ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বর্ষায় অপরূপ নিঝুম দ্বীপ

ফয়সাল উদ্দিন নীরব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ৬ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বর্ষায় অপরূপ নিঝুম দ্বীপ

ফয়সাল উদ্দিন নীরব : শীত মৌসুমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে ঠিক তার উল্টো। এ সময়টায় বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া, যাতয়াত সমস্যা- এসব উপেক্ষা করে পর্যটকরা তেমন একটা আসেন না।

শীত মৌসুমে নদী শান্ত থাকে, ট্রলারে করে ঝুঁকি ছাড়াই নিঝুম দ্বীপে আসা যায়, নিঝুম দ্বীপের পাশের চরগুলোতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে যাওয়া যায়, বর্ষায় সেটা সম্ভব হয় না নদী উত্তাল থাকার কারণে। তবে যেসব পর্যটক ঝুঁকি নিয়ে বর্ষা মৌসুমে ছুটে আসেন নিঝুম দ্বীপে, তারা অনুধাবন করতে পারেন প্রকৃতির অন্যরকম অপরূপ সৌন্দর্য।

শীতে নদী শান্ত থাকায় সি বিচ মরা পড়ে থাকে, ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে না তীরে, নদীর গর্জন শোনা যায় না। বর্ষায় মন জুড়িয়ে যাবে সি বিচের বাতাস আর তেড়ে আসা বড় বড় ঢেউয়ে। নির্জন সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বন মুহূর্তে মন ভালো করে দেবে। শীত মৌসুমে পর্যটকরা অভিযোগ করে থাকেন যে, হরিণ দেখতে তাদের বনের ভিতর অনেক দূর হাঁটতে হয়। কিন্তু বর্ষায় হরিণ একবারে হাতের কাছে। শীত মৌসুমে পর্যটকদের পদচারণা বেশি থাকায় হরিণ গভীর বনে চলে যায়।

বর্ষায় নিঝুম দ্বীপে ইলিশ মাছ সহ হরেক রকমের তাজা মাছ পাওয়া যায়। ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ঘুরতে আসা অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজু, সমীর ও সুমন বলেন, ‘শীতে একবার আমরা এসেছি, তবে ওই সময় বেশি শীত থাকায় তেমন একটা মজা পাইনি, অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে ছবিই তুলতে পারিনি। বর্ষায় আসতে একটু কষ্ট হলেও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে আমরা ভুলে গেছি সে কষ্ট।’ নোয়াখালি সরকারি কলেজ থেকে ঘুরতে এসেছেন মাকসুদুর রহমান এবং সাইফুজ্জামান সোহেল। তারা বলেন, ‘আমরা এবারই প্রথম নিঝুম দ্বীপে এসেছি। বৃষ্টি ছিল, রাস্তায় কাদা, তবে কষ্ট স্বার্থক বর্ষায় নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্যে। আমরা হরিণ ও দেখেছি একবারে কাছ থেকে।’



বর্ষায় যারা নিঝুম দ্বীপ যেতে চান, ঢাকা সদরঘাট থেকে ফারহান ৩/৪ লঞ্চ প্রতিদিন বিকাল ৫টায় ছাড়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার উদ্দেশ্যে, যা পরদিন সকাল ৭ টার দিকে হাতিয়ার তমরদ্দী ঘাটে এসে পৌঁছায়। লঞ্চ ভাড়া- ডেক জনপ্রতি ৩৫০ টাকা, সিঙেল কেবিন ১২০০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা। তমরদ্দী ঘাট থেকে হোন্ডা যোগে মোক্তারিয়া ঘাট ভাড়া ৩৫০ টাকা ২ জন। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় খেয়া পার হয়ে নিঝুম দ্বীপ ঘাট। এখান থেকে হোন্ডা যোগে নামার বাজার ভাড়া ২ জন ১০০ টাকা।

এছাডা যারা চট্রগ্রাম থেকে নিঝুম দ্বীপ আসতে চান চট্টগ্রাম অলংকার মোড় থেকে হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাটের উদ্দেশ্য বাধন এবং রেসালাহ বাস ছাডে রাত ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত এবং সকাল ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ টাকা। হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাট পৌঁছে ওখান থেকে নলচিরা ঘাটের উদ্দেশ্য সিট্রাক ছাড়ে, ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা। নলচিরা ঘাট থেকে হোন্ডা যোগে মোক্তারিয়া ঘাট খেয়া পার হয়ে নিঝুম দ্বীপ ঘাট। এখান থেকে হোন্ডা যোগে নামার বাজার।

নামার বাজার গিয়েই খোঁজ করতে হবে হোটেল। আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে অবকাশ, হোটেল সি প্যালেস, হোটেল শাহীন, মসজিদ বোডিং- এগুলোতে থাকতে পারেন। আর খাবার হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল আলতাফে অল্প টাকায় মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়- ইলিশ মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ভাজি, পোয়া মাছ, নিঝুম দ্বীপের হাঁস, মুরগির মাংস ইত্যাদি।

নিরিবিলি বেড়াতে এই বর্ষায় ঘুরে আসা হোক নিঝুম দ্বীপ।

নোয়াখালী জেলার সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার পাশেই নিঝুম দ্বীপের অবস্থান। বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চর মুরি এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। মোট ১৬,৩৫২.২৩ হেক্টর এলাকার এই দ্বীপ ১৯৫০ সালের দিকে জেগে ওঠে। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিল চর-ওসমান। কথিত আছে ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিল। পরবর্তীতে দ্বীপটি ‘নিঝুম দ্বীপ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুলাই ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়