ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১৯৮৩ বিশ্বকাপ: ক্যারিবীয় শ্রেষ্ঠত্ব গুঁড়িয়ে ভারতের ইতিহাস

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ২০ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯৮৩ বিশ্বকাপ: ক্যারিবীয় শ্রেষ্ঠত্ব গুঁড়িয়ে ভারতের ইতিহাস

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান: দেখতে দেখতে দরজার কড়া নাড়তে শুরু করেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসর। বিশ্বকাপের এবার আয়োজনটা হচ্ছে জন্মভূমি ইংল্যান্ডের মাঠে। এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে অনেক আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেছে উন্মাদনা।

দশটি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। প্রত্যেকটা দল সবাই সবার মুখোমুখি হবে। সেরা চারটি দল খেলবে সেমিফাইনালে। এরপর ফাইনাল দিয়ে শেষ হবে এ আসর। মাঠের ক্রিকেট উন্মাদনা ছড়ানোর আগে দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিকথা।

তৃতীয় পর্বে আজ থাকছে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের ইতিহাস।

পড়ুন প্রথম পর্ব:

অস্ট্রেলীয় ব্যবসায়ী ক্যারি পেকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট তখন থেমেছে। তবে শিক্ষা দেয় অনেক কিছুরই। ওয়ার্ল্ড সিরিজের বেশ কিছু ছোঁয়া লাগে বিশ্বকাপে। আইসিসিও তাদের গণ্ডি বড় করে। এবার একবার নয় দুই গ্রুপের চারটি দল নিজেদের মধ্যে দুইবার করে লড়াই করে। মূলত দ্বিতীয় আসরে বাজে আবহাওয়ায় সমস্যা হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। পরিবর্তন আসে ফিল্ডিংয়েও। ৩০ গজ সার্কেল চালু করা হয়। বৃত্তের মধ্যে চারজন ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল পুরো ম্যাচেই। তার সঙ্গে নানা অঘটন। টপ ফেবারিটরা হারতে থাকে পুচকে দলগুলোর সঙ্গে। সে ধারাবাহিকতা চলে ফাইনালেও। তাই একে বলা হয় অঘটনের বিশ্বকাপ।
 


ম্যাচের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি দলের সংখ্যা। আগের মতো এবারও অংশ নেয় আট দল। তবে ম্যাচ বাড়ায় বেড়ে যায় ভেন্যুর সংখ্যা। ২৭টি ম্যাচ আয়োজিত হয় ইংল্যান্ডের ১৫টি ভেন্যুতে। ব্যবহার করা হয় এমন কয়েকটি মাঠ, যেখানে আগে কখনো টেস্ট ম্যাচ হয়নি। গ্রুপ ‘এ'তে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে ছিল পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা এবং ‘বি’ গ্রুপে খেলে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও নবাগত জিম্বাবুয়ে। বলে রাখা ভালো এ বিশ্বকাপের আগেই টেস্ট মর্যাদা পায় শ্রীলঙ্কা। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল খেলে সেমি-ফাইনাল। এরপর ফাইনাল।

গ্রুপ পর্বে শুরু থেকেই একের পর এক নাটকীয় ম্যাচ উপহার দেয় এ বিশ্বকাপ। বিশেষ করে ‘বি’ গ্রুপে। নটিংহ্যামে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে এসেই পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় আইসিসি কাপ জয়ী জিম্বাবুয়ে। একই দিনে আরও একটি অঘটন। দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেয় ভারত। এমনকি অস্ট্রেলিয়াকেও হারায় কপিল দেবের দল।

প্রথম ম্যাচে চমক দেখানো জিম্বাবুয়ে আরও একটি চমক উপহার প্রায় দিয়েই ফেলেছিল। কপিল দেব ত্রাতা না হলে হয়তো ভিন্নভাবে লেখা হতো ইতিহাস। ১৭ রানের ভারতের ৫ উইকেট তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। এরপর ১৭৫ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে ২৬৬ রানের বড় লক্ষ্যই দাঁড় করায় ভারত। ৩১ রানের জয়ে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গী হয় তারা। ৬ ম্যাচের ৪টিতে হেরে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া।

পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব:

‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে অঘটন বলতে ছিল টেস্ট পরিবারের নতুন সদস্য শ্রীলঙ্কার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়া। ‘এ’ গ্রুপ থেকে অবশ্য প্রত্যাশামতো শেষ চারে ওঠে ইংল্যান্ড। তাদের সঙ্গী হিসেবে জায়গা নিতে তুমুল লড়াই হয় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। দুই দলই জিতে ৩টি করে ম্যাচ। শেষে রান রেটে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের।

প্রথম সেমিফাইনালে প্রত্যাশিত জয় পায় ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের ১৮৪ রানের জবাবে ভিভ রিচার্ডসের ঝড়ো ৮০ রানে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে টানা তৃতীয় ফাইনাল নিশ্চিত করে ক্যারিবিয়ানরা। তবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে হয় অঘটন। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ জয় তুলে ফাইনালে ওঠে ভারত। ইংলিশদের দেওয়া ২১৪ রানের লক্ষ্য হেসে-খেলেই তুলে ফেলে দলটি।
 


লর্ডসের ফাইনালেও হয় নাটকীয়তা। ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো বিশ্বকাপ ইতিহাসের তখন পর্যন্ত সবচেয়ে অকল্পনীয় ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেই যায় ভারতের কাছে। তারকা খচিত ক্যারিবিয়ানদের বোলিং লাইন আপের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। অ্যান্ডি রবার্টস-মাইকেল হোল্ডিং-ম্যালকম মার্শালদের সামনে মাত্র ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। তখন মনে হচ্ছিল টানা তৃতীয় বিশ্ব শিরোপা ক্যারিবীয়দের হাতে দেখা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

কিন্তু এরপর যা হয় তা হয়তো কল্পনা করেননি খোদ ভারতীয়রাও। স্বল্প রানের পুঁজি নিয়েও দারুণ লড়াই করে দলটি। তার নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক কপিল দেব। ভিভ রিচার্ডেসের ক্যাচটি লুফে নেন অবিশ্বাস্য দক্ষতায়। জ্বলে ওঠেন মহিন্দর অমরনাথ ও মদন লাল। গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েডদের নিয়ে সাজানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেয় মাত্র ১৪০ রানে। ক্যারিবিয়দের অল আউট করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ হাতে তোলে এশিয়ার দেশ ভারত।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ইংল্যান্ডের ডেভিড গাওয়ার। ৭৬.৮০ গড়ে করেন ৩৮৪ রান। তবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ১৭৫ রান। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ভারতের রজার বিনি। ১৮টি উইকেট নেন তিনি। আসরের সেরা বোলিং ফিগার নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলির। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৫ রানের খরচায় নেন ৫ উইকেট। সর্বোচ্চ ডিসমিসাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটরক্ষক জেফ ডুজনের ১৬টি।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়