ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাব্বিরের বিস্ফোরক ইনিংস ছাপিয়ে রুশোর ব্যাটে রংপুরের জয়

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাব্বিরের বিস্ফোরক ইনিংস ছাপিয়ে রুশোর ব্যাটে রংপুরের জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে : সাব্বির রহমানের ঝোড়ো ব্যাটিং ম্লান রাইলি রুশোর ব্যাটে। নিকোলাস পুরানের কার্যকরী ইনিংসের জবাব দিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও অ্যালেক্স হেলস। বোলিংয়ে তাসকিন আহমেদ আবারও দুর্দান্ত। কিন্তু বাকিরা একেবারেই ফ্যাকাসে। সিলেটের বিশাল রানের জবাবে শেষটায় রাঙিয়েছেন ফরহাদ রেজা। তার ব্যাটেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে রংপুর রাইডার্স।

ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ে জমে উঠল সিলেট সিক্সার্স ও রংপুর রাইডার্সের ম্যাচ। রানের উৎসব হল সিলেট পর্বের শেষ দিনের প্রথম ম্যাচে। ২২ গজে বোলারদের কড়া শাসনে ব্যাটসম্যানদের মুখে হাসি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মানেই যে চার-ছক্কার ধুন্ধুমার লড়াই তার দেখা মিলল।

দিন শেষে বিজয়ের হাসি হেসেছে রংপুর রাইডার্স। তিন ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। আর শেষ ম্যাচে সিলেট সিক্সার্স পেল টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ। আগে ব্যাটিং করে এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় সিলেট। ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে স্বাগতিক দল। জবাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ে রংপুর। এর আগে ২০১৩ বিপিএলে ১৯৭ রান তাড়া করে সিলেট রয়্যালস জিতেছিল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। এবার রংপুর ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে সেই শোধ নিল।

 



রান উৎসবের ম্যাচে কতো বড় বড় তারকা রান করলেন! অথচ রংপুরের ম্যাচের নায়ক অন্য কেউ! সিলেটের সাব্বির রহমান, নিকোলাস পুরান এবং রংপুরের রাইলি রুশো, এবি ডি ভিলিয়ার্স, অ্যালেক্স হেলস সবাই রান পেয়েছেন। কেউই মাঠ থেকে বিজয়ের হাসি নিয়ে ফিরতে পারেননি। পেরেছেন একমাত্র ফরহাদ রেজা। দুই ম্যাচ আগে শেষ ওভারে টানা তিন ডট বল খেলে রংপুরকে ম্যাচ হারানো ফরহাদ রেজা আজ দুর্বার। ৬ বলে ১৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে রংপুরকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ডানহাতি পেস অলরাউন্ডার।

অথচ রান তাড়া করতে নেমে কতো বড় বিপদেই না পড়েছিল রংপুর। রানের খাতা খোলার আগেই আউট ক্রিস গেইল। ইরফানের বলে ক্যাচ দেন সাব্বিরের হাতে। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন হেলস ও রুশো। দুজনই পেয়েছেন জীবন। রুশোর প্রথম ক্যাচ ছাড়েন জাকির। স্লিপে তাকে জীবন দেন ওয়ার্নার। এরপর নিশ্চিত রান আউট করতে পারেননি লিটন। দুজনের ব্যাটে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে এগিয়ে যায় রংপুর। বিপদজনক হয়ে উঠা এ জুটি ভাঙেন অলক কাপালি।

হেলস লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৩ রানে। তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন রুশো ও ডি ভিলিয়ার্স। প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে নেমে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ান ডি ভিলিয়ার্স। রুশো নিজের ফর্ম ধরে রাখেন। বিপিএলের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে দলের স্কোরবোর্ড সচল রাখেন। কিন্তু ১৪তম ওভারে সব হিসাব পাল্টে যায়।

 



তাসকিন নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে প্রথমে রুশোকে এবং পরবর্তীতে এবি ডিভিলিয়ার্সকে সাজঘরে পাঠান। এক ওভারে দুই সেট ব্যাটসম্যান হারিয়ে বড় বিপদে রংপুর। ৩৫ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় রুশো করেন ৬১ রান। ডি ভিলিয়ার্স ২১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৩৪ রান। তাদের ৬৭ রানের জুটি ভাঙার পর রংপুর ম্যাচে ফেরে নাহিদুল ও মিথুনের ব্যাটে।

দ্রুত ৩৪ রান যোগ করে দলকে লড়াইয়ে রাখেন দুজন। কিন্তু ১৮তম ওভারে নিজের শেষ ওভার করতে এসে রংপুরকে জোড়া ধাক্কা দেন তাসকিন। মিথুন লং অফে ১৪ রানে ক্যাচ দেওয়ার পর নাহিদুল ১৯ রানে বোল্ড হন। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ২৪ রান দরকার ছিল রংপুরের। ওই ওভারে ১৯ রান তোলেন মাশরাফি ও ফরহাদ রেজা। প্রথম বলে মাশরাফি চার হাঁকান। তৃতীয় ও ষষ্ঠ বলে ফরহাদ চার, ছক্কা হাঁকান। মাঝের দুই বলে দুই ডাবল ফরহাদের। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে অলোককে চার মেরে রংপুরকে জয় এনে দেন এ ব্যাটসম্যান।

এর আগে প্রথম ইনিংসে পুরোটাই ছিল সাব্বির ঝলক। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সিলেটের রান চূড়ায় নিয়ে যান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। আগের পাঁচ ম্যাচে বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স ছিল না তার। কিন্তু এ ম্যাচে নিজেকে ফিরে পেয়ে বড় ইনিংস উপহার দেন সাব্বির।

 



টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সিলেটের শুরুটা ভালো হয়নি। এক চার ও এক ছক্কায় লিটন ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু মাশরাফিকে পরপর বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লিটন আউট হন স্লোয়ারে। নাজমুল অপুকে মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে আফিফও দারুণ শুরু করেছিলেন। এরপর হাঁকান আরও তিনটি বাউন্ডারি। কিন্তু তার ইনিংসটি বড় হয়নি। রুশোর সরাসরি থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন আফিফ। বিপিএলে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে সিলেটের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। ২১ বলে তার ১৯ রানের ইনিংসটি শেষ হয় মাশরাফির বলে।

এরপর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন সাব্বির ও পুরান। দুজনের৩৯ বলে ৮২ রানের জুটি রংপুরের বোলিং এলোমেলো করে দেয়। ফরহাদ রেজাকে দুবার ডাউন দ্যা উইকেটে এসে ছক্কা মারেন সাব্বির। স্পিনার নাহিদুলকে স্লগ করে তুলে মারেন মিড উইকেট দিয়ে। গেইল, গাজীরাও এদিন সাব্বিরের হাত থেকে বাঁচেননি। স্পিনারদের বিপক্ষে সাব্বির যতটা সাবলীল ছিলেন পেসারদের বিপক্ষে ঠিক ততোটাই ধ্রুপদী।

লং অন দিয়ে শফিউলকে, মাশরাফিকে কভার দিয়ে এবং শফিউলকে পুল করে বাউন্ডারি মেরেছেন সাব্বির। ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তোলা সাব্বির এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু শেষ ওভারে শফিউল তাকে আটকে দেন। ডানহাতি পেসারকে ‍তুলে মারতে গিয়ে লং অফে রুশোর তালুবন্দি হন সাব্বির। ৫১ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় এবারের বিপিএলে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন এ ওপেনার। পুরো ইনিংসে মাত্র ১৩টি বল ডট খেলেন।

 



ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা নিকোলাস পুরান শেষে যে ঝড় তুলেন সেটাই গড়ে দেয় বড় ব্যবধান। ২৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৭ রান করেন ক্যারিবীয়ান ক্রিকেটার। শেষ ৫ ওভারে ৬৬ রান তুলে দলের রান দুই’শ এর কাছাকাছি নিয়ে যান পুরান, সাব্বির।



রাইজিংবিডি/সিলেট/১৯ জানুয়ারি ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়