বোলিং বৈচিত্র্য অকুতোভয় মিরাজের সাফল্যের রহস্য
ক্রীড়া প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের আবির্ভাবই জানান দিয়েছিল তার ভবিষ্যত। বল হাতে তার দ্যুতি ছড়ানো শুরু প্রথম সিরিজেই। সাম্প্রতিক সময়ে সেই ধারাবাহিকতা দারুণ। জাতীয় দলের অপরিহার্য যোদ্ধা মিরাজ।
সবশেষ এশিয়া কাপে বল ও ব্যাট হাতে দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন তরুণ তুর্কী। আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজে তার থেকে একই পারফরম্যান্সের প্রত্যাশায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। জ্বর থেকে সেরে উঠে আজই অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন মিরাজ।
অনুশীলনের ফাঁকে কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। সিরিজ নিয়ে নিজের পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মিরাজ। রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য তা দেওয়া হল:
প্রশ্ন : দলের সেরা স্পিনার সাকিব নেই। আপনার ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে নিশ্চয়ই। আপনি কি ভাবছেন এই ব্যাপারে?
মেহেদী হাসান মিরাজ : আসলে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, সাকিব ভাই আমাদের সাথে নেই। তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে দলে ফিরবেন। আর এটা চাপ না। এটা আমার কাছে বাড়তি দায়িত্বের মতন। যেহেতু সাকিব ভাই নেই, দায়িত্ব থাকবে বোলিংটা আরেকটু বেশি ভালো করার। পাশাপাশি যারা স্পিনার আছেন, তাদেরকে উৎসাহ দিব আরও ভালো করার।
প্রশ্ন : সাকিব না থাকায় নিজেকে দলের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার ভাবেন?
মেহেদী হাসান মিরাজ : সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। আমার এমন কোন অনুভূতি আসে না। সাকিব ভাই যখন খেলে, তখন চেষ্টা করি অলরাউন্ডার হিসেবে দলের জন্য ছোট ছোট অবদান রাখার। তিনি অনেক উঁচু মানের ক্রিকেটার। তিনি বাংলাদেশকে অনেক দিন সার্ভিস দিয়ে আসছেস। তিনি দীর্ঘদিন র্যাঙ্কিংয়ে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার ছিলেন। তাঁর সাথে আসলে আমার তুলনা চলে না (হাসি)।
প্রশ্ন : ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বোলিংয়ে বেশ উন্নতি হয়েছে। বোলিং নিয়ে কি কাজ করেছেন?
মেহেদী হাসান মিরাজ : আমার কাছে মনে হয় আমি পূর্বের চিন্তার তুলনায় এখন একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করছি। কিভাবে কি করতে হবে, এইসব নিয়ে মানসিকভাবে একটু শক্ত হয়েছি। আর বোলিংয়ে কিছু ভেরিয়েশন এনেছি, ওইগুলো হয়তো কাজে দিচ্ছে।
প্রশ্ন : ভেরিয়েশন সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলুন…
মেহেদী হাসান মিরাজ : আমি আগে প্রায় সময় এক গতিতে বল করতাম। সিমের পজিশন একটু অন্য রকম ছিল আগে। সিমের গতিপথ পরিবর্তন করেছি। আগে ৪৫ ডিগ্রিতে বল করতাম। এখন ৯০ ডিগ্রিতে করছি। একটু মিক্স করে বল করছি। এইগুলোই…গতিপথ পরিবর্তন করে কিছু ভেরিয়েশন এনেছি।
প্রশ্ন : টেস্টে আপনি উইকেট টেকিং বোলার কিন্তু ওয়ানডেতে উইকেটের থেকে রান আটকানোর কাজে বেশি ব্যস্ত?
মেহেদী হাসান মিরাজ : ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষ দলের ওপেনাররা যখন রান তাড়া করে খেলে তখন আমার দায়িত্ব থাকে রান আটকে বল করা। আমি যদি রান থামিয়ে রাখতে পারি তাহলে আমার যে বোলিং পার্টনার থাকবে, সে উইকেট বের করে নিতে পারবে। ওয়ানডেতে সবসময় রোলটা থাকে রান থামিয়ে রাখার। হয়তো আমি উইকেট পাচ্ছি না, হয়তো আমার পার্টনার পাচ্ছে বা আরেকজন পাচ্ছে। দিন শেষে কিন্তু দলের সাহায্য হচ্ছে। এটাই আমি চেষ্টা করি। আমার হয়তো উইকেটের দরকার নেই। আমার পার্টনার যে আছে, হয়তো মাশরাফি ভাই, মুস্তাফিজ, সাকিব ভাই বা রুবেল ভাই উইকেট বের করে দিবে। আমি রান থামিয়ে রাখতে পারলে দল চাপে পড়বে, আর অন্য বোলাররা উইকেট পাবে। এটাই আমার চেষ্টা, এর মধ্যে যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে আমি উইকেট পেয়ে যাবো।
প্রশ্ন : এশিয়া কাপের ফাইনালে ওপেন করেছেন। অনেকটা হুটহাট সিদ্ধান্তে। আরেকবার সুযোগ পেলে কি ওপেন করবেন?
মেহেদী হাসান মিরাজ : (হাসি) আমিও ভাবিনি আমি ফাইনালে ওপেন করব। মাশরাফি ভাই ম্যাচের আগের দিন রাতে বলেছেন, সবাই যারা সিনিয়র আছে সবাই অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। এই জন্য অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। এটা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি, যেকোন মুহূর্তে আমাকে দলের প্রয়োজনে যেকোন জায়গায় নামতে হতে পারে। আমার মানসিকতা থাকবে, যেকোন সময় এমন কিছু হতে পারে।
প্রশ্ন : ব্যাটিং সামর্থ্যের মূল্যায়ন কম করা হচ্ছে কী?
মেহেদী হাসান মিরাজ : না, সবাই কিন্তু আমাকে ব্যাটিং নিয়ে অনেক সাপোর্ট করে। সবাই বলে, আমি অনেক ভালো ব্যাট করতে পারি। মাঝখানে একটু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। ব্যাটিং নিয়ে এখন কাজ করছি। আশা করি সামনে হয়তো অবদান রাখতে পারব।
প্রশ্ন : আপনাকে যেই দায়িত্বই দেয়া হয়, আপনি সবসময় রাজি হন, দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেন। এটাতে ঝুঁকি থাকে না?
মেহেদী হাসান মিরাজ : আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। কঠিন অবস্থার চ্যালেঞ্জ আমি উপভোগ করি। আর পেছন থেকে যখন টিম ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট দেয়, আমাদের সিনিয়র প্লেয়ায়রা, সবাই যখন ব্যাক আপ করে, তখন নিজের আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেড়ে যায়। ফাইনালের আগের রাতে যখন আমাকে বলা হয় ওপেন করতে হবে, তখন মাশরাফি ভাই, রিয়াদ ভাই বললো, 'করতে পারবি, সমস্যা নাই'। তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা বাড়ল। তখন তাঁরা আরও কিছু কথা বলেছি, যে শুনে আমি আরও বেশি আত্মবিশ্বাস পেলাম। ওই জিনিসটাই, নিজেরও আত্মবিশ্বাস থাকে আর যখন পেছনে ব্যাক আপ পাই সিনিয়র প্লেয়ারদের, তখন আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। ওইটাই কাজে লেগেছে, ভাল করার পেছনে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন