ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাংলার ছোট ছোট দ্বীপে

গাজী মুনছুর আজিজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ৩ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলার ছোট ছোট দ্বীপে

গাজী মুনছুর আজিজ: দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক দ্বীপ আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এসব দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারেন চলতি শীত মৌসুমে।

হরিণের দেশ নিঝুম দ্বীপ : নোয়াখালীর হাতিয়ার সাবেক জাহাজমারা ইউনিয়ন এবং বর্তমানের ১১নং ইউনিয়ন নিয়ে নিঝুম দ্বীপ। দ্বীপের চারপাশেই মেঘনা নদী। পাশেই বঙ্গোপসাগর। দ্বীপের আয়তন ১৬ হাজার ৩৫২ হেক্টর। বিশাল ম্যানগ্রোভ বন নিয়ে গড়ে ওঠা নিঝুম দ্বীপের প্রধান গাছ কেওড়া, গেওয়া ও বাইন। নিঝুম দ্বীপ বনবিট কর্মকর্তা জানান, ১৯৭৭ সালে প্রথম এ বনে ২০টি হরিণ, ৪টি বানর এবং ১টি অজগর সাপ ছাড়া হয়। এর মধ্যে ২টি হরিণ অবমুক্ত করার কিছু দিনের মাথায় মারা যায়। বাকি ১৮টি হরিণ থেকে বেড়ে এখন বনে প্রায় ২০ হাজার হরিণ আছে। বানরও আছে বেশ কিছু। বনের গাছে গাছে অনেক মৌচাকও দেখা যায়। আরও আছে বিভিন্ন প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখির বসবাস। শীতের সময় এ দ্বীপের চারপাশে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। যা দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ।

২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন অধিদফতর নিঝুম দ্বীপকে নতুনভাবে বনায়নও করে। নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র সংরক্ষিত বন, যেখানে কোনো মাংসাশী প্রাণী নেই। গ্রীষ্মকালীন উদ্ভিদে পরিপূর্ণ দ্বীপটি দেখতে অনেকটা সুন্দরবনের মতো। বনের ভেতর দিয়ে ছোট ছোট নদী ও খাল বয়ে গেছে। এর আশপাশে বল্লারচর, কামলারচর, ওসমানচর, মুড়িচর, দমারচরসহ আরও কয়েকটি চর রয়েছে। এর কিছু চরে মানুষের বসবাস রয়েছে। আবার কিছু চরে এখনও মানুষের বসতি নেই।
 


২০০৭ সালে সরকারি জরিপ অনুযায়ী নিঝুপ দ্বীপে ৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির পাখি, ১৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২১ প্রজাতির গাছ ও ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম রয়েছে। এছাড়া গবেষকদের মতে, নিঝুম দ্বীপে খনিজসম্পদও রয়েছে। এখানকার সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দুটোই দারুণ। ১৯৫৭ সালের দিকে নিঝুম দ্বীপের যাত্রা শুরু। তখন ওসমান আলী রাখাল নামে একজন এই দ্বীপে মহিষ চরাতেন। অনেকের মতে, তার হাত ধরেই এখানে বসবাস করতে আসেন হাবিবুল্লাহ কোম্পানিসহ তার পরিবার। তখন মাত্র ৭-৮টি পরিবার নিয়েই এ দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু হয়। সত্তরের গোর্কিতে এ দ্বীপের অনেক মানুষ মারা যায়। তারপরও যারা বেঁচে যান তারা আবার গড়ে তোলেন বসতবাড়ি। তখনও এ দ্বীপের নাম রাখা হয়নি। ১৯৭৫ সালে দ্বীপের প্রথম নাম দেয়া হয় ‘চর ওসমান’। তারপর তৎকালীন হাতিয়ার সংসদ সদস্য এবং সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আমিরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে দ্বীপের নাম রাখেন ‘নিঝুম দ্বীপ’। ১৯৮৮-৮৯ সালে দ্বীপের জন্য প্রথম সরকারি কাগজপত্র তৈরি হয়। তখন সরকার এখানে ৯টি গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলে। বর্তমানে এখানে ৪৯৮টি পরিবারের জন্য বসতভিটা, কৃষি জমি, পুকুরসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের ব্যবস্থা আছে। ১৯৯৯ সালে ঘূর্ণিঝড়ে এ দ্বীপের গৃহপালিত পশু ও আবাদি জমিসহ অনেক ক্ষতি হয়। ২০০৮ সালে নিঝুম দ্বীপকে ইউনিয়ন ঘোষণা হয়।

সদরঘাট থেকে বিভিন্ন লঞ্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় ছেড়ে যায় হাতিয়ার তমরুদ্দিনের উদ্দেশে। লঞ্চ থেকে নেমে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ থেকে বাসে নোয়াখালীর সোনাপুর। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা, লোকাল বাস, সি ট্রাকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছানো যাবে। নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য রয়েছে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের নিঝুম রিসোর্ট। থাকার পাশাপাশি এখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

সোনাদিয়া দ্বীপ : সোনাদিয়া দ্বীপ কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। অল্পসংখ্যক মানুষের বাস এখানে। তবে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ নানা প্রজাতির পরিযায়ী সৈকত পাখি। এর মধ্যে অন্যতম চামচঠুঁটো বাটান; যা পৃথিবীতে মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। কক্সবাজার থেকে মহেষখালী হয়ে প্রথমে অটোরিকশায় তারপর ট্রলারে বা হেঁটে যাওয়া যাবে সোনাদিয়া। তবে এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই।

দমারচর : দমারচর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণে জাহাজমারা-মোক্তারিয়া চ্যানেল নামক মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা একটি চর। অনেক প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি দেখা গেলেও এখানকার অন্যতম বাসিন্দা দেশি-গাঙচষা। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে প্রতি বছর এখানে সবচেয়ে বেশি দেশি গাঙচষা দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটাই তাদের বৃহৎ বিচরণভূমি।

এই চরে মানুষের বসতি নেই। হাতিয়ার জাহাজমারা থেকে ট্রলারে এখানে আসা যাবে। আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে জাহাজমারা বাজারে।
 


চর শাহজালাল : ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এ চরের বয়স প্রায় ২০ বছর। এখানেও মানুষের বসতি নেই। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এই চরে একসঙ্গে প্রায় ৫০ প্রজাতিরও বেশি হাজার হাজার পাখি দেখা যায়। উপকূলের অন্য কাদাচরে একসঙ্গে এতো বেশি পাখি খুব কমই দেখা যায়। এর মধ্যে অনেক দুর্লভ, বিপন্ন পাখিও রয়েছে।

ঢাকা থেকে লঞ্চে ভোলায়, তারপর সেখান থেকে ট্রলারে যাওয়া যাবে এ চরে। এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য তাঁবু ও খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে।

মনপুরা ও চর কুকরি-মুকরি : মনপুরা দ্বীপের অবস্থান ভোলায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দ্বীপটিও মেঘনার মোহনায় ও বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা। এখানকার বনাঞ্চলেও হরিণসহ নানা প্রজাতির গাছগছালি, আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি রয়েছে। এ দ্বীপের পাশেই রয়েছে চর কুকরি-মুকরি দ্বীপ। এ দ্বীপেও আছে হরিণ,পাখিসহ নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র।

ছবি : গাজী মুনছুর আজিজ

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জানুয়ারি ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়