রধান ডাকাত। তাদের পাশে থেকে সহায়তা করার কোনো মানসিকতা নেই। এই শহরের মানুষ ভোটের দিন ভোট দিতে পারেনি। কেন্দ্রে গেলে বলা হয়েছে, ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। কারো কারো আঙুলে কালি লাগিয়ে বলা হয়েছে, বাড়ি চলে যান, আপনার ভোট হয়ে গেছে। কারো হাত থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলা হয়েছে। যে শহরের মানুষ ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেনি, তিনি কীভাবে ওই ভোটারদের সামনে যাবেন। তিনি কীভাবে তাদের সামনে মুখ দেখাবেন।’

নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘বনদস্যু, জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, খুনী, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে ডাকাতির উৎসবের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করেছে। এদেরকে পাশে নিয়ে তিনি কীভাবে মাদকমুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত নগরী গড়বেন।’

তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে নিয়োজিত করে ভোটের ফলাফল পক্ষে নেওয়া হয়েছে। বিজিবি ও র‌্যাব ছিল নিষ্ক্রিয়। তারা গাড়িতে বসে ঘুমিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ছিলেন নির্বিকার। আর পুলিশ ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। বিশেষ একটি ব্যাচের সকল পুলিশকে খুলনায় এনে একটি অভিজাত হোটেলে রাখা হয়। খুলনায় ডিউটি না থাকা সত্ত্বেও তারা ভোটের দিন সরকারি পোশাক পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা কাজ করেছে।’

সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আজ্ঞাবহ বলে অভিহিত করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি জানান, সারা দিনে নির্বাচনের নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করতে রিটার্নিং অফিসারকে অসংখ্যবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কেন্দ্রে না গিয়েই তারা বলে দিলেন, দুই/একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্টু, নিরপেক্ষ।’

মঞ্জুর অভিযোগ, যেসব ওয়ার্ডে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী সেই ওয়ার্ডগুলোই ছিল আওয়ামী লীগের টার্গেট। যে কারণে সকালেই ১৬, ১৭, ১৯, ২২, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় তারা। এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদান ছিল অব্যাহত।

তিনি বলেন, ‘কাটাকাটির ভোটে মেয়রের ব্যালট শেষ হয়ে যায়। কিন্ত কাউন্সিলরদের ব্যালট শেষ করতে পারেনি। মুড়ি বইতে ভোটারের স্বাক্ষর নেই, নেই পোলিং অফিসারের স্বাক্ষর। ব্যালটের পেছনে নেই গোল সিল।’

মঞ্জু আগামী সকল নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্তজা, শেখ মুজিবর রহমান, সৈয়দা নার্গিস আলী, বিজেপির সভাপতি লতিফুর রহমান লাবু, জাপা (জাফর) সভাপতি মোস্তফা কামাল, জামায়াতের শাহ আলম ও খান গোলাম রসুল, বিজেপির সিরাজউদ্দিন সেন্টু, মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার জাহান রুকু, খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নাসিরউদ্দিন, বিএনপি নেতা মোল্লা আবুল কাশেম, স ম আব্দুর রহমান, সৈয়দা রেহানা ঈসা, মনিরুজ্জামান মন্টু, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, এহতেশামুল হক শাওন, ইউসুফ হারুন মজনু, ইকবাল হোসেন খোকন, শামসুজ্জামান চঞ্চল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

রাইজিংবিডি/খুলনা/১৬ মে ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়