ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বুধবার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বুধবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলায় কাল বুধবার রায়ের দিন ধার্য রয়েছে।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ঠিক করা হয়।

মামলা দুইটিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের  এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ডের অভিযোগে বিচার হয়েছে।

দুই মামলায় মোট আসামি ছিল ৫২ জন। বিচার চলাকালীন সময়ে আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এজন্য বর্তমানে মামলা দুইটিতে মোট আসামি ৪৯ জন।

মামলা দুইটিতে তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০-বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় চার্জগঠন হয়।

দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় মানুষ হত্যার অভিযোগে এবং ১২০-বি ধারায় হত্যার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের উভয় ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রাণহানির অভিযোগে এবং ৬ ধারায় অর্থ, পরামর্শ ও বিস্ফোরক দিয়ে সহায়তার অভিযোগে একই দণ্ডের বিধান রয়েছে। দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ও ১২০-বি ধারায় এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড  ও সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হতে পারে।

অন্যদিকে আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরীসহ ৬ সরকারি  কর্মকর্তার সর্বোচ্চ ৭ বছর এবং সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদাসহ ৫ জনের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের  ধারার অভিযোগে বিচার হয়েছে।

দণ্ডবিধির ১২০-বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় বিচারচলা ৩৮ হলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি দলীয় ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হানিফ এন্টার প্রাইজের মালিক মো. হানিফ, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে বাতুল বাবু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুনছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও লিটন ওরফে মাও. লিটন।

সর্বোচ্চ ৭ ও ৫ বছর কারাদণ্ডের ধারায় বিচার চলা ১১ আসামি হলেন-সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, সাবেক ডিসি পূর্ব মো. ওবায়দুর রহমান, সাবেক ডিসি দক্ষিণ খান সাইদ হাসান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি পরবর্তীতে আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, তদন্ত ভিন্নখাতে নেওয়া ৩ তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ।

ওই ১১ সরকারী কর্মকর্তার মধ্যে আসামি আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক, ডিউক, সাইফুল ইসলাম ও এটিএম আমিনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১২ ও ২১৭ ধারায় চার্জগঠন হয়। দণ্ডবিধির ২১২ ধারায় মুত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদদণ্ডে অভিযুক্ত আসামিদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে দণ্ডবিধির ২১৭ ধারায় কোন ব্যক্তিকে শাস্তি হতে বাঁচানোর জন্য সরকারি কর্মকর্তা হয়েও আইনের বিধান পালন না করার অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আসামি ওবায়দুর রহমান ও খান সাইদ হাসানের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয় দণ্ডবিধির ২০১, ২১২ ও ২১৭ ধারায়। দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণ অদৃশ্য করে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগে অপরাধটি মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছর এবং যাবজ্জীবন অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই ধারায় সর্বনিম্ন  শাস্তির কথা বলা নাই। যা আদালতে ইচ্ছাধীন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। এই দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন হওয়া অপর দুই ধারার শাস্তির বিষয়ে ওপরে আলোচনায় বর্ণিত আছে।

আসামি খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, মুন্সি আতিক, আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয় দণ্ডবিধির ২১৮ ও ৩৩০ ধারায়।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিত নেতাকর্মী। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন।

মামলার প্রথম চার্জশিটের সাবেক উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ আসামির বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর চার্জগঠন করে ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তে তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ চার্জগঠন করা হয়। গত বছরের ৩০ মে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। গত ১২ জুন মামলাটিতে জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি শুরু হয়, যা গত ১১ জুলাই শেষ হয়। আত্মপক্ষ শুনানিতে জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর শুরু হয় সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ। কারাগারে থাকা ২৩ আসামির মধ্যে ২০ জন আসামি সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করেন। গত বছর ১১ অক্টোবর মামলা দুইটিতে আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপরই ২৩ অক্টোবর থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়