ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শীতল জলের হাম-হাম

গাজী মুনছুর আজিজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শীতল জলের হাম-হাম

গাজী মুনছুর আজিজ : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি রেস্টুরেন্টে নাশতা সেরে যাত্রা শুরু করি হাম-হাম ঝরনার উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাটা তখন সকাল ছয়টা পেরিয়ে গেছে। সঙ্গী অনুজ বন্ধু সাজেদ, গুলজার, মাসুম, মাহবুব ও জামিল। এর মধ্যে সাজেদ আমার পরিচিত। বাকিরা সাজেদের বন্ধু। আমি গিয়েছি ঢাকা থেকে। বাকিরা যুক্ত হলো বড়লেখা থেকে। যে প্রাইভেট কারে যাচ্ছি সেটি গুলজারের। চালকও সে।

প্রথমে আসি কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে। এখান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে হাম-হামের অবস্থান। কমলগঞ্জ থেকে আদমপুর বাজার হয়ে আমরা এগিয়ে যাই হাম-হামের দিকে। দুইপাশে সারি সারি চা-বাগান আর আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে আসি চাম্পারায় চা-বাগানে। এ পর্যন্ত পথটুকু ভালোই ছিল। গাড়িও চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু এখান থেকে শুরু হয়েছে মাটির পথ। গাড়ি চলার উপযুক্ত নয়। গুলজার ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছিল। এভাবে কুরমা বন বিটের কুরমা চা-বাগান পাড়ি দিয়ে আসি কলাবন গ্রামে। এই বন বিট রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি। কলাবন গ্রামটি আদিবাসী-চা শ্রমিকদের।

কলাবন আসার সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসী কয়েকজন তরুণ-যুবক আমাদের ঘিরে ধরল। মূলত তারা হাম-হামের গাইড। আমরা বিকাশ নামের এক যুবককে গাইড হিসেবে সঙ্গে নিলাম। সঙ্গে আরও ছিল টমি নামের একটি কুকুর। কুকুরটি বিকাশের পরিচিত। স্থানীয় কিশোরদের কাছ থেকে আমরা একটা করে বাঁশের চলা কিনে নিলাম হাতের লাঠি হিসেবে। তারপর সবাই হাফপ্যান্ট, টি-শার্ট পরে রওনা হলাম।

সঙ্গে পানির বোতল ও স্যালাইন নিয়ে নিয়েছি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাঁটছি নির্জন পাহাড়ি বনের ভেতর দিয়ে। গাইড জানাল পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৬০০ ফুট। চারপাশেই ঘন গাছগাছালি। তারই মাঝে হাঁটছি। কখনও নিচু থেকে উপরে উঠছি, কখনও উপর থেকে নিচে নামছি। আবার কখনও বা পাড়ি দিচ্ছি ছোট্ট ছড়া। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হই, বিশ্রাম নিই, তারপর আবার হাঁটা। অবশ্য উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে দলের সদস্যদের কষ্ট হচ্ছিল। কেউ কেউ তো কষ্টের ভয়ে ফিরে যেতেও চাইছে। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার পথ হেঁটে অবশেষে পৌঁছলাম ঝরনার ছড়ায়।  ছড়ায় হাম-হাম ঝরনারই পানি প্রবাহিত হয়ে চলেছে। ছড়ায় এসে সাজেদ আর মাসুম শুয়ে পড়ল ক্লান্তিতে। আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। স্বস্তির জন্য শরীরটা একটু ভিজিয়ে নিলাম ছড়ার পানিতে। এখানে একটু বিশ্রাম শেষে ছড়া ধরে আবার রওনা হলাম ঝরনার উদ্দেশ্যে। কিছুটা পথ আসতেই দেখতে পেলাম হাম-হাম। সত্যিই দারুণ বুনো পাহাড়ের এই ঝরনা।



ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ঘেঁষা এই ঝরনার উচ্চতা হবে ১৬০ থেকে ১৭০ফুট। ২০১০ সালের দিকে এটি আবিষ্কার করেন বাংলাদেশের একদল পর্যটক। সবাই ঝরনার শীতল পানিতে গোসল করলাম। ভুলে গেলাম কষ্ট করে আসা পথের সব ক্লান্তি। ঝরনার পাদদেশে একটি চায়ের দোকান হয়েছে এখানে আসা দর্শনার্থীদের উপলক্ষ্যে। সবাই দোকানে চা-বিস্কুট খেলাম। ঝরনার নিচের পরিবেশটা সত্যিই মায়াময়। মায়ায় পড়ে বেশ কিছুক্ষণ শুনি ঝরনার পানি পড়ার শব্দ। ফেরার পথে গাইড বলল অন্য রাস্তা দিয়ে গেলে পাহাড় পাড়ি দিতে হবে না। তার কথায় অন্যপথ ধরলাম। এ পথে পাহাড় পাড়ি দিতে হলো কম, তবে পথ কম নয়। আর এ পথে রোমাঞ্চটাও ছিল একটু বেশি। কারণ পথটি ঝরনারই ছড়াপথ। মাঝখানে ছড়া আর দুইপাশে পাহাড়। নির্জন-ছমছম ভাব। বেশ উপভোগ্য। তবে পথের পানির ছড়াগুলোয় জোঁকের উপদ্রব অনেক। দলের সবাইকে জোঁক ধরেছে, আমি ছাড়া।

কলাবন হয়ে আদমপুর আসতে আসতে বেলা প্রায় শেষ। এখানকার একটি রেস্টুরেন্টে  দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর ধরলাম কুলাউড়ার পথ। পথে পড়ল শমসেরনগর বধ্যভূমি ও সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিস্তম্ভে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাই শহীদদের প্রতি। তারপর আবার ছুট। থামলায় বড়লেখায় সাজিদের গ্রামের আজিমগঞ্জ বাজারে।

ছবি : লেখক




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ অক্টোবর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়