ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে মেঘ, পাহাড়, ঝরনার সান্নিধ্যে

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২০, ২৯ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদের ছুটিতে মেঘ, পাহাড়, ঝরনার সান্নিধ্যে

ফেরদৌস জামান : গাছে ঢাকা সারি সারি পাহাড় দেখে মনে হবে পৃথিবীর সমস্ত সবুজ এসে লুটে পড়েছে এখানে। আর সেই পাহাড় সারির ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে তুলোর মতো মেঘ। মাথার ওপর নীল আকাশ। সেখানে কোথাও কোথাও ধুসর মেঘের আহ্লাদে জমে ওঠে বর্ষার আয়োজন। মেঘের পরম আশীর্বাদপ্রাপ্ত শুভ্র ঝরনাধারা সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে এসে মিশেছে পাথুরে নদীতে। পাথরে পাথরে আছাড় খেয়ে সেই ধারা ক্রমেই এগিয়েছে শো শো শব্দে এক অমোঘ মাদকতা ছড়িয়ে। এমনই এক মুগ্ধকর আবহে যদি আমাদের ঈদের ছুটি কাটে তাহলে মন্দ কি? বর্তমানে সিলেট ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা মানেই বিছানাকান্দি আর পান্তুমাই ঝরনা। এ সময়ের আলোচিত নামগুলোর অন্যতম সিলেটের এ দুটি স্থান। এই দুটি জায়গা এক দিনেই ভ্রমণ করা যায়।

 



পান্তুমাই ঝরনা : পাথরের নদী বিছানাকান্দি যাওয়ার আগে দেখে নেয়া যেতে পারে পান্তুমাই ঝরনা। এই ঝরনার অবস্থান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হলেও এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় আসলে বাংলাদেশ থেকে। দুঃখের বিষয় ভারতীয়দের এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসা ছাড়া উপায় নেই। ওপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় এ ঝরনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পাহাড়ি ঢল বেয়ে পাথরের মধ্য দিয়ে সজোরে প্রবাহিত হয়, যার কারণে সৃষ্টি হয় এক উদ্দাম নৃত্যের। জলের প্রবল প্রবাহ গর্জন করতে থাকে আর টানতে থাকে পর্যটক হৃদয়। একে ছুঁয়ে দেখার সাধ্য আমাদের নেই, তবে গড়িয়ে পড়া পানিতে গা ভিজিয়ে কিছুটা তৃপ্তির অনুভূতি নেয়া যেতে পারে। সবুজে ঘেরা পান্তুমাই গ্রামের চারপাশটা খুব চমৎকার প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা। যেন সৌন্দর্যের আধার। রয়েছে বড় একটি খেলার মাঠ। বলা হয়ে থাকে, পান্তুমাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটা। মেঘালয় পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে থাকা পান্তুমাই গ্রামের রূপ অনন্য এবং অসাধারণ। এ ঝরনার পানি পুরোটাই প্রবাহিত হয় বাংলাদেশে। এর থেকে গড়িয়ে যাওয়া পানিতেই তৈরি হয়েছে ছোট নদী। স্থানীয়রা বলে ছড়া। প্রকৃতি যে এত সুন্দর হতে পারে তা বুঝতে বহুদূর দেশে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের দেশেই রয়েছে তার অজস্র নিদর্শন।

বিছানাকান্দি : প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন পান্তুমাই ভ্রমণ শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের গন্তব্য হবে বিছানাকান্দি। অতি আবেগে তো বিছানাকান্দিকে প্রকৃতির রাজকন্যাও বলা হয়ে থাকে। বিছানাকান্দির দিকে নৌকা যতই এগুতে থাকে, চারপাশের সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ে। মুগ্ধতা এতটাই বেড়ে যায় যে, এই অনুভূতিগুলো পুরো ভ্রমণ আরো স্মরণীয় করে রাখবে। খানিক বাদেই দুই পাশে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পাহাড় যেন স্বাগত জানাবে আপনাকে। অবাক বিস্ময়ে বিছানাকান্দির রূপ দেখতে দেখতে নৌকা এগুতে থাকবে মূল স্পটের দিকে; গিয়েই জল উৎসবে মেতে ওঠার পালা। এখানে রয়েছে ছোট-বড় নানা আকৃতির অগণিত পাথর, দেখে যেন মনে হয় পুরো এলাকা পাথরের বিছানা। অগণিত পাথরের মাঝে হাঁটতে হবে সাবধানে। একটু অসাবধানতার ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পানির গভীরতা কম হলেও পাথরের মাঝে দিয়ে বয়ে যাওয়া লিকলিকে জলধারা ভ্রমণকে করে তোলে আরো রোমাঞ্চিত। জলের বুকে প্রতিচ্ছবি হয়ে নেমে আসে ওপরে নীল আকাশ। ডানে-বাঁয়ে সামনে মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়। পাহাড়ে হেলান দিয়ে থাকে চঞ্চল মেঘ। মাঝে ঝরনার বর্ষণধারা। দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাথর আর পাহাড়। এ দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো বড়ই কঠিন!

 



যেভাবে যেতে হবে : দর্শনীয় এই দুটি জায়গা দেখতে হলে ঢাকাসহ বাংলাদেশের যে কোনো জেলা থেকে সর্বপ্রথম যেতে হবে সিলেট। সিলেট মহানগরের যে কোন প্রান্ত থেকে বিজার্ভ করা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যেতে হবে হাদার বাজার। তবে নগরীর আম্বরখানা থেকে জার্নি শুরু করা উত্তম। সেখানে বিমানবন্দর রোড ধরে যেতে হবে বিছানাকান্দি আর পান্তুমাই। সিএনজি হাদার বাজার পর্যন্ত রিজার্ভ করে গেলে ভালো হয়। এক সিএনজিতে পাঁচজন যাওয়া যায়। সুতরাং ৪০০-৫০০ ভাড়া পরবে। লোকাল গেলে ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। হাদার বাজার থেকে নৌকাযোগে বিছানাকান্দি ও পান্তুমাই একসঙ্গে ঘুরতে ভাড়া গুনতে হবে ১৫০০-২০০০ টাকা। দুটি স্পটে একসঙ্গে যাওয়াই ভালো। নৌকা ভাড়া ঠিক করার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে, তা না হলে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসতে পারে। সারিঘাট হয়ে সিলেট-জাফলং সড়ক ধরেও হাদার বাজার যাওয়া যেতে পারে। আর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে ৫৫-৬০ কি.মি. পথ। ভোলাগঞ্জ সড়ক ধরে সালুটিকার বাজারের ডান দিক দিয়ে গোয়াইনঘাট লিঙ্ক রোড হেয়ে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছা সম্ভব।

থাকা এবং খাওয়া : স্থানীয়ভাবে থাকা-খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং সিলেটে থেকেই সময় করে যেতে হবে। সিলেটে বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল রয়েছে। ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে মিলে যায় চাহিদা মতো থাকার ব্যবস্থা। হোটেল ফরচুন- ০৮২১-৭১৫৫৯০; হোটেল ডালাস- ০৮২১-৭২০৯৪৫; হোটেল পলাশ (আম্বরখানার নিকটে)- ০৮২১-৭১৮৩০৯; ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন- ০৮২১-১৮২৬৩; হোটেল গার্ডেন ইন- ০৮২১-৮১৪৫০৭; হোটেল উর্মি- ০৮২১-৭১৪৫৬৩। এছাড়াও তালতলায় রয়েছে গুলশান সেন্টার- ০৮২১-৭১০০১৮ এবং জিন্দাবাজারে হোটেল মুনলাইট- ০৮২১-৭১৪৮৫০ ইত্যাদি। আরও রয়েছে নলজুড়ি উপজেলা ডকাবাংলো। পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এখানেও থাকা যেতে পারে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রতি রুম ৫০০ এবং সাধারণের জন্য ১৫০০ টাকা। খাওয়ার জন্য মহানগরে হোটেল সাতভাই ও পানসিসহ রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট।

 



বিশেষ দ্রষ্টব্য : বিছানাকান্দিতে নেমে পিচ্ছিল পাথরে হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে। পানির গভীরতা জানতে অন্যের সহযোগিতা নেয়া উচিৎ। যাওয়ার সময় সিলেট থেকে খাবার নিয়ে নেয়া যেতে পারে। নিকটে একটা বাজার থাকলেও দুপুরে খাওয়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে টুকটাক নাশতার জন্য যথেষ্ট।  আর কোনোমতে পেট ভরাতে চাইলে স্থানীয়দের রান্না করা রেস্টুরেন্টগুলোতে ঢুঁ মারতে মানা নেই। অপচনশীল দ্রব্য যেমন পানির বোতল, চিপস, চানাচুর বা বিস্কুটের মোড়ক ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ আগস্ট ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়