ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা ছাড় পাবে না’

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৪ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা ছাড় পাবে না’

বিশেষ প্রতিবেদক : ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ খাতে যারা বিশেষ অবদান রাখছেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

রোববার রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সিপিডি বাজেট ডায়ালগ ২০১৮’ এ প্রধান অতিথির ভাষণে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কথা বলেন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির, সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার চলছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে কেউ আর ব্যাংকিং খাতে কোনো ধরনের নেতিবাচক বেআইনি কাজ করার সাহস পাবে না। শুধু দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত নয়, সংস্কার এনে ভালোদের পুরস্কৃত করা হবে। আর খারাপরা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পাওনা আদায় করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের সময় কত মাস ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাওয়া যায়নি। আমাদের সময় অনিয়ম হয়নি, এমন কথা বলব না। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার আনা হবে, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো শক্তিশালী করা হবে।

ব্যাংক খাতের করপোরেট কর কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স অনেক বেশি। এ ট্যাক্স নেট যদি আমরা না কমাই তা হলে বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে কেন?

২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশ ঋণ দেবে, এ কথা উল্লেখ করে মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২৩ সাল নাগাদ আমাদের আর অন্য দেশ থেকে টাকা ধার করতে হবে না। আমরা বরং টাকা ধার দেব। চীন আমাদের ঋণ দিচ্ছে, অথচ ওদের ঋণের পরিমাণ জিডিপির তুলনায় ১৮৫ শতাংশ। ১০০ শতাংশের নিচে কোনো দেশে নেই। আমার লেখাপড়া যদি সত্য হয়, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা আশপাশের দেশকে ঋণ দেব।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে পাবলিক-প্রাইভেট মিলিয়ে দেড় শ’র মতো ব্যাংক আছে। টাকা নেই বলে কোনো ব্যাংকেই কোনো চেক রিটার্ন হয়নি। ফারমার্স ব্যাংককে আমরা হাতে নিয়েছি। এটা লুটপাট এবং শেষ হয়ে গেল, এমন মন্তব্য করার সুযোগই এ মুহূর্তে নেই।

তিনি বলেন, যারা বেকার রয়েছেন তারা এ কাজ করবে না, ময়মনসিংহ যাবে না, গুলশানে না হলে যাবে না, আইটি সেক্টরে কাজ করবে না। আমাদের লেবার যারা, কোথাও বেকার নেই। কতো ধরনের ব্যবসা যে এই মুহূর্তে ঢাকায় আছে- উবার, পাঠাওসহ সাইকেল উবারও বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, যারা বেকার আছে তারা ইচ্ছা করেই বেকার।

এর আগে প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু বলেন, ইদানিং দেশের পাঁচ শতাংশ লোকের আয় কত গুণ বেড়েছে তা আমরা জানি না। তবে যা বেড়েছে তা অবিশ্বাস্য। তারা সারা বিশ্বে বাড়ি-ঘর কিনছে। তাদের টাকা রাখার জায়গা নেই। সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে এ পাঁচ শতাংশ মানুষকে ট্যাক্সের আওতায় আনা গেলে এনবিআরের ট্যাক্স আদায় বহু গুণ বাড়বে।

তিনি বলেন, যারা ব্যাংক লুট করছে, আপনারা তাদের ট্যাক্স কমিয়ে দিচ্ছেন। আবার যারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। ব্যাংকিং ডিভিশন বলে আপনারা যে জিনিসটা তৈরি করেছেন, এটাকে অবলোপন করে দেন। দয়া করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাদের কাজগুলো ঠিকমতো করতে দেন।

একটি হোটেলে ব্যাংক মালিকদের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যাওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে হোটেলে নিয়ে সিআরআর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চিন্তা করেন, ইনস্টিটিউটশন কোথায় গেছে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত। সেই গভর্নরকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হোটেলে। সে হোটেলে কারা ছিলেন? সব ব্যাংকের মালিকরা বসে আছে। তাদের বড় অংশই ব্যাংক লুটেরা। ব্যাংক লুটপাট করে এমন জায়গায় নেওয়া হয়েছে যে তারা আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে পারছেন না।

নতুন অর্থবছরের (২০১৮-২০১৯) প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে ব্যবসায়ী নেতা মনজুর আহমেদ বলেন, এ বাজেট শুধু ব্যবসায়ীবিরোধী নাই, এটা সরকার বিরোধী বাজেট। যারা ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছেন এবং যারা ট্যাক্স দিচ্ছেন না তাদের মধ্যে বিরাট গ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজস্ব বাড়াতে হলে করজাল বাড়াতে হবে। আমরা এজন্য প্রন্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম। কিন্তু বাজেটে তার কোনো প্রতিফল হয়নি।

এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ৩২ বছর ধরে আমরা আর্থিক খাতের সংস্কারের কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু সেই সংস্কার আসছে না। সংস্কার না হওয়ায় অর্থনীতি ডায়বেটিস রোগীর দিকে চলে যাচ্ছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়