ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাতে সময় একমাস, প্রস্তুতি নিন : বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাতে সময় একমাস, প্রস্তুতি নিন : বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি আদায় করতে বিএনপির হাতে একমাসের মতো সময় আছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

আন্দোলন ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না জানিয়ে এজন্য নেতা-কর্মীদের ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে এক প্রতীকী অনশনে বসেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকেই দলের শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্যে দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনকেই প্রধান্য দিয়েছেন।

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু তিনি এই সরকারের কারাগারে রয়েছেন সেহেতু তাকে সুচিকিৎসা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। আগে তার সুস্থ হওয়া প্রয়োজন।’

অবিলম্বে বিএনপি নেত্রীর মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বাক্সে বন্দি করে রেখেছে। আজকে সব রাজনৈদিক দলকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। এজন্য সবার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি দরকার।’

দেশ-বিদেশের সবাই বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় উল্লেখ করে বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, ‘এজন্য খালেদা জিয়া বা বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নীলনকশা করছে সরকার। কিন্তু এবার সেই নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার আতঙ্কিত। এজন্য গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানি করছে। পুলিশ প্রশাসনকে বলবো, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আপনাদের ভবিষ্যতে অন্য সরকারের অধীনে কাজ করতে হবে। সুতরাং এই সরকারের কথায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করবেন না।’

এ সময় তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচনকালীন সময়ে সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন তিনি। সব রাজনৈতিক দলকে এই ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।

খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে বিষয়টিকে অসাংবিধানিক হিসেবে অভিহিত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

তিনি বলেন, ‘কারাগারে আদালত বসানো অসাংবিধানিক। তার ছয় মাস কেন ছয়দিনও জেলে থাকার কথা নয়। উচ্চ আদালত জামিন দিলেও সরকার নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে তার জামিন আটকে দিয়েছে।’

‘এজন্য আমি মনে করি আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়, রাজপথই একমাত্র সমাধান। এজন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সময় বেশি নেই। একমাস হাতে আছে। এর মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার আন্দোলন সফল না করে কেউ বাড়ি ফিরে যাবে না। এমন কর্মসূচি আসবে যাতে সরকারের নৌকা পানিতে ভেসে যাবে।’

গ্রেপ্তার-হামলা-মামলা করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমানো যাবে না জানিয়ে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়েই তারা ঘরে ফিরবে।

খালেদা জিয়াক ছাড়া এদেশের কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। কারণ  তাদের অধীনে ভোট দেয় পুলিশ আর তাদের নেতা-কর্মীরা। সাধারণ জনগণ ভোট দিতে পারে না। তাই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।’

এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘১/১১ এর মেতা বেঈমানি করে কেউ যদি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলে তাহলে রাজপথে নেমে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’

বিএনপির আরেক নীতি নির্ধারক ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছেই। কিন্তু কোনোভাবেই সরকার সফল হচ্ছে না। তারা ভেবেছিল খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে গেলেই বিএনপির দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। দেশের মানুষ খালেদা জিয়া কারামুক্ত করে নির্বাচনে জয়ী করে তাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করবেন।

ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, এজন্য গণতান্ত্রিক বৃহৎ আন্দোলন দরকার। সেই প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনশনে বিএনপির নেতাদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন সেলিমা রহমান, আহমদ আজম খান, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়েল ভুইয়া, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, ফজলুর হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলেল রাজীব আহসান প্রমুখ।

২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে লেবার পার্টিল মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার লুৎফর রহমান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরোয়ার।

সকাল ১০টায় অনশন শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি নেতাদের পানি পান করান। এর মধ্য দিয়ে প্রতীকী অনশন শেষ হয়।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ /রেজা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়