ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

থাইল্যান্ড: দেখার আছে অনেক কিছু

মহিউল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১০ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
থাইল্যান্ড: দেখার আছে অনেক কিছু

জেমস বন্ড দ্বীপ

মহিউল ইসলাম: ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের তথ্য সবসময় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন তাদের প্রায় সবাই নিজের দেশের পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে চান। এশিয়া মহাদেশের পর্যটকদের জন্য শুধু নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধের সময় ছাড়া কখনও কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। থাইল্যান্ড মূলত সাগর তীরবর্তী একটি দেশ। তবে দেশটির মধ্যভাগে সমভূমি, পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে পাহাড় ও মালভূমি। পশ্চিমের পর্বতশ্রেণী দক্ষিণ দিকে মালয় উপদ্বীপে প্রসারিত হয়েছে। থাইল্যান্ডজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

 


থাইল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নামকরা পাতায়া সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের সাদা নরম বালু। সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। তাতে চরে বেড়ানো রং-বেরঙের ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড় অন্যরকম অনুভূতির জোগান দেয়। থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের প্রতিটি পরতে এমন সৌন্দর্য রয়েছে। পাতায়া সী বিচ বড় না হলেও সুন্দর করে সাজানো। এখানে দুটো বিচ রয়েছে। পাতায়া বিচ আর চমথিয়ান বিচ। এই দুটি সী বিচে পর্যটকদের আর্কষিত করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে থাই সরকার। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার। সমগ্র সৈকতের সবকিছুই অত্যন্ত গোছানো। সৈকতের ধারে অসংখ্য রেস্তোরাঁ-বার, আর রেস্টুরেন্টগুলি খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। এছাড়া বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে এক প্ল্যাটফর্মে। এখান থেকে প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে দিনের পাতায়া আর রাতের পাতায়ার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ।

 


এছাড়া পাতায়ার নুচ বোটানিক্যাল গার্ডেনও ভ্রমণের জন্য অন্যরকম সুন্দর একটি স্থান। পাতায়ায় রয়েছে মনস্টার অ্যাকুয়ারিয়াম। যেটি একটি পারিবারিক দিন কাটানোর জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান। এটি ছয়টি অঞ্চলে বিভক্ত। যেগুলোতে আপনার এবং পরিবারের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিস্মিত হওয়ার উপাদান রয়েছে। আপনি এখানে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী যেমন হাঙ্গর ও গভীর সমুদ্রের অন্যান্য মাছের চলাচল দেখার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এমনকি আপনি চাইলে তাদের খাওয়াতেও পারবেন এবং তাদের মধ্যে বিচরণ করতে পারবেন কোনো রকম শরীর না ভিজিয়েই। অ্যাকুয়ারিয়ামের গ্লাসের টানেলের ভেতর আপনি কোনো ঝামেলা বা ভয় ছাড়াই নিখুঁতভাবে  আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। পাঁচ একর জায়গার উপর অবস্থিত পাতায়ার মনস্টার অ্যাকুয়ারিয়াম থাইল্যান্ডের সবচেয়ে এক্সক্লুসিভ স্থান যেখানে বিশালভাবে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের প্রাণীদের ভিন্ন জীবন।

 


পাতায়ার পর থাইল্যান্ডের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল ফুকেট। ফুকেটের সাগর পাড়ের নীল জল, বন ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপসমূহ, সাদা বালুময় সমুদ্র সৈকত, আইল্যান্ড ও নীল সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ তার বেলাভূমি সৌন্দর্যের এক অনন্য বিস্ময়। ব্যাংকক থেকে ফুকেটের দূরত্ব প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার। এটি থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ। সৈকতের জন্যও ফুকেট বিখ্যাত। তবে সৈকতের পাশাপাশি ফুকেটের আরেকটি সৌন্দর্য হলো আন্দামান সাগরের ভেতর চুনাপাথরের পাহাড়। তবে এর জন্য সৈকত থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে ‘ফাং-বে’তে। বৈচিত্রময় এসব চুনাপাথরের পাহাড়ে অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে। এখানকার একটি দ্বীপের নাম যে কারণে ‘জেমস বন্ড আইল্যান্ড’। ফুকেট গেলে সেই স্থানটিও ঘুরে আসা যায়।

 


এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আসল থাই জাতিকে খুঁজে পেতে হলে যেতে হবে ব্যাংকক। চাও ফারায়া নদীর পশ্চিম তীরে থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত ব্যাংকক। ব্যাংককের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ চাও ফারায়া নদীর পশ্চিমতীরে না ফ্রা লারন রোডের উপর প্রায় এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন রাজপ্রাসাদ। এই রাজপ্রাসাদ থাই জাতির পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। এছাড়া প্রাসাদচত্বরে অবস্থিত পান্নার বুদ্ধ মন্দির প্রকাশ করে থাইদের পুরনো ঐতিহ্য। মন্দিরের বাইরের ও ভিতরের দেয়ালে নানা ভাস্কর্য, ফ্রেসকো ও সূক্ষ্ম কারুকাজ রয়েছে। বুদ্ধের মূর্তিটি একটিমাত্র জেড পাথর কেটে তৈরি। প্রাসাদ চত্বরে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির এবং কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাটের একটি মিনিয়েচার মডেল আছে।  ব্যাংকক মন্দির, বুদ্ধের মূর্তি, রাজপ্রাসাদ, মিউজিয়াম, পার্ক সবকিছু মিলিয়ে ব্যাংকক ট্যুরিস্টদের জন্য একটি আদর্শ শহর।

 


থাইল্যান্ডের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়  ইয়াওয়ারট-এ। ইয়াওয়ারট হলো এমন এক জায়গা যেখানে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক লোকের বাস। এছাড়া এই জেলাটি ২০০ বছর বয়সী একটি চীনা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন খাবারের জন্য বিখ্যাত। এই খাবারের স্বাদ নেয়ার জন্য শুধু বিদেশি পর্যটকগণই নন, আসেন প্রচুর পরিমাণে থাই নাগরিকরাও। এখানকার খাবারগুলো শুধু অত্যাধুনিক স্বাদেরই নয়, এর সাথে যুক্ত রয়েছে চীনাদের বহু বছরের সংস্কৃতি। এছাড়া এই খাদ্য এই রাস্তাটিকে অনন্য করে তোলার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি দায়ী। এখানের শত শত বিক্রেতারা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে জল খাবার পরিবেশন করে। এখানে কিছু কিছু খাবার পাওয়া যায় যেগুলোর স্বাদ কখনোই ভোলার নয়। এখানকার প্রতিটি খাবারই দীর্ঘ চীনা এবং থাই সংস্কৃতি বহন করে।

 


থাইল্যান্ডের অন্যরকম জঙ্গল দেখতে গেলে যেতে হবে চিয়াং মাইয়ে। থাইল্যান্ডের মাতাল সবুজে ভরা জঙ্গল চিয়াং মাইয়ে জিপ ভ্রমণ করে এই আনন্দের সবটুকু পাওয়া সম্ভব। জিপে চড়ে পাহাড়ি উঁচু রাস্তায় উঠে আপনি দূরের সবুজ ল্যান্ডস্কেপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, আবার ঘন বনের মধ্য দিয়ে জিপ যখন চলবে তখন পাবেন আলাদা শিহরণ। এই ভ্রমণে জঙ্গল কোস্টারও অনেক উপভোগের। ব্যাংকক থেকে ৭০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত চিয়াং মাই মূলত হিমালয়ের পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। চিয়াং মাইয়ের সুন্দর জলপ্রপাত, গুহা, গিরিসঙ্কট, ১৩০০ শতকের মন্দির, সুন্দর দৃশ্য, পীচ ও স্ট্রবেরী বাগান এবং এখানকার শীতল আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে এক অনন্য পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে।

 


এসব ভ্রমণের পর থাইল্যান্ডের ভাসমান বাজারে একদিন না ঘুরে আসলে ষোলকলা পূর্ণ হবে না। পর্যটকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় থাইল্যান্ডের  ভাসমান বাজার৷ ব্যাংকক এবং অন্যান্য সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের কাছাকাছি এরকম ভাসমান বাজার রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে দামনোয়েন সাদুয়াক ভাসমান বাজার সবথেকে বিখ্যাত। এই বাজারের দূরত্ব ব্যাংকক থেকে ৯০ কি.মি.। সদ্য তৈরি খাবার থেকে হস্তশিল্প– সব কিছুরই অঢেল আয়োজন রয়েছে এখানে৷ শুধু শাক-সবজি, ফলমূল, বা খাবার নয়, ঘর সাজানোর জন্য নানা রকমের ছবি, ফুলদানি, মূর্তি, নকল ফুলও পাওয়া যায় ভাসমান বাজারে৷ তবে শুধু পানিতেই নয়, তীরেও আছে স্যুভেনির, পেইন্টিং, টি-শার্ট, ঘড়ি, গয়না, বাঁশি, কাঠের খেলনা ও নানা ধরনের পোশাকের দোকান।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ নভেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়