ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইভান্সের সেঞ্চুরির পর রাব্বী-মুস্তাফিজে উড়ে গেল কুমিল্লা

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইভান্সের সেঞ্চুরির পর রাব্বী-মুস্তাফিজে উড়ে গেল কুমিল্লা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মিরপুর থেকে : বিপিএলে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে রাজশাহী কিংস। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৩৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

রাজশাহীর জয়ের নায়ক লরি ইভান্স। এবারের বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাট থেকে। মাত্র ৬২ বলে অপরাজিত ১০৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। শুরুতেই ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে রায়ান টেন ডেসকাটের সঙ্গে ইভান্সের অবিচ্ছিন্ন ১৪৮ রানের জুটি রাজশাহীকে এনে দেয় ১৭৬ রানের পুঁজি।

পরে মুস্তাফিজুর রহমান, কামরুল ইসলাম রাব্বীদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে উড়ে গেছে কুমিল্লা। ১০ বল বাকি থাকতে ১৩৮ রানেই গুটিয়ে যায় তৃতীয় আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন রাব্বী, মুস্তাফিজ একটি উইকেট পেলেও বোলিং করেছেন নিয়ন্ত্রিত। ফিফটির পর হাত ঘুরিয়ে ২ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন ডেসকাট।

নিজেদের আগের ম্যাচে সিলেটে রাজশাহী হারিয়েছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল ঢাকা ডায়নামাইটসকে। এবার হারাল আরেক শক্তিশালী দল কুমিল্লাকে। প্রথম দেখায় কুমিল্লার কাছে হারের প্রতিশোধও নিল রাজশাহী। সাত ম্যাচে এটি তাদের চতুর্থ জয়। সমান ম্যাচে কুমিল্লার তৃতীয় হার। দুই দলেরই এখন সমান ৮ পয়েন্ট। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে কুমিল্লা আছে তিনে, পাঁচ থেকে চারে উঠছে রাজশাহী।

মিরপুরে আজ টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রাজশাহীর শুরুটা ভালো হয়নি। ২৮ রানের মধ্যেই তারা হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। আগের ম্যাচে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ভালো করেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস ও মার্শাল আইয়ুব। এদিন দুজন দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি। দুজনই স্লপ সুইপে উড়াতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। তিনে নামা অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ টিকেছেন মাত্র তিন বল।

এরপরই ইভান্স ও ডেসকাটের সেই জুটি। গত বছর ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইভান্স বিপিএলে প্রথম পাঁচ ম্যাচে করতে পারেন মোটে ১৩ রান। চার ইনিংসে দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি। সেই ইভান্সই আজ ঝড় তুলে করলেন বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের প্রথম সেঞ্চুরি।

 



ষষ্ঠ ওভারে শহীদ আফ্রিদিকে তিন চার হাঁকিয়ে শুরু ইভান্সের ঝড়। ইংলিশ ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১৪তম ওভারে থিসারা পেরেরাকে দুই ছক্কা হাঁকানোর পথে ফিফটি তুলে নেন ৪০ বলে।

পরের পঞ্চাশ রান করতে ইভান্সের লেগেছে মাত্র ২১ বল! আগের ওভারে পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজকে দুই ছক্কা ও এক চারে ৮৩ থেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৯৯-এ। শেষ ওভারে থিসারাকে লং অফে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্ক।

২৩তম ম্যাচে এসে এবারের বিপিএল দেখল প্রথম সেঞ্চুরি। সিলেট পর্বে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে সিলেট সিক্সার্সের সাব্বির রহমানের ৮৫ ছিল আগের সর্বোচ্চ। আগের ৯৬ রান ছাড়িয়ে ইভান্সের ক্যারিয়ারেরও প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি এটি। আর বিপিএলের ইতিহাসে ১৩তম সেঞ্চুরি। ৩১ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান মাত্র ৬২ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় সাজান ১০৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংসটি।

শেষ ওভারে ফিফটি করা ডেসকাট ৪১ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ইভান্স ও ডেসকাটের মাত্র ৮৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৪৮ রানের জুটি বিপিএলে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ। ২০১৫ বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে কুমিল্লার মারলন স্যামুয়েলস ও মাশরাফি বিন মুর্তজা জুটির ১২৩ রান ছিল আগের রেকর্ড।

লক্ষ্য তাড়ায় কুমিল্লার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয় ৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। তামিম ২৪ বলে করেছেন ২৫, বিজয় ২৩ বলে ২৬। তিনে নামা শামসুর রহমানও ইনিংস বড় করতে পারেননি (১৫)।

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে চারে উঠে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু একটি করে চার ও ছক্কাতেই শেষ তার ১২ রানের ইনিংস। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস মুখোমুখি প্রথম দুই বলে ছক্কা-চার হাঁকালেও তিনি থেমেছেন ১৫ রানে। থিসারা পেরেরা আউট মুখোমুখি প্রথম বলেই। কাইস আহমেদের পরপর দুই বলের শিকার এই দুজন। তখন ১১০ রানে ৬ উইকেট নেই কুমিল্লার।

 



শেষ পাঁচ ওভারে কুমিল্লার দরকার ছিল ৬৩ রান। ১৬তম ওভারে কাইসকে দুই ছক্কা ও এক চারে ১৮ রান তুলে ব্যবধান কমিয়ে আনেন আফ্রিদি। তবে পরের ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে মুস্তাফিজ খরচ করেন মাত্র ৩ রান। বাঁহাতি পেসারের পাঁচ বলে আফ্রিদি নিতে পারেন মাত্র এক রান!

পরের ওভারের প্রথম বলে রাব্বীকে উড়াতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্রিস্টিয়ান ইয়নকারের দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন আফ্রিদি (১৭)। ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে লিয়াম ডসন (১৭) ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন রাব্বী।

শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক না হলেও ৩ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নেন রাব্বী। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মেহেদী হাসানকে ফিরিয়ে নিজের একমাত্র উইকেটটা নেন দুর্দান্ত বোলিং করা আরেক পেসার মুস্তাফিজ। ৩.২ ওভারে মাত্র ৮ রান দেন বাঁহাতি এই পেসার। ডেসকাট ২ ওভারে ১৫ রানে ও কাইস ৪৬ রানে নেন ২টি করে উইকেট। ম্যাচসেরা হয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান ইভান্স।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়