ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ১১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ

কেএমএ হাসনাত, বালি, ইন্দোনেশিয়া থেকে : বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ২০০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাশাপাশি মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ঋণ পাওয়া গেলেও নতুন করে অনুদান পাওয়া নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ-এর বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী দিনের বিভিন্ন কর্মসূচি শেষে বালি ওয়েস্টিন হোটেলে নিজ কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এসময় বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূইঞা, ইআরডি সিনিয়র সচিব শফিকুল আজম, ভারপ্রাপ্ত অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) আজমল কবির উপস্থিত ছিলেন। বালিতে ১২ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার বালির ওয়েস্টিন হোটেল স্যুইটে বিশ্ব ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তার বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সংস্থাটির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ  নিয়ে আমিও কথা বলেছি। এতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলমান প্রচেষ্টা বেগবান হবে।’

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘সংস্থাটি ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিন বছরের জন্য সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল। তা আমরা দুই বছরেই খরচ করে ফেলেছি। নতুন করে বাকি এক বছরের জন্য আমরা আরো সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার চেয়েছি। পুরোটা পাওয়া না গেলেও আশা করছি নতুন করে দুই বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আফ্রিকার অনেক দেশই নির্দিস্ট সময়ে ব্যয় করতে পারেনি। ওইসব দেশ থেকে ঋণের অর্থ ফেরত এনে আমাদের ঋণ সহায়তা দেবে। ’

আইএমএফ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ‘আইএমএফ-এর সঙ্গে আমাদের তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে খেলাপি ঋণ নিয়ে তাদের সঙ্গে একটি বিষয় রয়েছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই খেলাপি ঋণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবো। পরবর্তী সময়ে যে সরকার আসবে তাদের পক্ষে খেলাপি ঋণ নিয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে।’

বুধবার সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান অর্থমন্ত্রী ইন্দ্রাবতী মূলায়নি বৈঠক করেন। এ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সকালে আমার বৈঠক হয়েছে। এক সময় তিনি বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান। এখনো তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী।’

মুহিত বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আমাদের প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে। এক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে। কেননা, দেড় বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার মধ্যে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার আমরা আমদানি করি আর হাফ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাকে বাংলাদেশ থেকে আরো পণ্য আমদানি করার অনুরোধ করেছি।’

বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির (এমআইজিএ) সিইও কেইকো হোন্ডার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পে সংস্থাটি অর্থায়ন করছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে তাদের সহযোগিতা বেশি। আমি তাদের ঋণ সহায়তা বহুমুখী করা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছি। তারা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছি।’

সম্মেলন উপলক্ষে বালিতে আসা কমনওয়েলথভুক্ত দেশের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ‘কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে এখন বাংলাদেশের চাওয়ার আর কিছু নেই। তবে ছোট ছোট দেশগুলো তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকে। বৈঠকে আমি তাদেরকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। কারণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।’

বিশ্ব ব্যাংকের অপর সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫/৬ বছরে বাংলাদেশে তাদের পোর্টফোলিও অনেক বড় হয়েছে। তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সংস্থাটি বলেছে বাংলাদেশে একটি প্রকল্প গুছিয়ে আনতে অনেক সময় লেগে যায়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজধানী ঢাকা বর্তমানে অত্যন্ত জনবহুল নগরীতে পরিণত হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেনি। ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। আমি তাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীর মত ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে সহায়তা চাইলে তারা এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ অক্টোবর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়