ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেলাভূমি নিয়ে জেগে আছে মেঘনা

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেলাভূমি নিয়ে জেগে আছে মেঘনা

জুনাইদ আল হাবিব : উপরে নীল আকাশ। পশ্চিম-দক্ষিণে চোখ ফেরালে বিশাল জলরাশি। জলের বুক চিরে বয়ে চলেছে যন্ত্রের নৌকা। কূলেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বেলাভূমি। নতুন এ বেলাভূমি দেখলে যে কেউ বলবেন- চর জেগেছে। এমন দৃশ্য পর্যটনের ভাষায় ‘সৈকত’ নামে পরিচিত। চিকচিক বালুতে সেজেছে সৈকত। এতটুকু পড়েই অবাক হলেন? হবারই কথা। অথচ এমন বাস্তবতা মেলে উপকূলের সম্ভাবনাময় জনপদ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট মেঘনা সৈকতে। এটি জেলা প্রশাসনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। শীত এলেই এই সৈকতের দৃশ্য অপরূপ হয়ে ওঠে। জোয়ার-ভাটা যেকোনো সময় এই সৈকতে পর্যটক হাঁটতে পারেন। বর্ষাতে থাকে মাথা উঁচু পানি। শীতে শুষ্ক মৌসুমের কারণে সৈকতে তেমন পানি ওঠেননা। ফলে ১২ একর জমির পুরোটাই সৈকতে পরিণত হয়েছে।

দুপুর পেরিয়ে বিকেল। সূর্যটা যখন ক্লান্ত হয়ে পশ্চিমে হেলে পড়ে ঠিক ওই সময় সূর্য মেঘনার বুকে রঙিন রশ্মি ছড়ায়। আলোতে ঝলমল করে জোয়ার-ভাটার স্রোত। চমৎকার এই দৃশ্য কেবল এ মেঘনা সৈকতেই দারুণভাবে উপভোগ করা সম্ভব। মতিরহাট বাজারের দক্ষিণে মেঘনা সৈকতের দৃশ্য এমন হলেও বাজারের উত্তর পাশে সৈকতের দৃশ্য এর কাছাকাছি। উত্তরে সৈকতের পথ ধরে হাঁটতে চাইলে কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিতে হবে। পাশেই নারকেল-সুপারির নয়নাভিরাম দৃশ্যের সবুজ বাগান সৈকতের সঙ্গে মিশে একাকার। কক্সবাজার বা সেন্টমার্টিনের সঙ্গে যেন জায়গাটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রকৃতিপ্রেমী বা প্রকৃতির সঙ্গে ছবি তুলতে যাদের ভালো লাগে তাদের জন্য জায়গাটা মন্দ নয়।



আকর্ষণীয় এমন দৃশ্য ছাড়াও পর্যটকরা খুব কাছ থেকেই দেখতে পান, নদীর উত্তাল মোহনায় ইলিশ শিকারে ছুটে যাওয়া জেলেদের জীবন-জীবিকার চিত্র। এছাড়া কারো যদি দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে অল্প সময়ই যথেষ্ট। মতিরহাট নদীর পাড়ে রয়েছে আবু মাঝি, আলাউদ্দিন মাঝির খেয়া। খুব কম খরচেই মাত্র পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যেই দ্বীপে পা ফেলা সম্ভব। দ্বীপের পথে আরো একটি দারুণ দৃশ্য চোখে পড়বে- অতিথি পাখির ঝাঁক। নদী থেকে মাছ শিকার করছে। দ্বীপের কূলেও বেশ চমৎকার সৈকতের দেখা মেলে। দুই শতাধিক মানুষের বসাবস ছাড়াও দ্বীপে মহিষ চড়ে বেড়ায়। ন, সয়াবিন ও মরিচ চাষ হয়।

মতিরহাটে যে ইলিশ ঘাট রয়েছে এটি দেশের বৃহত্তম ইলিশ ঘাট। ইচ্ছে হলেই পর্যটকদের অনেকে এখান থেকে ইলিশ নিয়ে যান। তাজা এবং টাটকা ইলিশ খেতেও সুস্বাদু। মেঘনার ইলিশ বলে কথা! এখানে আসার অনুভূতি কেমন? প্রশ্ন করতেই আন্তর্জাতিক যুব কমিটির ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর, সিআরপি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘মতিরহাট এসে আমার মাঝে একটা অসম্ভব অনুভূতির জন্ম হলো। দৃশ্যটাও বেশ ভালো। অন্যান্য স্থানে ভ্রমণে এ দৃশ্য চোখ পড়েনি। ফিরতে মন চায়নি এখানে আসার পরে। কারণ মন পরিষ্কার করার মতো জায়গা এটি। আর এখানের প্রকৃতিও বেশ সুন্দর। ভালো লাগায় কিছু ছবিও তুলে নিলাম।’



সিলেট ক্যাডেট মাদ্রাসার বাংলা প্রভাষক ও লেখক আহমদ হোসেন। বহু দিন পর নিজ জেলার এ পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘সিলেট থাকার কারণে এখানে আসা হয় না। অনেক আগে এখানে এসেছি। বাড়িতে আসার পর ভাবলাম, এবার মতিরহাট যাবই। মতিরহাটতো গেলামই, পাশাপাশি দ্বীপেও যাওয়া হলো। খুব অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে ঘুরে।’

জেলা রোভার স্কাউটসের সিনিয়র রোভার ইমাম হোসাইন বলেন,  ‘একদিন সন্ধ্যায় মতিরহাট মেঘনাতীরে ঘুরতে গিয়েছি। তখন বর্ষা। অথৈ পানি নদীতে। তবে পাড়ে বসে বসে অনেক মজা করলাম। আড্ডার ছলে গান গাইলাম। ওই সময় কণ্ঠে গান আসার কথা। কারণ দক্ষিণ দিক থেকে যেভাবে বাতাস মনের গভীরে নাড়া দেয়, সত্যিই তা বলে বোঝানো যাবে না।’



ইলিশ ঘাটের আড়তদার মো. খোকন ও শফিকুল ইসলাম জানান, ‘গত বছরের শীতকালের চেয়ে এবার চর অনেক বড়। প্রতিদিন মানুষ দেখতে আসে। সবাই এ চরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হাঁটে। স্বজনদের নিয়ে হাঁটতে অনেককেই দেখা যায়। এখানে পর্যটকের প্রয়োজন আছে। যদি এটা জেলা শহরের পাশে কোথাও হতো তাহলে টিকেট কেটে এখানে ঢুকতে হতো। এখন টিকেট ছাড়াই মানুষ ঘুরতে পারে। রাস্তা-ঘাটের অবস্থাও অনেক ভালো। তাই পর্যটকদের ভোগান্তি নেই। বরং শান্তিতেই আরাম করতে পারবে পর্যটকরা।’

স্থানীয় চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইলিশ ঘাটের সভাপতি মেহেদী হাসান লিটন বলেন, ‘এটি একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে যেমন মেঘনা সৈকত আছে তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী মাছঘাট আছে। ঈদ-উৎসবে এখানে পর্যটকদের ব্যাপক উৎসবমুখর দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও মানুষ ভ্রমণের জন্য মতিরহাট পছন্দ করেন। এখানে পর্যটকরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। সব সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে মতিরহাটে পর্যটন সম্ভাবনা আরো জেগে উঠবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়