ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রশিদ-সাকিবে ফাইনালে হায়দরাবাদ

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রশিদ-সাকিবে ফাইনালে হায়দরাবাদ

ক্রীড়া ডেস্ক : টানা চার ম্যাচে জয় কলকাতা নাইট রাইডার্সের। রীতিমতো উড়ছে তারা। অন্যদিকে টানা চার ম্যাচে হার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের। ছন্দহীনতায় ধুকছে তারা। এমন সময়ে বিখ্যাত ইডেন গার্ডেনে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে শুক্রবার রাতে মুখোমুখি কলকাতা ও হায়রদরাবাদ। জয় ভিন্ন অন্য কোনো বিকল্প খোলা নেই দুই দলের সামনে।

এক দলকে হারতেই হবে। পেন্ডুলামে দুলতে দুলতে শেষ পর্যন্ত হার মানা দলটির নাম হল কলকাতা নাইট রাইডার্স। রশিদ খান ও সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপূণ্যে ১৪ রানে কলকাতাকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পৌছে গেছে হায়দরাবাদ।

প্রথম কোয়ালিফায়ারের মতো এই ম্যাচেও টস হারলেন হায়দরাবাদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। কেকেআরের অধিনায়ক দিনেশ কার্তিক টস জিতে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানালেন উইলিয়ামসনকে। আগের ম্যাচে রান না পাওয়া টপ অর্ডার এবার অবশ্য খুব একটা খারাপ করেনি। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ রান তোলেন ঋদ্ধিমান সাহা ও শিখর ধাওয়ান। এরপর কুলদীপ যাদবের বলে দিশেহারা হয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ধাওয়ান (২৪ বলে ৩৪ রান)।

অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও সুবিধা করতে পারলেন না। ৩ বল খেলে মাত্র ৩ রান করে দলীয় ৬০ রানের মাথায় সেই কুলদীপের বলেই উইকেটরক্ষক কার্তিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। সাকিব আল হাসানকে পদোন্নতি দিয়ে চার নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয়। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ। সাকিব ও সাহা দুজন দেখে-শুনে খেলে দলকে চাপ থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৮৪ রানের মাথায় সাহা ২৭ বলে ৩৫ রান করে ফিরে গেলে এক প্রকার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় অরেঞ্জ আর্মিরা।

বিনা উইকেটে ৫৬ থেকে ৮৪ রানে যেতেই টপ অর্ডারের তিনজন ব্যাটসম্যান নেই! দেখে-শুনে খেলতে থাকা সাকিব ১১৩ রানের মাথায় দুঃর্ভাগ্যজনকভাবে সাজঘরে ফেরেন। ২৪ বলে ২৮ রান করা সাকিবের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। দীপক হুদার স্ট্রেইট ড্রাইভ কলকাতার বোলার কুলদীপ যাদবের হাত ছুঁয়ে গিয়ে স্ট্যাম্পে লাগে। সাকিব তখন নন স্ট্রাইক প্রান্তের ক্রিজের সামান্য বাইরে! বলটি হুদার হাত ছুঁয়ে না আসলে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু হাত ছুঁয়ে আসায় সাকিব আউট! আরো বিপাকে পড়ল হায়দরাবাদ।



যখন রান তোলার প্রয়োজন ছিল ঠিক তখন (১৬.৫ থেকে ১৮.১ ওভারে) দ্রুত আরো তিনটি উইকেট হারায় উইলিয়ামসন বাহিনী। ১২৪ রানের মাথায় হুদা (১৯), ১৩৪ রানের মাথায় কার্লোস ব্রাফেট (৮) ও ১৩৮ রানের মাথায় ইউসুফ পাঠান (৩)। ১৮.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে হায়দরাবাদের রান মাত্র ১৩৮। ক্রিজে যখন স্বীকৃত বোলার রশিদ খান ও ভুবনেশ্বর কুমার তখন শেষ ১১ বলে আর কত রানই আসবে? বড়জোড় ১৫ থেকে ২০! তাতে হায়দরাবাদের সংগ্রহ ১৫০ ছাড়ায় কী ছাড়ায় না। কিন্তু স্বীকৃত বোলার হয়েও স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের কাজটি করেছেন রশিদ খান। তাকে যোগ্য সহায়তা দিয়েছেন কুমার।

রশিদ খান ক্রিজে নেমে মাত্র ১০টি বল খেলার সুযোগ পান। তার মধ্যে চারটিকে ছক্কায় পরিণত করেন। ২টি করেন বাউন্ডারি ছাড়া। ৩৪০ স্ট্রাইক রেটে তোলেন ৩৪ রান। তার সঙ্গে ভুবনেশ্বর কুমার ২ বলে ১ চারে করেন ৫ রান। তাতে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় হায়দরাবাদ।

১৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্তই হয়েছিল কলকাতার। নারিন ও ক্রিস লিন ৩.২ ওভারেই তোলেন ৪০ রান। এরপর নারিন ১৩ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ২৬ রান করে আউট হলেও রানের চাকা থামেনি। লিন ও নিতিশ রানা দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। উইলিয়ামসন ভুবনেশ্বর কুমার, খলিল আহমেদ, সিদ্ধার্থ কল, রশিদ খান ও কার্লোস ব্রাফেটকে দিয়ে প্রথম ৮ ওভার করান উইলিয়ামসন। তারা চারজন ৮ ওভারে ৮১ রান দেন। উইকেট নেন মাত্র ১টি।



নবম ওভারে সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন উইলিয়ামসন। তার করা তৃতীয় বলেই রান আউটে কাটা পড়েন নিতিশ রানা। রশিদ খানের বুদ্ধিদীপ্ত ঝটপট থ্রোতে বল পেয়ে উইকেট ভেঙে দেন ঋদ্ধিমান সাহা। নবম ওভার করেন কুমার। দশম ওভারে আবার রশিদ খানকে আনেন উইলিয়ামসন। রশিদ খান এসেই রবীন উথাপ্পাকে বোল্ড করেন। এরপর সাকিব-রশিদ টানা ওভার করতে থাকেন। রান কম দেওয়ার পাশাপাশি উইকেট তুলে নিতে থাকেন। তাতে দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকা কলকাতা চাপে পড়ে যায়।

পরের ওভারে সাকিব বোল্ড করে ফেরান দিনেশ কার্তিককে। ত্রয়োদশ ওভারে লিনকে এলবিডব্লিউ করেন রশিদ খান। ১৫তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে আউট করেন রশিদ। তাতে ১ উইকেট হারিয়ে ৮ ওভারে ৮১ রান তোলা কলকাতা ১৫ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৮ রানে গিয়ে দাঁড়ায়। শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। কিন্তু আরো তিনটি উইকেট হারিয়েও তারা সেটা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৬০ রানে থামে তারা। হায়দরাবাদ জয় পায় ১৪ রানে। চলে যায় স্বপ্নের ফাইনালে।



ব্যাট হাতে ১০ বলে ৩৪ ও বল হাতে ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রশিদ খান। সাকিব আল হাসান ২৮ রান করার পাশাপাশি ৩ ওভার বল করে ১৬ রান দিয়ে নেন ১টি উইকেট।

আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে হায়দরাবাদ ও চেন্নাই।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৮/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়