ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

এই শহর : চোখে সবুজ পৃথিবী ও পথে মৃত্যুফাঁদ

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ১৮ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এই শহর : চোখে সবুজ পৃথিবী ও পথে মৃত্যুফাঁদ

জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০১৬

সাইফ বরকতুল্লাহ : ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাস। বাতাসে গাছের পাতাগুলো নড়ছে। উদ্বেলিত করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়। রাজধানীর বন্দি জীবন, জ্যাম আর চার দেয়ালে আটকে থাকা চোখগুলো প্রকৃতি দেখে সুখ অনুভব করছে।

 

নেই কোনো টেলিভিশনে লাইভ। তেমন প্রচার নেই। বিশৃঙ্খলা নেই। শান্ত, চুপচাপ পরিবেশ-প্রকৃতি। অথচ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই আছেন। বেচাবিক্রিও হচ্ছে। মনজুড়ানো পরিবেশ।

 

হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক বলছিলাম বৃক্ষমেলার কথা। জাতীয় বৃক্ষমেলা। গত ৩১ জুলাই শুরু হয়েছে ঢাকার শেরেবাংলা নগর বাণিজ্য মেলার মাঠে। প্রতি বর্ষাকালেই বৃক্ষমেলার আয়োজন হয়। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রবেশ ফি নেই।

 

বর্ষাকাল বৃক্ষরোপণ, বীজতলা তৈরি, চারা উৎপাদনের মওসুম। তাই এ সময়টিকেই মেলার আয়োজনের মাধ্যমে নগরবাসীকে বৃক্ষরোপণের প্রতি আগ্রহী করার চেষ্টা করার জন্য বেছে নেয়া হয়।

 

মেলা ঘুরে দেখা যায়, বৃক্ষপ্রেমিরা মনের চাহিদা মেটাতে মেলায় আসছেন। গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে প্রতিদিনই আসছেন বিভিন্ন শ্রণিপেশার মানুষ। অনেকেই আসছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অথবা সপরিবারে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক গাছ থেকে অন্য গাছের কাছে। যাচ্ছেন অচেনা-অজানা সব বৃক্ষের কাছে। পরিচিত করছেন নিজেকে।

 

মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে বনসাঁই দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের মানচিত্র, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের প্রথম সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি। আছে  ফলদ গাছ। আম, জাম লিচু, কাঁঠাল, আনারস, জামরুল, কদবেল, আমলকী, লটকন, পেয়ারা, আতা, শরীফা, আমড়া, বেল, লেবু প্রভৃতি দেশী ফলের গাছ। আছে বিদেশী ট্যাং, আপেল, আঙ্গুর, কমলা, আম, জামরুল গাছ। ফুলের গাছ : দেশী গোলাপ, শিউলী, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জুঁই, হাসনাহেনা, চাঁপা, মালতি, টগর, বেলী প্রভৃতি।

 

আমরা দেখছি, প্রতি বছর কমছে বনাঞ্চল। সেই সাথে কমছে নগরের সবুজায়ন। ইট-পাথরের ঢাকায় তাই বৃক্ষমেলা যেন হাঁপিয়ে ওঠাদের প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ।

 

দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এটা সম্ভব না হলেও একটু সবুজ-শ্যামল আর ছায়া ঘেরা পরিবেশের ব্যাকুলতা কম-বেশি সবার মনেই আছে। তাই চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। আর কেনই বা ঘুরবেন না এ মেলায়? মেলায় ঘুরে জানতে পারবেন বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সমৃদ্ধি, কত অচেনা গাছের নাম।

 

এ যেন সবুজের নতুন পৃথিবী। বাবা-মায়ের সাথে ঘুরতে আসা শিশুরাও জানবে গাছ-গাছালির কথা। বর্তমান সময়ে এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের প্রকৃতি জানাটা জরুরি।

 

ঢাকার ব্যস্ত জীবন, গ্রামে যাবার সময় কই? তাই এই বর্ষায় বৃক্ষমেলায় গিয়ে দেখতে পারেন সবুজের ভুবন। অনুভব করতে পারেন দিনের ঝকঝকে রোদ। নিঃশ্বাস নিতে পারেন মেঘের আবছায়ায় গাছগাছালির মাঝে দাঁড়িয়ে। আহ! দূষিত ঢাকার মাঝে এ যেন এক অন্যরকম ছায়াঘেরা মায়াময় প্রকৃতি।

 

দুই.

২১ জুলাই বিকেলে বেলা।  মিরপুরের কমার্স কলেজের পেছনে একটি পয়ঃনিষ্কাশন নালায় পড়ে যায় চার বছরের জুনায়েদ হোসেন সাব্বির। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নালায় নেমে পড়েন চার ডুবুরি। মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল আল আরেফিন গণমাধ্যমকে জানান, বিকেলে আমির হোসেনের ছেলে সাব্বির স্যুয়ারেজ লাইনে পড়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তার লাশের সন্ধান মেলে ৬ নম্বর রোডের পেছনে নালার জালের পাশে। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর পাওয়া যায় তার লাশ।

 

শুধু সাব্বির নয়, রাজধানীতে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে প্রাণ হারিয়েছে অনন্যা, সিহাব, জিহাদ, নীরব, সানজিদা।

 

 সাব্বিরকে উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারি

 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরলে এখনো দেখা যায়, অনেক এলাকার ম্যানহোলে কোনো ঢাকনা নেই। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার পর প্রায়ই ম্যানহোল খোলা থাকে। ২০১২ সালে কদমতলীর বরইতলার স্যুয়ারেজ লাইনের ম্যানহোলে পড়ে নিহত হয় পাঁচ বছরের শিশু সিহাব। ২০১৪ সালের ৫ মে রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলা এলাকার পার্ক সংলগ্ন গ্রিনওয়ে গলিতে ম্যানহোলে পড়ে পাঁচ বছরের অনন্যার মৃত্যু হয়। একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর শাজাহানপুরের রেল কলোনিতে ওয়াসার একটি পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে জিহাদ নামের এক শিশু মারা যায়। ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর স্যুয়ারেজের ম্যানহোলে পড়ে নিহত হয় নীরব নামে আরেকটি শিশু। গত ১৩ জুলাই বিকেলে মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায় ছয় বছরের সানজিদা খেলার সময় স্যুয়ারেজের লাইনে পড়ে যায়। সবশেষে মারা গেল সাব্বির।

 

আর কত এ ধরনের ঘটনা ঘটবে? বিষয়টাতে একটু নজর দেয়া প্রয়োজন। রাজধানীতে ম্যানহোল, খোলা নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশনের নালার প্রতি বিশেষ যত্ম নিন। এ ধরনের নর্দমা ও খাল, অন্যান্য বিপজ্জনক জলাশয় তদারকির জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করা জরুরি। রাজধানীতে এ ধরনের মৃত্যুফাঁদ থেকে শিশুদের বাঁচান। কারণ, আজকের শিশুই নেতৃত্ব দেবে আগামী দিনে।

 

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ আগস্ট ২০১৬/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়