ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মায়াঝরনা পাংতুমাই

সিয়াম সারোয়ার জামিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ৩০ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মায়াঝরনা পাংতুমাই

সিয়াম সারোয়ার জামিল : সুন্দর সবুজ রাস্তাঘাট। বড় বড় গাছের সারি তৈরি করেছে সবুজের সুড়ঙ্গ। ভরা রোদেও ঝিরি ঝিরি ঠান্ডা বাতাস গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। এমন অদ্ভুত শিহরণ জাগানো খাসিয়াপাড়ার ভেতর দিয়ে চলছে আমাদের ভ্যানগাড়ি। উদ্দেশ্য সিলেট জেলার নবীনতম ভ্রমণ গন্তব্য পাংতুমাই। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা এই গ্রামটি এখন পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাধারা পাংতুমাইয়ের মূল আকর্ষণ। 

 

পথ চলতে চলতে এক সময় চোখে পড়ে মেঘালয়ের আকাশছোঁয়া পাহাড়। সাদা পানির এক নতুন অপ্সরী, পাহাড়ি নদীর চোখ ধাঁধানো নৈসর্গিক সৌন্দর্য। মুগ্ধ হয়ে শিপন ভাই নাম দিল মায়াঝরনা। পর্যটকদের অজানা ও দুর্গম হওয়ায় এই রূপবতীর রূপ দর্শনে এখনও সেখানে তেমন ভিড় দেখা গেল না। বর্ষায় পিয়াইন নদী থাকে পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ। তবে শীতে শুকিয়ে পানি তলায় ঠেকে। শুকনো পিয়াইন হেঁটেই পার হলাম। গতবার যখন এসেছিলাম, বর্ষায় ভরা পিয়াইন নদীতে চলতে চলতে এর দুই পাশের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হয়েছিলাম।

পাংতুমাই গ্রামকে যদিও অনেকে 'পাংথুমাই' ডাকে। সীমান্তঘেঁষা, পাহাড়ের কোলের আঁকাবাঁকা রাস্তাই পাংতুমাই গ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই পাহাড়ি গুহা থেকে ছুটে চলেছে ঝরনার জলরাশি। মেলে ধরেছে তার রূপের মাধুরী। তবে ছোঁয়া যাবে না, ধরা যাবে না এ ঝরনা। কারণ ঝরনার জল বাংলাদেশে পড়লেও ঝরনাটা ভারত সীমানায়। যে কারণে সুন্দর করে একটি সাইনবোর্ড রাখা আছে সেখানে। লেখা-‘সাবধান! সামনে ভারত।’ নিরাপদ দূরত্ব রেখেই ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করলাম অনেকক্ষণ।

 

পটাপট কয়েকটা ছবি তুলে ফেলল রুবেল। গোসল করার জন্য সে উসখুশ করলেও আমি সায় দিলাম না। ও সাঁতার জানে না। এই বিপদে ফেলা উচিত হবে না। আরো কিছুক্ষণ ঘুরোঘুরি আর ছবি তুলে সঙ্গে আনা খাবারের দিকে মনোযোগ দিলাম। ঘড়িতে তখন পাঁচটা। সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই সময় কিছুক্ষণ পরেই। ফিরতি পথ ধরতে বলল শিপন ভাই। দেরি করলাম না। রাত হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাব। সিলেট শহরের উদ্দেশ্যে আমরা দ্রুত পা বাড়ালাম।

যেখানে থাকবেন : পাংতুমাইয়ে থাকার সুব্যবস্থা নেই। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের ঘরে থাকতে পারেন। সেজন্য ৩০০-৪০০ টাকা খরচ হতে পারে। তবে সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় মাঝে মাঝেই বিজিবির রেইড পড়ে গ্রামে। পারতপক্ষে দিনে দিনে ফিরে আসাই ভালো।

 

যেভাবে যাবেন : সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চলে যাবেন গোয়াইনঘাট থানা সংলগ্ন বাজারে। ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। সেখান থেকে আপনি আবার ট্যাক্সি নিতে পারেন, বলবেন পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পাংতুমাই গ্রামে যাবেন। গুনতে হবে ৩৫০-৪০০ টাকা। পাকা পথ ধরে চলতে চলতে যখনই কাঁচা রাস্তায় উঠে পড়বেন, বুঝবেন ঢুকে পড়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম গ্রাম পাংতুমাইয়ে!

 

সাবধানতা : ভ্রমণে গিয়ে কোনো বর্জ্য জায়গাটিতে ফেলে আসবেন না।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়