ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৪৪৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১১ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪৪৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

বিশেষ প্রতিবেদক : চার হাজার ৪৯১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি।

এর মধ্যে তিন হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ই-পাসপোর্ট ছাপানো এবং ছাপানোর মেশিন ক্রয়ের একটি প্রস্তাব রয়েছে।

বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বৈঠকে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যন্ত্রে অপাঠযোগ্য কাগুজে পাসপোর্টের দিন শেষ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। সে জায়গায় যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু করা হয়। সে ধারণাও প্রায় বিলুপ্তির পথে। কারণ, যুগ এখন ইলেকট্রনিক বা ই-পাসপোর্টের। ইতিমধ্যে বিশ্বের ১১৯টি দেশে চালু হয়ে গেছে এই পাসপোর্ট। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। আগামী ডিসেম্বর থেকে চালু হতে পারে ই-পাসপোর্ট।

সরকারের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গত ৫ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পাশ হয়। এর আগে ১৫ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে সরকারিভাবে বাংলাদেশকে কারিগরিসহ সব ধরনের সহায়তা দেবে জার্মানি।

বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অটোমেটেড বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২ মিলিয়ন পাসপোর্ট বুকলেট ক্রয় এবং ২৮ মিলিয়ন পাসপোর্ট তৈরির সব উপাদানসহ আনুসঙ্গিক হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার ও দশ বছরের রক্ষণাবেক্ষণসহ সব সেবা ক্রয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাব কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এসব পণ্য ও সেবা জিটুজি (সরকার টু সরকার) ভিক্তিতে সরাসরি জার্মানি থেকে ক্রয় করা হবে।

তিনি বলেন, বৈঠকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের একটি প্যাকেজের আওতায় ৫০ হাজার টন গম আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন গমের দাম ২৫৬ দশমিক ৩৮ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক এগ্রোকর্ক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ গম সরবরাহ করবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈঠকে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের (বাংলা, ইংরেজি ভার্সন) ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল  (ভোকেশনাল) এবং কারিগরি  (ট্রেড বই) স্তরের ১৮৮টি লটের বিনামূল্যেও পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ  (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট ১৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৩ টি বইয়ের জন্য মোট ব্যয় হবে ৪৩৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

বৈঠকে ‘পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের সংযোগ নদী খনন, সেচ সুবিধার উন্নয়ন এবং মৎস্য চাষ (৩য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট কর্তৃক তালিমনগর পাম্প হাউজ নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ৫০ কোটি ২৭ লাখ টাকার কাজ বেশি হওয়ায় প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ঢাকা শহরে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্পেনের একটি কোম্পানিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির কাছ থেকে নিতে মোট ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন (উপখাত, লাইব্রেরি ভবন, অডিটরিয়াম ভবন, পাবলিক  প্লাজা, ফুড গার্ডেন, মিউজিয়াম ও ক্যাফে ভবন, ব্যাক স্টেজ, উন্মুক্ত মঞ্চ, ভূগর্ভস্থ জলাধার ও পাম্প হাউজ, গভীর নলকূপ এবং লিফট সরবরাহ) কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রামে হালিশহর হাউজিং  এস্টেটের ‘জি’ ব্লকে সীমিত আয়ের লোকদের জন্য ৩১২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (৪র্থ পর্ব)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একটি বেইজমেন্টসহ ১৪ তলা বিশিষ্ট ৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট বিল্ডিং নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কাঞ্চন ব্রিজ থেকে বালু ব্রিজ পর্যন্ত পূর্বাচল সংযোগ সড়কের অবশিষ্ট নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার কাজ হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এছাড়ও বৈঠকে কুষ্টিয়া শিলাইদহে গড়াই নদীর ৩৭২০ মিটার তীর সংরক্ষণের কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পে ৯ কোটি ৬ লাখ টাকার কাজ কম হওয়ায় মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।

এছাড়া ভারত থেকে স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ আমদানির ট্যারিফ প্রস্তাব বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংকান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে ‘গাবতলী-নবীনগর ৪-লেইন মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ জুলাই ২০১৮/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়