ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কেরাই নৌকায় কাঠালিয়া

গাজী মুনছুর আজিজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ৯ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেরাই নৌকায় কাঠালিয়া

গাজী মুনছুর আজিজ: কাঠালিয়া নদীর উৎপত্তি গোমতি ও মেঘনা। দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই কাঠালিয়া আবার মিসেছে তিতাস উপজেলার গোমিতর সঙ্গে। চেঙ্গাকান্দি ঘাটের দুইপাশে ছোটবড় অনেক ছইঅলা নৌকা। কুমিল্লার দাউদকান্দির কাঠালিয়া নদীর ঘাট থেকে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে মানুষ যাতায়াত করেন এই নৌকার মাধ্যমে। এমন একটি ছইঅলা নৌকায় কবিবন্ধু রাসেল মাহমুদ আর আমি উঠি শরতের এক দুপুরে। আগের রাতে রাসেল জানালেন- একদিন নৌকায় ঘুরতে চান। তার সে ইচ্ছে পূরণ করতেই এ সফর। অবশ্য এর আগেও আমি এ নদীতে ভ্রমণ করেছি।

নৌকায় ওঠার আগে বাজারের জসিমের চায়ের দোকানে গরুর দুধের চা পান করে নিই। বেশ স্বাদের চা। তারপর হেঁটে আসি ঘাটে। আমাদের জন্য নৌকা ঠিক করে দেন লিটন। মাঝি মো. লোকমান; লিটনের স্কুলবন্ধু। আর লিটন আমার বন্ধু। আমাদের নিয়ে ইঞ্জিন চালিত ছইঅলা নৌকা চলতে শুরু করে। লোকমান মাঝি জানান, স্থানীয় ভাষায় এ নৌকা ‘কেরাই’ নামে পরিচিত। লম্বাটে ছইঅলা এই নৌকার গায়ে সামনে এবং পেছনে টিন কেটে বানানো মাছ, পাখি, হাতি, ময়ূর, ফুলসহ ইত্যাদির অবয়ব বসানো। এখানকার ছোটবড় প্রায় সব নৌকতেই এ নকশা দেওয়া।



কাঠালিয়া নদী হয়ে আমরা চলছি। নদীর উৎপত্তি গোমতি ও মেঘনা। শরতের নীলাকাশ বলে নদীর পানিও মাঝেমধ্যে নীল মনে হয়। অন্যদিকে দুপুর হলেও সূর্যের তেজ তেমন নেই। তাই ছইয়ের বাইরেই আমরা বসি। দেখি আমাদের নৌকার মতো আরও অনেক নৌকা আসা-যাওয়া করছে। প্রায় সব নৌকা মানুষ ও মালামাল বোঝাই। মূলত দাউদকান্দি বাজার থেকে আশপাশের গ্রামের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরছেন বা কেনাকাটা করার জন্য বাজারে আসছেন। নদীর অনেক স্থানেই বাঁশ দিয়ে মাছের ঘের দেওয়া হয়েছে। মূলত এ ঘের মাছ ধরার ফাঁদ। খাবার দিয়ে এ ঘেরে মাছ আনা হয়। তারপর ঘেরের চারপাশে জাল দিয়ে ধরা হয় মাছ। শীত মৌসুমেই চলে এ মাছ ধরা। ঘের ছাড়াও ছোট ছোট নৌকায় করে কেউ জাল দিয়ে আবার কেউ বরশি দিয়ে মাছ ধরছেন।

ঘণ্টাখানেকের মাথায় নৌকা ভিড়ে মেঘনা থানার চর কাঠালিয়া গ্রামের ঘাটে। ঘাটে নেমে চা পান করে অল্প সময় বসে আবার উঠি নৌকায়। গন্তব্য আরেক গ্রামের ঘাট। এবার প্রায় আধাঘণ্টার মাথায় আসি আলীপুর বাজার ঘাট। এটিও মেঘনা থানার এলাকা। এ ঘাটেও অনেক কেরাই নৌকা বাঁধা। বোঝা গেল এ গ্রামের মানুষও দাউদকান্দি বাজারে তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে কেরাই নৌকায় যাতায়াত করেন।



ঘাটে নেমে আশপাশটা ঘুরি। বসি ঘাটের চায়ের দোকানে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চা পান করি। তারপর আবার উঠি নৌকায়। কিছুক্ষণ চলার পর মাঝি জানান, এখন আমরা কাঠালিয়া ছেড়ে গোমতী নদী দিয়ে চলছি। প্রায় আধা ঘণ্টায় আসি ভুইয়ার বাজার। এ এলাকা তিতাস থানার। তবে এ বাজারে আমরা না নেমেই ফিরতে শুরু করি।

ফেরার পথে নৌকা আবার ভিড়ে আলীপুর বাজার ঘাটে। আমি সঙ্গে নেয়া গামছা পড়ে নেমে পড়ি নদীতে। তবে রাসেল নামেনি। সে নৌকায় থেকেই গোসলের স্বাদ নিয়েছেন। ডুব দিয়ে ও সাঁতার কেটে উঠি নৌকায়। বেশ আরাম বোধ করি। সত্যিই শহরের ট্যাবের পানিতে গোসলের তৃপ্তি বা প্রশান্তি কমই মেলে। শহর ছেড়ে নৌকায় নদীর বাতাসে আমরা বেশ প্রফুল্ল। সে প্রফুল্লতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কাঠালিয়ার গোসল। নদীর দুইপাশে বাড়িঘর আছে। কিছু বাড়ি আছে নদীর পাড়ের বিলের মাঝে। কিছু বাড়ির ঘাটে মাছ ধরার নৌকা বাঁধা ও জাল শুকাতে দেওয়া। বোঝায়ায় এসব বাড়ির মানুষ মৎস্যজীবী। কথায় কথায় লোকমান মাঝি জানান, তিনি একসময় আনসার বাহিনীর হয়ে কুস্তি খেলেছেন। অংশ নিয়েছেন সাফ গেমসেও। বিদেশেও গিয়েছেন। সব ছেড়ে এখন নৌকা বাইছেন। হাসিমুখে বলেন, ‘ভালো আছি’।



বিকেলের আগে ফিরি চেঙ্গাকান্দি ঘাটে। বাজারের মুক্তিযোদ্ধা হোটেলে লিটনসহ দুপুরের খাবার খাই কয়েক পদের মাছ দিয়ে। এ মাছ কাঠালিয়া নদী থেকেই ধরা। তারপর লিটনকে বিদায় দিয়ে বাসে চেপে আসি পুটিয়া। এখানে আমাদের জন্য আগে থেকেই বসে আছেন অগ্রজ মতিন সৈকত ও বন্ধু এসএম মিজান। তারা দু’জনই পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। বসি মহিউদ্দিনের চায়ের দোকানে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের এ চায়ের দোকানে আড্ডা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সঙ্গে মহিউদ্দিনের তৈরি গরুর দুধের চা আর ঝালমুড়ি।

ছবি : লেখক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মার্চ ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়