ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাগা দ্বীপে স্বর্গীয় সুখ

শিল্পী রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাগা দ্বীপে স্বর্গীয় সুখ

শিল্পী রহমান : মাগা শব্দের অর্থ ফুল। আর মাগা একটি দ্বীপের নাম। মালদ্বীপের একটি দ্বীপের নাম মাগা। যেই দ্বীপটিতে আমরা ছিলাম তার নাম ইলাইডু। এর আরেক নাম হল ছায়া রিফ রিসোর্ট।

আমাদের দ্বীপ থেকে সবচেয়ে কাছের দ্বীপটিই হচ্ছে মাগা। দূর থেকে ঘন নীল পানির পরেই হালকা নীল যেটার মধ্যে সবুজের একটু ছোঁয়া থাকাতে সি গ্রিন বলেই পরিচিত। তার ঠিক পরপরই ধবধবে সাদা একটা লেয়ার তারপরই সবুজ।

সকাল দশটার মধ্যে নাস্তা খেয়েই হুড়মুড় করে নৌকায় উঠে গেলাম আমরা সাতজন। মাঝিদের সঙ্গে গতকালই পরিচয় হয়েছে, ওরাও বাংলাদেশি। পুরো মালদ্বীপে ৩০০ হাজার লোকসংখ্যার মধ্যে ৭০ হাজারই হলো বাংলাদেশি ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ছোট ছোট দ্বীপে। আর এরা সবাই এখানে কাজ করে অনেক সুখী কারণ এখানকার সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি, খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু।  সে কথা আরেকদিন বলবো। আগে বলি মাগা দ্বীপের গল্প। নৌকায় ১০ মিনিটের মাথাতেই পৌঁছে গেলাম মাগা দ্বিপে।

এই দ্বীপে নেমেই ওখানকার গাইডের সাথে পরিচয় হলো। ওর নাম হোসেন। বাংলাদেশ থেকে ৭ বছর আগে এসেছে।  ৩ বছর স্টোর কিপার হিসেবে কাজ করার পর ওকে এই দ্বীপের দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঢুকতেই দেখা গেল বিরাট দু’টা তিমি মাছের কঙ্কাল। তার মধ্যে একটা কিলার তিমি। এই কিলার তিমিটি এক শার্কের সাথে মারামারিতে গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। তারপর তার দেহ ভাসতে ভাসতে মাগা দ্বীপের তীরে এসে পরে। হোসেন ২ মাস বসে এই তিমির কঙ্কাল পুনরায় সাজিয়েছে একটা প্লাটফর্মের ওপরে।

 



এই দ্বীপে হোসেন বেলী ফুলের গাছও লাগিয়েছেন। একদিন এক কাছিম গর্ত খুঁড়ে অনেক ডিম পেড়েছিল ও সেটার ভিডিও করে রেখেছে। সেই কাছিমের যখন বাচ্চা হলো হোসেন সেগুলোকে বসবাসের জন্যে একটা জায়গায় ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। আমরা তাদেরকেও দেখেছি, হাতে নিয়েছি।

পুরো দ্বীপে ও একাই ছিল অনেক বছর। কারণ দ্বীপের উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল অনেকদিন। কয়েক মাস হলো আরো  কিছু বাংলাদেশি এসেছে এখানে। কারণ এর উন্নয়ন কাজ আবার শুরু হবে নতুন সরকার এসেছে বলে। কিন্তু আমি খুশী এই উন্নয়নের আগেই এটা দেখার সৌভাগ্য হলো আমার।

আমাদেরকে পেয়ে সে মহাখুশি। বলল, গত ৭ বছরে আমরাই নাকি প্রথম বাংলাদেশি যারা এই দ্বীপে গিয়েছি।  দ্বীপটা এখনো পুরোপুরি বাসযোগ্য হয়নি আর সেটাই ওর আসল সৌন্দর্য।

ওখানে নামার পর থেকেই মনে হচ্ছিল এখান থেকে আর ফিরে যাবো না। এত ঝকঝকে স্বচ্ছ পানি, যা কিছু পানির নিচে চলছে বা হচ্ছে সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওপর থেকে।  হোসেন আমাদের সব ঘুরিয়ে দেখাল, খুব ছোট একটা দ্বীপ কিন্তু অসাধারণ রূপে রূপবতী। একটা স্বর্গীয় সুখে হারিয়ে গেলাম আমরা।

পুরো দ্বীপটিই ফুলের মতো কোরালে ভরপুর, তাই এই দ্বিপের নাম হয়েছে মাগা। ইলাইডু দ্বীপ থেকেই স্নরকেলিং এর সব জিনিষপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। সবাই নেমে পড়লাম পানিতে। হোসেন আমাদের গাইড। সত্যি বলতে গেলে হোসেন আসলে আমারই ব্যক্তিগত গাইড হয়ে গেল। ৩০০ মিটারের বেশি দূরে যেতে হয়নি কাউকে কিন্তু ও আমাকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছিল। কী এক অপরূপ পাতালপুরিতে নেমে গিয়েছিলাম আমরা। কোরাল এবং হরেক রকমের মাছের রাজত্ব। বড় ছোট, লাল নীল, কোরালের চারপাশে হাজার হাজার মাছের সমারোহ। ভেসে চললাম এক ঘণ্টারও বেশি সময়। বুঝতেই পারিনি কখন সময় পেরিয়ে গেছে। সবাই মিলে সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্যে। এমন সৌন্দর্য ছেড়ে আসতে মন চায় কার? কিন্তু ফিরতে তো হবেই।

 



আমাদেরকে ফেরত নেবার জন্যে নৌকা এসে অপেক্ষা করছে। তীরে এসে বেশকিছু ছবি তুলে মাত্র দাঁড়িয়েছি দেখি হোসেন আমাদের জন্যে গাছ থেকে ডাব পেড়ে, কেটে সবাইকে খেতে দিচ্ছে। তখন হোসেনকে যে কি ভালো লাগল। শুধু যে ডাব খাওয়াচ্ছিল বলে এতো ভালো লাগলো তা কিন্তু নয়। তার আতিথিয়েতায় সত্যি মুগ্ধ হলাম। হোসেন আবারও বাংলাদেশি হিসেবে তার স্বাক্ষর রেখে দিল  আমাদের হৃদয়ে।

আরেকজনকে বলল নারকেল কেটে আনতে। আমরা হালুম হুলুম করে খেলাম সবকিছু। আমি দুটা ডাবে মুখ বসিয়ে তার অমৃত সুধা পান করলাম। চিবুক বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছিল, সবটুকুই সুন্দর। 

চলে আসতে হলো এই সুখ ছেড়ে সবাইকে বিদায় দিয়ে। হোসেন বিদায় দিতে এলো আমাদের নৌকা পর্যন্ত। বালুর ওপরে আমাদের নাম্বার লিখে রেখেছে ও। কেন? তা জানি না। শুধু বলবো মাত্র দুই ঘণ্টার জন্যে একটা স্বর্গীয় সুখে ডুবে ছিলাম আমরা। পানির ওপরে এবং নীচে। এই অল্প সময়েই একটা হৃদ্যতা হয়ে গিয়েছিল সবার সাথে। 

কতগুলো সুখ আছে অতৃপ্তিই থেকে যায় আর সেই সুখগুলো কোনোদিন তৃপ্ত হোক তা আমরা চাই না। মাগা ছিল এমন একটা সুখ। আবার আসবো মন বলছে বারবার। কিন্তু আমি এ সুখের শেষ চাই না। এই তৃষ্ণাটুকু থাক।

আরো পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়