ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অসম সাহসী এক বীর সন্তান

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২০ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অসম সাহসী এক বীর সন্তান

শাহ মতিন টিপু: ‘ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’ করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে একটি কবরের সামনে এই শব্দ ক’টি লিখে রেখেছিল পাকিস্তানিরা। যার কবরের সামনে লেখা তিনি আমাদের সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র একজন।

হ্যাঁ তিনিই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান।১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

প্রায় ৩৫ বছর ওই কবরেই শায়িত ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান।২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫ জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম। মানুষটি ছিলেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত খাঁটি। আপাদমস্তক সাহসী এই বীরের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

দেশমাতৃকার টানে নিজের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ, পরিবার-পরিজন কোনো কিছুই তার কাছে বাধা হয়ে উঠতে পারেনি। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে তিনি দেশমাতৃকাকে বাঁচাতে ছুটে এসে শহীদ হন।

মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর সপরিবারে দুই মাসের ছুটিতে ঢাকা আসেন। ২৫ মার্চের কালরাতে মতিউর ছিলেন রায়পুরের রামনগর গ্রামে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সঙ্গে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুলেন। যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তোলেন একটি প্রতিরোধ বাহিনী।

নিয়মিত কাজের আড়ালে তিনি একটি বিমান ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা করতে থাকেন। তিনি করাচিতে ফিরে যান। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শুক্রবার ফ্লাইট সিডিউল অনুযায়ী মিনহাজের উড্ডয়নের দিন করাচির মৌরীপুর বিমান ঘাঁটিতে তাঁরই এক ছাত্র রশীদ মিনহাজের কাছ থেকে একটি জঙ্গি বিমান ছিনতাই করেন। কিন্তু রশীদ এ ঘটনা কন্ট্রোল টাওয়ারে জানিয়ে দিলে, অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। এ সময় রশীদের সঙ্গে মতিউরের ধস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রশীদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন এবং রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে উড্ডয়নের উচ্চতা কম থাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের সঙ্গে প্যারাসুট না থাকায় তিনি প্রাণ হারান। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা-মাইল দূরে পাওয়া যায়। বলা হয়, মতিউর রহমান ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে ছিলেন। স্বাধীনতাও ছিল মতিউরের কাছ থেকে তখন মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে।

মিনহাজের দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও মতিউরের দেহ প্রায় অবিকৃত থেকে যায়। পাকিস্তান সরকার রশিদ মিনহাজকে জাতীয় বীর হিসেবে নিশান-ই-হায়দার উপাধিতে ভূষিত করে আর মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে করাচিতে মাসরুর এয়ার বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের গোরস্তানে কবর দেওয়া হয়।

দেশমাতৃকার জন্য জীবন বিসর্জন দেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান আজ বাংলাদেশের গর্ব।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়