ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

উ প কূ লে র প থে

ক্যাপসিকামে সাফল্য ভোলার চরে

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৯ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যাপসিকামে সাফল্য ভোলার চরে

রফিকুল ইসলাম মন্টু, ভোলার কাচিয়া দ্বীপ ঘুরে : মাঠের পর মাঠ শুধু ক্যাপসিকাম (মিষ্টি মরিচ)। ফলনও বাম্পার। ভালো ফলনে মিলছে ভালো দাম। বিনিয়োগের তুলনায় লাভের পরিমাণও সন্তোষজনক।

এ কারণে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ক্যাপসিকাম চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা।

এমন চিত্র দ্বীপ জেলা ভোলার চরে। একটি চর কাচিয়া, আরেকটি চর মদনপুরা। সমুদ্র ও নদীর অববাহিকায় যুগে যুগে পলি জমে জেগে ওঠা চরের মাটি বেশ উপযোগী ক্যাপসিকাম চাষের জন্য। প্রথম বছরেই সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। সেই সাফল্যের ধারায় তিন বছর ধরে এই চাষ অব্যাহত রয়েছে। একজনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসছেন অন্যরা। এভাবে চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চাষিদের দাবি, বীজের দাম কমানোর পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে ক্যাপসিকাম আসা বন্ধ হলে, দেশেই এই ফসল চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। তবে এখনো কৃষি দপ্তরের তালিকায় এই ফসলের নাম ওঠেনি।

 


ক্যাপসিকাম চাষি আবুল কাশেম জানান, ভারত থেকে ক্যাপসিকাম আমদানির সূত্র ধরে এই এলাকাই তিনিই প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। কাচিয়া দ্বীপের শয়তানের টেক (যেটি এখন মধুপুর নামে পরিচিত) এলাকায় এই চাষ শুরু করেন আবুল কাসেম পাঠান ও তার ছেলে নয়ন পাঠান। আবুল কাসেম পাঠান ও তার ভাই মনির পাঠান বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে ক্যাপসিকাম এনে ঢাকায় বিক্রি করতেন। এরই সূত্র ধরে তাদের মাথায় আসে চাষের বিষয়টি। একপর্যায়ে ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করে তারা এটি চাষের উদ্যোগ নেন।

এভাবেই ক্যাপসিকাম চাষের সূত্রপাত ঘটে বলে জানান আবুল কাসেম পাঠান।

প্রথম বছর আবুল কাসেম পাঠান সামান্য পরিমাণ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলেও এবার তার চাষের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। লাভজনক হওয়ায় এবার তিনি ক্যাপসিকাম আবাদ করেছেন সোয়া ৪ একর জমিতে। এতে তার খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করে ফেলেছেন। আরো অন্তত ১০ লাখ টাকার ফসল রয়েছে খেতে।

চাষিদের কাছ থেকে পাওয়া হিসাবে জানা গেছে, প্রতি একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে খরচ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। তবে ফলন ভালো হলে এবং কোনো ধরনের দুর্যোগ না হলে বিনিয়োগের দ্বিগুণ মূল্য উঠে আসে।

 


ক্যাপসিকাম চাষি আবুল কাসেম বলেন, ‘গত বছর ক্যাপসিকাম চাষ করে লাভবান হয়েছি। এ বছর ৪ একর জমিতে চাষাবাদ করেছি। ফলন অনেক ভালো, আশা করি ২০ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারব এবার।’

চাষি নয়ন ও নিজাম উদ্দিন বলেন, গত দুই বছর ধরে মাঝের চরে ক্যাপসিকাম আবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা কম হলেও ঢাকার বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। বড় বড় রেস্টুরেন্টে পিজা, ফ্রাইড রাইস, স্যুপ, পাস্তা ও সবজিসহ বিভিন্ন খাবারে ক্যাপসিকাম ব্যবহৃত হয়।

ভোলার চরে উৎপাদিত ক্যাপসিকাম পাইকারি বিক্রি হয় ঢাকার কারওয়ান বাজারে। পরিবহন খরচসহ ঢাকার বাজারে পৌঁছাতে প্রতি কেজি ক্যাপসিকামের মূল্য দাঁড়ায় ৬০-৭০ টাকা। তবে ভারত থেকে ক্যাপসিকাম দেশের বাজারে আসার কারণে দেশে উৎপাদিত ক্যাপসিকাম ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

কাচিয়া দ্বীপে ক্যাপসিকাম চাষের বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে আলাপ হলো। নিজাম উদ্দিন ফরাজী, তছির বেপারী, তছির ফরাজী, হারুন মোরাদার, মন্নান হাজী, ফারুক হাওলাদার, মজিবর হাওলাদার, আবুবকর সিদ্দিক, ইসমাইল হোসেনসহ আরো অনেকে জানান ক্যাপসিকাম চাষে সম্ভাবনা ও সংকটের কথা।

চাষিরা জানান, এটি সম্ভাবনাময় একটি ফসল। তবে এর সামনেও রয়েছে অনেক বাধা। দেশের ক্যাপসিকামের বাজার এখনো বিদেশি ক্যাপসিকামের দখলে। এ দেশে এখনো বীজ উৎপাদিত হচ্ছে না। অধিক কষ্টে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই। এর ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় তো রয়েই গেছে। এসব কারণে চাষিদের ঝুঁকি থেকেই যায়। ধারকর্জ করে ক্যাপসিকাম আবাদের পর কোনো বছর দুর্যোগ হানা দিলে, কিংবা দাম না পেলে বিপদ।

চাষিরা জানান, ক্যাপসিকাম চাষে সবচেয়ে খরচ বেশি বীজে। ভারত থেকে আসা বীজ কিনতে হয় প্রতি কেজি ১ লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকা দরে। অনেক সময় ভালো বীজ পাওয়া যায় না। এর ওপরে রয়েছে কীটনাশক প্রয়োগ। অতিরিক্ত দামে কীটনাশক কেনা হলেও অনেক সময় কীটনাশকে পোকা দমন হয় না।

 


ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয় বাংলা সালের পয়লা কার্তিক থেকে। বীজ তৈরি করতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। সাধারণ মরিচ চাষের মতোই বীজতলা থেকে চারা তুলে সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হয়। চারা রোপণের পর থেকে এক মাসের ব্যবধানে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে ১০-১২টি ক্যাপসিকাম ধরে। এর ওজন দাঁড়ায় দেড় কেজির মতো। ফলন তোলা থেকে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ক্যাপসিকাম বাজারজাত শেষ হয়ে যায়। এক থেকে দেড় সপ্তাহ পর্যন্ত এগুলো হিমাগারে রাখা যায়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা মূল্য বঞ্চিত হয়।   

চাষিদের দাবি, দেশে সম্ভাবনাময় ক্যাপসিকাম চাষের বিকাশ ঘটাতে হলে ক্যাপসিকামের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। বাইরে থেকে ক্যাপসিকাম আসা বন্ধ করতে হবে। বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বীজের দাম কমাতে হবে। সার ও ওষুধের গুণগত মান বাড়িয়ে মূল্য কমাতে হবে। সরকারিভাবে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ক্যাপসিকাম ক্রয়ের ব্যবস্থা থাকলে চাষিরা লাভবান হতে পারে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মেঘনাবিধৌত মাঝের চরের মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই দুই-তিন বছর ধরে কৃষকেরা ক্যাপসিকাম চাষ করে ভালো ফল পাচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে দিন দিন আবাদ বাড়ছে। গত বছর জেলায় দুই হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ হয়। এবার তা বেড়ে পাঁচ হেক্টর হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মার্চ ২০১৭/রফিকুল ইসলাম মন্টু/এসএন/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়