ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কোরবানির গরু বা ছাগল কেনার পর করণীয়

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২০ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোরবানির গরু বা ছাগল কেনার পর করণীয়

প্রতীকী ছবি

ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান : ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। ইতিমধ্যে অনেকে কিনে ফেলেছেন পছন্দের কোরবানির পশু। আবার অনেকেই আজ বা আগামীকালের মধ্যে কিনবেন। তাই কোরবানির পশুর হাট এখন সরগরম।

কোরবানির পশু কেনার পর থেকে নিয়ে কোরবানির দিন পর্যন্ত একটু যত্নের প্রয়োজন হয়। আপনার পছন্দের পশুকে যেন শেষ পর্যন্ত সুস্থতার সঙ্গে কোরবানি করতে পারেন, সে প্রসঙ্গেই এ লেখা। কোরবানির পশু কেনার পরে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয় তা হল:

* বিশ্রাম : সাধারণত শহরের হাটে আসা গরুগুলো অনেক দূর থেকেও আসে। দীর্ঘ সময় তারা যানবাহনের মধ্যে অবস্থান করে। তার পরে আবার এখন প্রচন্ড গরমে পশুদের নাভিশ্বাস অবস্থা। তাই কেনার পরে বাসায় নিয়ে এসে প্রথমে তার দুই পায়ে জীবাণুনাশক দিয়ে ক্ষুরগুলো ধুয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট বা পভিডন আয়োডিনের দ্রবণ ভালো কাজ করে। এরপর পরিষ্কার পানি সেবন করতে দিতে হবে। বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করতে হবে। ঠান্ডা পরিবেশে ফ্যান দিয়ে পশুকে বিশ্রামের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। এতে পশুর ধকল কাটাতে সুবিধা হয়। 

* গোসল করানো : কেনার পর গোসল করালে প্রাণীর ক্লান্তি দূর হয়ে প্রশান্তি আসে। তাছাড়া প্রত্যেহ গোসল করানো উত্তম। এতে করে পশমগুলো ভালো থাকে এবং খাবার গ্রহণে আগ্রহ ভালো থাকে। থাকার স্থানটা পরিষ্কার রাখা উত্তম। এই গরমে দিন ২-৩ বার পর্যন্ত গোসল করানো যায়। মাঝে মাঝে সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চামড়া ও পশমের ময়লা পরিস্কার করলে চামড়া ভালো মানের হয়ে থাকে। 

* বাসস্থান : গরু বা ছাগলের থাকার ব্যবস্থাটা ভালো রাখা জরুরি। অপরিষ্কার ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রাখলে নানা সমস্যা হতে পারে। রাতের বেলায় মশার হাত থেকে রক্ষার জন্য মশারি বা মশার কয়েল দিতে হবে। কয়েল দিলে সতর্কতার সঙ্গে রাখতে হবে। একটু অসতর্কতায় অনেক বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটে থাকে। শহরে পশুর বাসস্থানের সমস্যা বেশি হয়, তাই সবদিক বিবেচনায় যথাযথ জায়গা দেখে পশুকে রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে। 

* খাবার প্রদান : বাজার থেকে কেনা গরু বা ছাগলের প্রথম যে সমস্যাটা সবাই বলে থাকেন, তা হল খাবার গ্রহণে অনীহা। এর কয়েকটা কারণ হতে পারে- নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো এবং তার পূর্বের খাদ্যাভ্যাস না জানা। এক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে পছন্দ করে এমন খাবারগুলো অল্প অল্প করে দিয়ে অভ্যাস করতে হয়। পরিষ্কার পানি, গমের ভুষি, সরিষায় খৈল এবং চালের গুড়া দেয়া যায়। ছাগলের ক্ষেত্রে অল্প পরিমানে ভাত, কাঠালের পাতা, চালের গুড়া ও গম ভাঙা দেয়া যেতে পারে। না হলে কিছু রুচিবর্ধক দেয়া যাবে। বর্তমানের ভালো কোম্পানির রেডি ফিড প্রায় সকল পশু ভালো ভাবে খেয়ে থাকে। তাই দৈহিক ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে  ভালো কোম্পানির ফিড খাওয়ানো যেতে পারে।

* অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা : বাজার থেকে আনার পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে ভেটেরিনারি সার্জন বা রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে কেনার আগেই সন্দেহ থাকলে ভালোভাবে পরামর্শ নিয়ে কিনা ভালো।

* আলাদা জায়গায় রাখা : গরু ও ছাগলের আলাদা আলাদা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণ ভালো থাকে। জায়গার স্বল্পতা থাকলে পর্দা দিয়ে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা ভালো৷

* শরীর পরিষ্কার ও গ্রুমিং করা : গরু বা ছাগলের শরীর প্রত্যেহ পরিষ্কার রাখুন। মাঝে মাঝে চিরুনি দিয়ে পশমগুলো পরিষ্কার করতে হবে, এতে করে শরীরে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ফলে বৃদ্ধি ভালো থাকে।

* অতিরিক্ত গরমে ফ্যানের ব্যবস্থা করা : অতিরিক্ত গরমে ফ্যানের ব্যবস্থা করলে গরু বা ছাগল প্রশান্তিতে থাকে।

* পচা ও বাসি খাবার দেয়া থেকে বিরত থাকা : পচা ও বাসি খাবার সরবরাহ করলে গরু বা ছাগলের পেট ফাঁপা রোগ হতে পারে। যা আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। তাই পরিষ্কার ও টাকটা খাবার এবং বিশুদ্ধ পরিষ্কার পানি খেতে দিতে হবে। খাদ্যজনিত সমস্যা গরমে খুব বেশি হয় তাই এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

এসব ব্যবস্থা নিলে আপনার কোরবানির পশু থাকবে সুস্থ ও নিরাপদ।

লেখক : ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন, মাস্টার্স ইন প্যাথলজি, হাবিপ্রবি।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়